বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ স্তরে অভিভাবকপ্রতিম কোনও ব্যক্তিত্বকে দেখতে চেয়েছিল সদ্য স্বাধীন ভারত। যিনি রোজকার কাজকর্মের খুঁটিনাটিতে কার্যত নাক গলাবেন না। কিন্তু সব কিছুর খেয়াল রাখবেন। সঙ্কটকালে বিশ্ববিদ্যালয়কে আলোর পথও দেখাবেন। এমন চিন্তা থেকেই এ দেশে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভিজ়িটরে’র ভূমিকায় রাষ্ট্রপতি কিংবা আচার্যের পদে ‘রাজ্যপাল’কে ভাবা হয়েছিল বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা। কিন্তু বাস্তবে স্বপ্নভঙ্গ হওয়ারযথেষ্ট কারণ ঘটেছে বলে তাঁদের অনেকেরই অভিমত।
অর্থনীতির প্রবীণ অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক সৌরীন ভট্টাচার্যের কথায়, “আমাদের শিশু রাষ্ট্রে হয়তো ভাবা হয়েছিল, রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালেরা তাঁদের সাংবিধানিক ভূমিকার প্রতি মর্যাদা রাখবেন। এবং সিজারের মতো তাঁরাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকবেন। রাষ্ট্রপতির মর্যাদা এখনও অনেকটাই অটুট। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপালের ক্ষেত্রে সেটা বলা যায় না।” রাজ্যপালকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা এবং রাজনৈতিক কারণে তাঁর সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর পরিণামে বিচিত্র টানাপড়েন দেখছে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাঙ্গনও। রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজ়িটর পদে আসীন রাজ্যপালকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। এবং রাজ্যপালের পদটাই কার্যত তুলে দেওয়ার জন্য সওয়াল করছেন শাসক দলের ঘনিষ্ঠ শিক্ষাবিদেরা। পুরাণবিদ, অধ্যাপক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, “সব সিদ্ধান্ত নিয়ে পদে পদে রাজ্যপালের সঙ্গে বিরোধ বাধছে। এমন পদ রাখার অর্থ কী!” বর্তমান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সময়ে এ রাজ্যে সংঘাত এমন তীব্র আকার ধারণ করলেও রাজ্যপাল পদটি কখনওই কোনও প্রয়োজনীয় তাৎপর্য বহন করে না বলেই তিনি মনে করছেন।
নৃসিংহপ্রসাদের মতে, “রাজ্যপালকে সরানোর এই সিদ্ধান্ত তো গ্রহমুক্তি। বাধ্য হয়ে ওঁকে সরিয়ে রাজ্য সরকারি কলেজগুলিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আচার্যের বাড়তি দায়িত্বভার নিতে হচ্ছে। সেই সিদ্ধান্তের অনুসারী হিসেবেই বাধ্য হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিষয়টিও সামনে এসেছে।” তাঁর কথায়, “বেসরকারিতেও রাজ্য সরকার জমি দেয়, তারপর পিপিপি মডেলে কাজ হয়, সেখানে রাজ্য সরকারের কেউ থাকলে ক্ষতি কী?”