Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নিয়োগে জটের জেরে ডিআই বদলি

যাঁরা যাবতীয় পরিকল্পনা তৈরি করেছেন এবং দফায় দফায় নির্দেশিকা জারি করেছেন, তাঁরা নিজেদের জায়গায় আছেন বহাল তবিয়তেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যত যা গোলমাল, তার দায়ভার চাপল স্কুল পরিদর্শকদের ঘাড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:১৫
Share: Save:

যাঁরা যাবতীয় পরিকল্পনা তৈরি করেছেন এবং দফায় দফায় নির্দেশিকা জারি করেছেন, তাঁরা নিজেদের জায়গায় আছেন বহাল তবিয়তেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যত যা গোলমাল, তার দায়ভার চাপল স্কুল পরিদর্শকদের ঘাড়ে। বদলি করে দেওয়া হল রাজ্যের ২০ জন জেলা স্কুল পরিদর্শককে। স্রেফ উপরতলার নির্দেশ পালনের জন্য তাঁদের এ ভাবে বলির পাঁঠা করা হল কেন, প্রশ্ন তুলছেন জেলা স্কুল পরিদর্শকদের অনেকেই।

নিছক প্রশ্ন তুলেই থেমে না-থেকে অভিযোগের তির পরিকল্পনা প্রণেতাদের দিকেই ঘুরিয়ে দিয়েছেন অনেক পরিদর্শক। তাঁদের বক্তব্য, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে যখন যে-ভাবে নির্দেশ এসেছে বা আসে, সেটা তাঁরা পালন করতে বাধ্য। করেছেনও। কিন্তু ভুল তো ছিল গোড়াতেই। অর্থাৎ পরিকল্পনায় ভুল থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অযথা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। সেই জটিলতার কথা যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর তার জেরেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এক দিকে যেমন বিস্তর মামলা হয়েছে, তেমনই অযথা সমস্যা হয়েছে নিয়োগের সময়েও।

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে স্কুল পরিদর্শকদের দায়িত্ব কতটা?

বিকাশ ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট)-র ফল প্রকাশের পরে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নথিপত্র যাচাইয়ের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় জেলা স্কুল পরিদর্শকদের উপরে। তাঁদের যাচাই করা নথির ভিত্তিতেই মেধা-তালিকা তৈরি করে পর্ষদ। তাই শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কোনও ভুলভ্রান্তি হলে ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা দায় এড়াতে পারেন না।

‘‘দায়টা কিন্তু আমাদের একার নয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়েই আমরা কাজটা করেছি। অথচ শাস্তির খাঁড়া আমাদের উপরেই নেমে এল,’’ বলছেন সদ্য বদলি হওয়া এক ডিআই। অনেক জেলা পরিদর্শকের প্রশ্ন, ‘‘পর্ষদকর্তারা কি নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে পারেন?’’

সরাসরি সব দায় ঝেড়ে ফেলেছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘নথি যাচাইয়ে যে-ভুল হয়েছে, সেখানে পর্ষদের কোনও ভূমিকা নেই। তাই দায় নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’

ভুলটা কী ধরনের এবং তার জেরে কী ধরনের সমস্যা হয়েছে?

স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরুর পরে অনেকে দাবি করেন, তাঁরা উত্তরপত্রে ভুলবশত নিজেদের পার্শ্বশিক্ষক হিসেবে চিহ্নিত করেন। অক্টোবরে নথি যাচাইয়ের সময়ে উপযুক্ত নথি দেখাতে না-পারলেও তাঁদের পার্শ্বশিক্ষক হিসেবেই তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু পরে, ইন্টারভিউয়ের সময়ে ভুল নথি ধরা পড়ায় প্রার্থী-পদ বাতিল হয়। অনেকে চাকরিতে যোগ দিলেও পরে তাঁদের নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়।

নিয়োগের আগে তিন বার তথ্য যাচাইয়ের পরেও কারা পার্শ্বশিক্ষক আর কারা নন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে যাওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিল, তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে, সেটা হয়েছে জেলা স্তরে। ‘‘জেলা স্কুল পরিদর্শক, স্কুল পরিদর্শক, সহকারী জেলা স্কুল পরিদর্শকের পদ থাকার দরকার কি,’’ এমন প্রশ্নও তুলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ডিআই-দের যে বদলি করা হবে, সেই ইঙ্গিত তখনই দিয়েছিলেন পার্থবাবু।

‘‘আমরা অনেকে মিলে হাত ধরাধরি করে কাজটা করলাম। আর শেষ পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত করা হল শুধু আমাদেরই,’’ আক্ষেপ বদলির কোপে পড়া অনেক স্কুল পরিদর্শকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Recruitment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE