সামলাতে: উৎসাহীদের পাড়ে তুলতে সক্রিয় পুলিশ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
প্রথম দফায় শুকিয়ে কাঠ ব্যারাজ ও দ্বিতীয় দফায় জল ঢুকছে ব্যারাজে— এই ‘জোড়া’ দৃশ্য দেখাটা উদ্দেশ্য। আর তা করতে গিয়ে শনিবার সকাল থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত উৎসুক জনতার ভি়ড় দেখা গেল দুর্গাপুর ব্যারাজে। বাড়িতে জল না থাকলেও, এই ‘উৎসাহী’দের খামতি নেই প্রায় দেড় দিন ধরে। আর এই ভিড় সামলাতে হিমসিম অবস্থা পুলিশ-প্রশাসনের ।
রবিবার অতিরিক্ত পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়। নামানো হয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতের কর্মীদেরও। ‘দামোদরে নামবেন না’, এই মর্মে মাইকে অবিরাম প্রচার চালাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু এত কিছুর পরেও জনতার হুড়োহুড়িতে লাগাম দিতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান প্রশাসনের কর্তারা।
শুক্রবার রাতেই ব্যারাজের কয়েকটি লকগেট খুলে দিয়ে জল বের করে দিয়ে শুরু মেরামতের কাজ। এর ফলে শনিবার খটখটে শুকনো হয়ে পড়ে ব্যারাজ। আর তা দেখতেই ভিড় জমায় জনতা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়তে থাকে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘বিকেলে জনসমুদ্রের আকার নেয়।’’ মেরামতের কাজে যাতে অসুবিধা না হয়, তার জন্য মহকুমা প্রশাসন মাইকে বারবার জনতার কাছে দামোদরে না নামতে আবেদন জানায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ইউনিফর্ম পরা স্কুল ফেরত খুদে পড়ুয়া, দোকানি, অষ্টাদশী থেকে বধূ, যুবক— সকলেই ভিড় জমিয়েছেন। এমনকী এই ‘উৎসাহে’ পিছিয়ে নেই বয়স্করাও। কেন এসেছেন? জিজ্ঞাসা করায় এক প্রবীণের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আসব না! চল্লিশ বছর শহরে আছি। শুকনো ব্যারাজ, এমনটা দেখা তো দূর, শুনিওনি!’’
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এক নম্বর গেটের কিছুটা দূরে দড়ি দিয়ে ঘিরে ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা। মাঝে মাঝে ভিড় পাতলা করতে ‘মাইথন থেকে জল ছাড়া শুরু হয়েছে’, এমনটাও প্রচার করা হয়। তাতে দু’-এক জন পাড়ের দিকে দৌড়লেও, তাঁদের সংখ্যাটা নিতান্তই হাতে গোনা।
রবিবার সত্যিই মাইথন থেকে জল ছাড়ার পরেও এই ‘উৎসাহে’ খামতি দেখা যায়নি। বরং তৈরি হয় অন্য ‘উৎসাহ’। পুলিশকর্মী ও প্রশাসনের কর্তারা মাইকে করে, দামোদরে নেমে উৎসুক জনতাকে পাড়ে উঠে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু জনতার কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায়, ‘‘দাঁড়ান না, দেখি কী ভাবে জল জমছে।’’
শেষমেশ এক সময় অতিরিক্ত পুলিশ কর্মীর ব্যবস্থা করে মহকুমা প্রশাসন। আসরে নামেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মী, স্বেচ্ছাসেবকদেরও। লাইফ জ্যাকেট পরে তাঁদের কয়েক জনকে উৎসাহী লোকজনকে হাতে ধরে পাড়ে তুলতেও দেখা যায়।
এ ছাড়া ব্যারাজের উপর দিয়ে যাতায়াতের সময় বিপজ্জনক ভাবে মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে গোটা পর্ব দেখার দৃশ্যও নজরে পড়েছে। ছিল নিজস্বী তোলার হিড়িকও। যদিও ব্যারাজের উপরে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা ‘রে রে’ করে তেড়ে গেলে এই জনতা অবশ্য চম্পট দেয়। ব্যারাজের উপরে ভিড়ের চোটে বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রোডে দিনভর মাঝেসাঝে যানজট হয়েছে।
এমন ‘উৎসাহ’ দেখে এক পুলিশকর্তার অনুযোগ, ‘‘মানুষ যদি সচেতন না হন, তা হলে এমন ঘটনার মোকাবিলা করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy