Advertisement
E-Paper

নবান্নে অনুযোগ শুনলেন, পেলেন আশ্বাসও

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে বাংলাদেশের জামাতুল মুজাহিদিন (জেএমবি) জঙ্গিদের যোগাযোগের কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে গেলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। একই সঙ্গে রাজ্যসভার এক তৃণমূল সাংসদের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একাধিক বিতর্কিত ব্যক্তির যোগাযোগ নিয়েও বেশ কিছু তথ্য মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫২

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে বাংলাদেশের জামাতুল মুজাহিদিন (জেএমবি) জঙ্গিদের যোগাযোগের কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে গেলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। একই সঙ্গে রাজ্যসভার এক তৃণমূল সাংসদের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একাধিক বিতর্কিত ব্যক্তির যোগাযোগ নিয়েও বেশ কিছু তথ্য মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী ডোভালকে জানিয়ে দেন, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি কোনও আপসে যেতে রাজি নন। তদন্তে যে তথ্য উঠে আসবে, সেই মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে তাঁর দলের ওই সাংসদের সঙ্গে জঙ্গি যোগের কোনও খবর এখনও রাজ্যের কাছে নেই বলেই ডোভালকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা হয় ডোভালের। রাজ্যের তরফে বৈঠকে হাজির ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার। তাঁদের সকলের সামনেই ডোভাল বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরে এ রাজ্যে জামাত জঙ্গিদের কাজকর্ম ও তাদের জাল ছড়ানোর খুঁটিনাটি বিষয়গুলি জানান মমতাকে। নবান্নের খবর, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি যে সব সময়ই কেন্দ্রের সঙ্গে থাকবেন, ডোভালকে তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এনআইএ তদন্তের মতো সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে এক বার রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে নিলে কোনও সমস্যা হতো না। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে রাজ্য পুলিশ সঠিক পথেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তখন দুর্গাপুজো ও ঈদ থাকায় তদন্তের বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রকে প্রথমে জানাতে পারেনি রাজ্য। নেপালের পশুপতি সীমান্তের ঢিলেঢালা নিরাপত্তার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের বলেন, অনুপ্রবেশ রুখতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে বেলা ৩টে নাগাদ নবান্নে ছাড়েন ডোভাল ও তাঁর সঙ্গীরা। তার আগে রাজ্যের তরফে মধ্যাহ্ন ভোজ দেওয়া হয় তাঁদের। নবান্ন ছাড়ার আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ সচিব (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা) প্রকাশ মিশ্র বলেন, “বর্ধমান বিস্ফোরণের বিষয়টিকে কেন্দ্র অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও এ ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও দক্ষ। তাই এ দিন তিনি নিজেই বিস্ফোরণ স্থল ঘুরে দেখেন।” বিশেষ সচিবের মতে, পেশাগত ভাবে ডোভাল এক জন পুলিশ অফিসার। অতীতে জঙ্গি হামলা সম্পর্কিত বহু মামলার তদন্ত সামলেছেন। খাগড়াগড়-তদন্তে আরও পেশাদারিত্বের ছোঁয়া দিতেই তিনি নিজে এসেছেন বলে জানান প্রকাশ।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রকাশ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। সন্ত্রাস মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্য একযোগে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই মামলায় তদন্তের স্বার্থে যে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার পিছনেও যে তাঁর সমর্থন থাকবে, সে কথাও আমাদের জানানো হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রকাশ বলেন, “এই তদন্তের শিকড়ে পৌঁছতে রাজ্য পুলিশ এবং অন্য তদন্তকারী সংস্থা সমস্ত রকম সহযোগিতা করছে। আমাদের বিশ্বাস এই জঙ্গি হামলায় অভিযুক্ত সকলেই ধরা পড়বে।”

নবান্নে যাওয়ার আগে ডোভাল এ দিন বর্ধমানের বিস্ফোরণস্থল ঘুরে দেখেন। তদন্তকারীদের কাছে তিনি জানতে চান, যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছিল, সেই বাড়িওয়ালার সঙ্গে কি আগে থেকে আলাপ ছিল নিহত শাকিল ও তার সাকরেদদের? ওই বাড়ি ঘুরে দেখার ফাঁকে এবং পরে বর্ধমান সার্কিট হাউসে বসেও বিস্ফোরণ নিয়ে খুঁটিনাটি জানতে চেয়েছেন ১৯৬৮-র কেরল ক্যাডারের আইপিএস অফিসার ডোভাল। কী ভাবে জঙ্গিরা ওই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল, প্রতিবেশীরা তদন্তকারীদের কাছে ওদের সম্পর্কে কী বলেছেন এ সবই তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চান জেলার পুলিশকর্তা ও এনআইএ-র অফিসারদের কাছে।

এনআইএ-র অফিসারেরা যখন তাঁকে বলেছেন, বিস্ফোরণে নিহত শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া ও জখম আবদুল হাকিম মোল্লার স্ত্রী আলিমাকে জেরা করে এবং মোবাইলের সূত্র ধরে কী ভাবে আরও কিছু জঙ্গি ও তাদের সহযোগীর নাম জানা গিয়েছে, ডোভাল মন দিয়ে শুনেছেন সে কথা। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা ২ অক্টোবর থেকে যা যা ঘটেছে, বিস্তারিত জানান। খাগড়াগড়ের বাড়ি থেকে বাবুরবাগে কওসরের ডেরা বা বাদশাহি রোডে রেজাউলের বাড়ি কত দূরে, তা-ও এনআইএ অফিসারদের কাছে জানতে চান ডোভাল। আলোচনায় ওঠে শিমুলিয়া মাদ্রাসার প্রসঙ্গও। খাগড়াগড়ে যে সব বিস্ফোরক ছিল, সেগুলি ফাটলে কী হতে পারত, বাদশাহি রোডের বাড়ি থেকে যে সব আইইডি মিলেছিল, সেগুলি কতটা ক্ষমতাশালী ছিল, সব জেনেছেন ডোভাল।

ডোভাল আসবেন বলে সকাল থেকেই এলাকার দখল ছিল এনএসজি ও সিআরপিএফ-এর হাতে। যত ক্ষণ ডোভাল ওই বাড়িতে ছিলেন, তত ক্ষণ আশপাশের বাড়ির ছাদে উঠে পাহারায় থেকেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। ওই বাড়িতে ডোভাল ঢোকেন পৌনে ১১টা নাগাদ। ছিলেন প্রায় আধ ঘণ্টা। তারই মধ্যে এক বার বাড়ির ছাদে উঠে আশপাশের অবস্থান দেখে নেন। তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে চান কী কারণে ওই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল শাকিলরা। বিস্ফোরণস্থল থেকে বেরিয়ে ডোভাল চলে যান সার্কিট হাউসে। সেখানে আধ ঘণ্টা আলোচনা সেরে নবান্নের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।

ajit doval khagragarh blast nia nsg razia bibi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy