Advertisement
E-Paper

রোগিণীকে রক্ত দিলেন ডাক্তার

রক্ত দেওয়ার মতো পরিজন রোগিণীর তেমন কেউ নেই, জানা ছিল। রক্ত জোগাড়ে অসুবিধার কারণে আগেও দু’বার পিছিয়েছে অস্ত্রোপচার। তৃতীয় বার যখন অস্ত্রোপচার না করলেই নয়, অথচ, ফের সেই রক্তের অভাব, এগিয়ে এলেন খোদ ডাক্তারবাবু।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩০
চিকিৎসক শুভঙ্কর ভট্টাচার্য। ছবি: সুজিত মাহাতো

চিকিৎসক শুভঙ্কর ভট্টাচার্য। ছবি: সুজিত মাহাতো

রক্ত দেওয়ার মতো পরিজন রোগিণীর তেমন কেউ নেই, জানা ছিল। রক্ত জোগাড়ে অসুবিধার কারণে আগেও দু’বার পিছিয়েছে অস্ত্রোপচার। তৃতীয় বার যখন অস্ত্রোপচার না করলেই নয়, অথচ, ফের সেই রক্তের অভাব, এগিয়ে এলেন খোদ ডাক্তারবাবু। নিজে রক্ত দেবেন এই আশ্বাসে ব্লাড-ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত আনলেন সরকারি হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিৎসক শুভঙ্কর ভট্টাচার্য। অস্ত্রোপচার করে রাখলেন রক্তদানের সেই প্রতিশ্রুতি।

শনিবার দুপুর আড়াইটে। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে শুভঙ্করবাবু সটান হাজির ব্লাড-ব্যাঙ্কে। পাড়া থানার ঠাকুরডি গ্রামের বাসিন্দা কালীদাসি মাজির জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য দরকার ছ’বোতল ‘বি পজিটিভ গ্রুপ’-এর রক্ত। ব্লাড-ব্যাঙ্ক থেকে খোঁজ নিয়ে ফিরে গিয়ে রোগিণীর বোন শুভঙ্করবাবুকে জানিয়েছেন, তিন বোতলের বেশি রক্ত দিতে নারাজ ব্লাড-ব্যাঙ্ক। ডাক্তারবাবুকেও ব্লাড-ব্যাঙ্কের কর্মীরা জানান, রক্তের খুব টানাটানি চলছে। এক জন রোগীর জন্য ছ’বোতল রক্ত দেওয়া খুব মুশকিল।

শুভঙ্করবাবু তাঁদের বলেন, ‘‘এখন রক্ত দিয়ে দিন। অপারেশন করে এসে রক্ত দিয়ে যাব। আমারও গ্রুপ বি পজিটিভ।’’ পরে সফল ভাবে অস্ত্রোপচার করেন কালীদাসির। তাঁর ডিম্বাশয় থেকে বাদ দেন প্রায় পাঁচ কিলোগ্রাম ওজনের টিউমার। রক্তদান প্রসঙ্গে কৃতিত্ব নিতে নারাজ এই চিকিৎসক বলেন, ‘‘একই গ্রুপের রক্ত আমার। মনে হয়েছিল, এটা কর্তব্য।’’

ঘটনা শুনে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘খুব ভাল খবর। এমন ডাক্তারদের কথা সচরাচর সামনে আসে না। অথচ, সামনে এলে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় সাধারণ মানুষের ভরসা অনেক বেড়ে যাবে।’’

বছর চল্লিশের কালীদাসি কয়েক মাস ধরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে পেটে যন্ত্রণার চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর বৃদ্ধা মা ও বোন। সামান্য চাষজমির ভরসায় সংসার চলে। তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে আসতেন বোন বীণা মাজি। ধার-দেনা করে অস্ত্রোপচারের খরচ বাবদ হাজার দু’য়েক টাকা জোগাড় করলেও রক্ত জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল বীণাদেবীর পক্ষে।

বছর ছত্রিশের শুভঙ্করবাবুর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের চাঁদকুড়ি গ্রামে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস, পরে কলকাতার শিশুমঙ্গল হাসপাতাল থেকে এমএস পাশ করেন। প্রথম চাকরি পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেখানে যোগ দেন গত বছর মার্চে। তিনি জানান, কালীদাসিদেবীর অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। তাই অস্ত্রোপচার পিছনোর উপায় ছিল না। কালীদাসির অবস্থা স্থিতিশীল। পরে টিউমারের ‘বায়োপ্সি’ করা হবে।

‘দিদি’র অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে শুনে কেঁদে ফেলেন বীণাদেবী। বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু ওকে নতুন জীবন দিলেন। এর চেয়ে বড় রক্তের সম্পর্ক আর কী হতে পারে!’’ সহকর্মী ডাক্তারের প্রশংসায় হাসপাতালের সহকারী সুপার শান্তনু মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘শুভঙ্করবাবুর রক্তের গ্রুপটা আসলে ওঁর মানসিকতার মতোই— বি পজিটিভ।’’

Doctor Patient Blood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy