Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের বিয়ের আগেই বাবাকে মারল হাতি

চার দিন পরেই ছোট ছেলের বিয়ে। কিন্তু তার আগেই বাড়িতে নেমে এল শোকের ছায়া। শনিবার রাতে হাতির হামলায় নিজের কাঁঠাল বাগানেই গুরুতর জখম হয়ে মারা গেলেন বাড়ির কর্তা গোপালচন্দ্র পাত্র (৪৯)। বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ রেঞ্জের ভালুকা গ্রামের ঘটনা। তিনি ভালুকা রেলগেটের রক্ষী ছিলেন। এ নিয়ে গত দু’মাসে হাতির হানায় বাঁকুড়া জেলায় ছ’জনের মৃত্যু হল।

গ্রামের বাড়িতে মৃতের শোকার্ত স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

গ্রামের বাড়িতে মৃতের শোকার্ত স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০২:১৭
Share: Save:

চার দিন পরেই ছোট ছেলের বিয়ে। কিন্তু তার আগেই বাড়িতে নেমে এল শোকের ছায়া। শনিবার রাতে হাতির হামলায় নিজের কাঁঠাল বাগানেই গুরুতর জখম হয়ে মারা গেলেন বাড়ির কর্তা গোপালচন্দ্র পাত্র (৪৯)। বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ রেঞ্জের ভালুকা গ্রামের ঘটনা। তিনি ভালুকা রেলগেটের রক্ষী ছিলেন। এ নিয়ে গত দু’মাসে হাতির হানায় বাঁকুড়া জেলায় ছ’জনের মৃত্যু হল।

বাঁকাদহ রেঞ্জের দুন্দুল জঙ্গল থেকে প্রায় ১১টি হাতির একটি দলকে কোচকুণ্ডা জঙ্গলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। শনিবার সন্ধ্যা থেকেই হাতি খেদানো শুরু করে বন দফতর। হাতির দল ভালুকা গ্রামের গোপালচন্দ্রবাবুর কাঁঠাল বাগানে ঢুকে পড়ে। গাছে কাঁঠাল সবে পাকতে শুরু করেছে। তাই মাঝরাতে এই খবর শুনেই বড় ছেলে বিকাশ ও কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে বাগানে যান গোপালচন্দ্রবাবু। তাঁর হাতে একটি টর্চ ছিল। বাগানের ভিতরে ঢুকে তিনি টর্চের আলো ফেলেন। আলো দেখেই গোপালচন্দ্রবাবুর অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি হাতি তেড়ে আসে তাঁর দিকে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, হাতিটি শুঁড়ে গোপালচন্দ্রবাবুর দেহ পাকিয়ে ধরে একটি কাঁঠাল গাছে আছাড় মারে। বাবাকে হাতি জাপটে ধরেছে দেখেই বিকাশ ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু হাতির রুদ্রমূর্তির দেখে বেশিদূর তিনি এগোতে পারেননি। গাছে আছাড় মেরে গোপালবাবুকে ফেলে রেখে হাতিটি সরে যায়। গোপালচন্দ্রবাবুকে রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন ও বন দফতরের কর্মীরা উদ্ধার করে প্রথমে বিষ্ণুপুর হাসপাতাল নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বাঁকুড়া মেডিক্যালেই তাঁর মৃত্যু হয়।

রবিবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল গোপালচন্দ্রবাবুর ছোট ছেলে অরূপের বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়দের অনেকেই ইতিমধ্যেই বাড়িতে এসে পড়েছেন। বিয়ের বাড়ির প্যান্ডেলের বাঁশও বাড়ির সামনে পড়ে রয়েছে। তবে এই ঘটনার জেরে বিয়ে বাড়িতে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। অরূপ একেবারে গুম হয়ে গিয়েছেন। কারও সঙ্গেই তিনি কথা বলছেন না। বিকাশের আক্ষেপ, “বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। বাবাকে হাতির শুঁড়ে পাকাতেই কিছুটা এগিয়েছিলাম। কিন্তু বাবাকে ছুড়ে ফেলে হাতিটা উল্টে আমার দিকে তেড়ে আসে। কপাল জোরে আমি রক্ষা পেয়েছি।’’

গোপালচন্দ্রবাবুর স্ত্রী ময়নাদেবী কান্নাকাটি করছিলেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন পড়শি মহিলারা। গোপালচন্দ্রবাবুর ভাইপো মানস পাত্র বলেন, “অরূপের বিয়ে ধুমধাম করে দিতে চেয়েছিলেন কাকা। সব আয়োজনও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অনভিপ্রেত এই ঘটনায় আমাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’’

উল্লেখ্য, বাঁকাদহ রেঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে বহু কাঁঠাল বাগান রয়েছে। এই ফল বিক্রি করে এলাকার লোকজন ভাল রোজগার করেন। কিন্তু পাকা কাঁঠালের গন্ধে গত কয়েকবছর ধরে হাতিরা হানা দিচ্ছে। এতে কাঁঠাল বাগানের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই বাগান বাঁচাতে গিয়ে প্রাণহানিও ঘটছে। তাই বন দফতরের উপরে এলাকার অনেকের ক্ষোভও রয়েছে। যদিও বন দফতরের বাঁকাদহ রেঞ্জের আধিকারিক দুর্গাপ্রসাদ ঝাঁ দাবি করেছেন, “হাতি খেদানো হবে বলে গ্রামে আমরা সতর্কবার্তা জারি করেছিলাম। তারপরেও কেন গোপালচন্দ্রবাবুরা বাড়ির বাইরে বের হলেন তা বুঝে উঠতে পারছি না। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তাঁর পরিবারকে সরকারি নিয়ম মতো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”

গত এপ্রিল ও মে মাসেই জেলায় হাতির হামলায় ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। বড়জোড়া রেঞ্জে তিনজন, গঙ্গাজলঘাটি, জয়পুর ও বিষ্ণুপুর রেঞ্জে একজন করে হাতির হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। এই ঘটনার প্রভাব খাস নবান্নেও পড়েছে। সপ্তাহখানেক আগে জেলা সফরে এসে বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক বৈঠকে হাতির সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই হাতি নিয়ন্ত্রণে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিতে চলেছে বন দফতর। তবে তাতে হাতির হানা কতটা ঠেকানো যাবে তা নিয়ে বাসিন্দাদের সংশয় কাটছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE