প্রতীকী ছবি।
খেত ভরেছে ধানে। কিন্তু কাটবে কে? খেতমজুরের জ্বর।
দোকানে জমে রয়েছে চাল-ডাল-চিনি। বিক্রির লোক নেই। দোকানি শয্যাশায়ী।
ভ্যানচালকের ভ্যানে জমছে ধুলো। তাঁর বাড়িতেও জ্বরের হানা।
হাবরা, গাইঘাটা, বনগাঁ, বাগদার মতো উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকার প্রায় সব জায়গাতেই ছবিটা প্রায় একই। ঘরে ঘরে জ্বর। যার চোটে বন্ধ কাজকর্ম, দোকানপাট। যা সরাসরি আঘাত করছে ওই সব এলাকার অর্থনীতিতে। কাজে যেতে না-পারায় জ্বরে আক্রান্তদের রোজগার বন্ধ। অনেকে ধার করা শুরু করেছেন। আক্রান্তেরা বলছেন, ‘‘আগে তো বাঁচি। পরে কাজ।’’ সমস্যা যে গুরুতর, মানছেন প্রশাসনের কর্তারাও।
কৃষিপ্রধান ওই এলাকাগুলিতে এখন আমন ধান কাটার মরসুম। সর্ষে চাষের জন্য জমি তৈরিরও কাজ চলে এ সময়। সেই কাজও কার্যত থমকে রয়েছে। কারণ, লোক নেই। গাইঘাটার শিমুলপুর পঞ্চায়েতের খেতমজুর বিধান বিশ্বাসের কথাই ধরা যাক। তাঁর একার উপার্জনেই চলে সাত জনের পরিবারটি। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে তিনি জ্বরে ভুগছেন। তাঁর কথায়, ‘‘খেতমজুরি করে দিনে ২০০ টাকা মেলে। কিন্তু এই ভরা মরসুমেও কাজ করতে পারছি না। শরীরে জোর নেই।’’ ওই এলাকারই ফুল বিক্রেতা বাসুদেব মণ্ডল ঠাকুরনগর বাজার থেকে ফুল কিনে কলকাতায় বিক্রি করেন। জ্বরের জন্য তাঁর পক্ষেও কলকাতায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ডুমা গ্রামের বনমালী প্রামাণিক সর্ষে চাষ করেন। বছরের এই সময়েই জমি তৈরি করতে হয়। কিন্তু তিনি জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় পড়ে আছে খেত। জেলার কৃষি আধিকারিকেরা মানছেন, জ্বরের ফলে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেতমজুররাই।
শুধু কি চাষ? জ্বরের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্য কাজকর্মও। হাবরার বহু মানুষ রাজমিস্ত্রি বা ‘জোগাড়ে’ হিসেবে কাজ করেন। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তাঁরাও দরজা-জানলা বন্ধ করে শুয়ে রয়েছেন। গাইঘাটার ভাদুড়িয়ার রবীন্দ্রনাথ বালা ভ্যান চালান। কিন্তু সেই ভ্যানে এখন ধুলো জমছে। স্ত্রী শিশুলতাদেবী জ্বরে আক্রান্ত। তিনটি হাসপাতাল ঘুরে এখন বাড়িতেই চিকিৎসাধীন। স্ত্রীর চিকিৎসা বাবদ ইতিমধ্যে হাজার দশেক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে রবীন্দ্রনাথবাবুর। কিন্তু উপার্জন বন্ধ। স্ত্রীকে ছেড়ে বেরোতে পারছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘ধার করে চালাচ্ছি। এর পরে কী হবে জানি না।’’
জেলায় সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেগঙ্গার। উত্তর চাঁদপুর গ্রামে ইতিমধ্যে জ্বরে দু’জন মারা গিয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসার পর দিনকয়েক আগে বাড়ি ফিরেছেন গ্রামের আলি আকবর মোল্লা। তবু এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। তাঁর আক্ষেপ, “জমিতে পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে। পটলের জমিতে আগাছা গজিয়েছে। কিন্তু কিছু করতে পারছি না। শ্রমিকও মিলছে না।’’
বন্ধ দোকানপাটও। চার দিনের ব্যবধানে মা রাবিয়া বিবি ও জামাইবাবু আকবর আলি মণ্ডলকে হারিয়েছেন দেগঙ্গার কে এম চাঁদপুরের বাহারুল মণ্ডল। নিজেও জ্বরে ভুগছেন। বাহারুল বলেন, “দোকান খুলব কী করে? দেড় মাস বন্ধ। ভাল করে দাঁড়াতেই পারছি না।” হামাদামা বাজারের রেশন ডিলার বিশ্বজিৎ সাধুখাঁ রোজ দোকান খুলছেন। কিন্তু গ্রামের খুব কম মানুষই রেশন তুলছেন।
জ্বর থামিয়ে দিয়েছে সব কিছু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy