Advertisement
১০ মে ২০২৪
Death

প্রয়াত অনাথনাথ, শেষ এক অধ্যায়ও

অনাথনাথ দাস

অনাথনাথ দাস নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৫৩
Share: Save:

প্রয়াত হলেন অনাথনাথ দাস। তাঁর মৃত্যুতে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রচর্চার একটি বিশেষ ঘরানাতেও দাঁড়ি পড়ল। স্মৃতিভ্রংশ, স্পন্ডিলোসিস-সহ নানা রোগ বাসা বেঁধেছিল অশীতিপর শিক্ষাবিদের শরীরে। তাঁর মৃত্যুতে শোকার্ত বিশ্বভারতী এবং রবীন্দ্র-অনুরাগীদের সকলেই।

বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন অনাথনাথবাবু। ছাত্রজীবন শেষ করে পাঠভবনে বাংলার শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। শুধু শিক্ষকতা নয়, বরং আমৃত্যু রবীন্দ্রচর্চার জন্যই বাংলার শিক্ষিত সমাজ তাঁকে মনে রাখবে। বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্র পাণ্ডুলিপি পাঠ, সম্পাদনা ও গ্রন্থনার যে বিশেষ ধারার জন্ম দিয়েছিলেন পুলিনবিহারী সেন, তার একনিষ্ঠ সাধক ছিলেন অনাথনাথবাবু। সুদীর্ঘ কর্মজীবনে বহু গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। যেগুলির অন্যতম, রবীন্দ্রনাথের লেখা সমস্ত কবিতার সংকলন, ‘রবীন্দ্রনাথ এবং শ্রীশচন্দ্র মজুমদার’ প্রভৃতি। ‘পদ রত্নাবলী’র মতো গ্রন্থও সম্পাদনা করেন। বিশ্বভারতী থেকে প্রকাশিত সম্পূর্ণ রবীন্দ্র রচনাবলির শেষের দিকের বেশ কয়েকটি সংস্করণের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। রবীন্দ্র রচনা সম্পাদনার বাইরেও ‘পুলিনবিহারী শতবর্ষ সংকলন’ গ্রন্থের সম্পাদনা করেন।

এহেন ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে রবীন্দ্রচর্চা তথা সার্বিক বাংলা সাহিত্যচর্চার জগতে ক্ষতি বলে মত সকলেরই। পাঠভবনের প্রাক্তন শিক্ষক তথা বর্তমানে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুলিনবিহারী সেনের প্রত্যক্ষ সাহচর্যে অনাথদা রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা ও প্রকাশনার কাজ শিখেছিলেন। পুলিনবিহারীর রবীন্দ্র সম্পাদনার সেই অভিজাত ধারা, যাকে শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন ‘পৌলীন্য’, তারও অবসান হল অনাথদার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই।” বিশ্বভারতীর প্রাক্তন কর্মী স্বপনকুমার ঘোষ বলেন, “শুধু রবীন্দ্রনাথ নয়, বিশ্বভারতী এবং শান্তিনিকেতন সম্পর্কে অনাথদার কাছে প্রচুর তথ্য পাওয়া যেত। তাই অনাথদার মৃত্যু বর্তমান রবীন্দ্র গবেষকদের কাছে স্বজন হারানোর মতোই বেদনাদায়ক।”

সুব্রত সেন মজুমদারের সংযোজন: পাঠভবনে অগ্রজ সহকর্মী হিসেবেই প্রথম পেয়েছি ওঁকে। আমি অঙ্ক, প্রকৃতিপাঠের মাস্টারমশাই, উনি বাংলার। এক জন প্রকৃত ছাত্রদরদী শিক্ষক, অধ্যক্ষ ছিলেন অনাথদা। একদা হস্টেলের ওয়ার্ডেনও ছিলেন। পরে উনি রবীন্দ্রভবনের সঙ্গে যুক্ত হলেও পাঠভবনের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরেনি। কখনও রাগতে দেখিনি। অল্প স্বল্প কথায় বুদ্ধিদীপ্ত রসবোধের ছাপ। প্রুফ দেখার চোখ তো জহুরির মতো! পরোপকারী। ছাত্রছাত্রীদের খুব উৎসাহ দিতেন।

বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসে শান্তিনিকেতনে মিশে গিয়েছিলেন। পোশাক, ব্যবহার, রুচি— সব কিছুতে মার্জিত সত্যিকারের রাবীন্দ্রিক স্বভাবের মানুষ। এটা তো ছদ্ম রাবীন্দ্রিকতা জাহির করার যুগ। অনাথনাথ দাসদের চলে যাওয়া সেখানে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Visva Bharati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE