Advertisement
E-Paper

জেহাদের প্রতীক ওবামাই যেন ছিটমহলের উৎসবের মধ্যমণি

ওবামার পরনে লাল টি-শার্ট, খয়েরি ট্রাউজার। স্থল সীমান্ত চুক্তি সই হওয়ার আনন্দে রবিবার মধ্য মশালডাঙা ছিটমহলের বিজয় উৎসবের মধ্যমণি ছিল এই পাঁচ বছরের ওবামা-ই। তাকে মিষ্টিমুখ করানো থেকে আবিরের টিপ দেওয়া— রীতিমতো হুড়োহুড়ি। বিজয় মিছিলের পুরোভাগেও সেই ওবামা।

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০২:২৭
খুদে জেহাদ মিষ্টিমুখ করাচ্ছে দীপ্তিমান সেনগুপ্তকে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

খুদে জেহাদ মিষ্টিমুখ করাচ্ছে দীপ্তিমান সেনগুপ্তকে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

ওবামার পরনে লাল টি-শার্ট, খয়েরি ট্রাউজার।

স্থল সীমান্ত চুক্তি সই হওয়ার আনন্দে রবিবার মধ্য মশালডাঙা ছিটমহলের বিজয় উৎসবের মধ্যমণি ছিল এই পাঁচ বছরের ওবামা-ই। তাকে মিষ্টিমুখ করানো থেকে আবিরের টিপ দেওয়া— রীতিমতো হুড়োহুড়ি। বিজয় মিছিলের পুরোভাগেও সেই ওবামা।

কে এই ওবামা? কেন স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল স্বাক্ষরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওবামার জন্য ছিটমহলের বাসিন্দাদের বিজয় উৎসবে এমন উন্মাদনা?

ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির এক কর্মী জানালেন, মধ্য মশালডাঙার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ওবামার পোশাকি নাম জেহাদ হোসেন ওবামা। ২০১০ সালে ২৯ মার্চ দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে তার জন্ম। বাবা শাহজাহান আলি, মা আসমা বিবি দু’জনেই মধ্য মশালডাঙা ছিটের বাসিন্দা। এই ভূখণ্ড এখলও বাংলাদেশের আওতাধীন। স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর আসবে ভারতের আওতায়। হতদ্ররিদ্র পরিবারের তৃতীয় সন্তান ওবামার জন্মকালীন ঘটনাকে ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের অন্যতম ‘মাইল ফলক’ বলেই মনে করেন সেখানকার বাসিন্দারা। কেন?

সমন্বয় কমিটির কর্তারা জানান, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো না থাকায় ছিটমহলে প্রসব সংক্রান্ত কাজ বরাবর দাই নির্ভর। ফলে বহু ক্ষেত্রে শিশুমৃত্যুও ঘটে। ২০১০ সালে প্রসবকালীন জটিলতায় আসমা বিবির পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে ওঠায় তাঁকে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, বাংলাদেশি ছিটমহল মধ্য মশালডাঙার বাসিন্দা ‘নাগরিকত্বহীন’ আসমাকে প্রথমে ভর্তি করতে আপত্তি জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে মানবিকতার খাতিরে তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়। হাসপাতালে ছেলের জন্ম দেন তিনি। গোলযোগ বাঁধে ওই শিশুর জন্ম পরিচয়পত্র দেওয়া নিয়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে পুরসভা— কোনও পক্ষই মশালডাঙা ছিটমহল ঠিকানা লিখে জন্ম শংসাপত্র দিতে চায়নি।

এই ধরনের পরিস্থিতিতে আগে বরাবর ছিটমহলবাসী বাবা-মা কোচবিহারের কোনও ভুয়ো ঠিকানায় শংসাপত্র লিখিয়ে বাড়ি চলে এসেছেন। কিন্তু এ বার ছিটের বাসিন্দারা এককাট্টা— মশালডাঙার ঠিকানাতেই শংসাপত্র দিতে হবে। তাঁদের বক্তব্য, ছিটমহলে জন্মে কোনও অপরাধ করেনি শিশুটি। কেন তাকে সারা জীবন মিথ্যা সার্টিফিকেট বয়ে বেড়াতে হবে?

কমিটির আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত মশালডাঙা ঠিকানাতেই শংসাপত্র দেওয়া হয়। এই ঘটনার পরেই মাঝে ঝিমিয়ে যাওয়া ছিটমহল হস্তান্তরের আন্দোলন নতুন গতি পায়।

সমন্বয় কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “জেহাদ হোসেন ওবামার নামকরণ কমিটির তরফেই করা হয়। জেহাদের অর্থ ধর্মযুদ্ধ, হোসেন পদবি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্মস্থান নিয়েও বিতর্ক থাকায় প্রতীকী হিসাবে ওবামা জুড়ে দেওয়া হয়। ছিটমহলের কোন এলাকার পরিচয় দিয়ে ওর নামেই প্রথম জন্ম শংসাপত্র মিলেছে।”

ওই খুদের নাম তাই বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘোরে। মশালডাঙার বাসিন্দা ইছারণ বিবি বলেন, “জেহাদের জন্মের পর ছিটমহলে প্রসবের সময়ে হাসপাতালে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। দাই নির্ভরতা অনেকটাই কাটায় ছেলেমেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা কমেছে।” ওবামার মা আসমা বিবি বলেন, “এত দিনে ছেলের ওই জন্ম শংসাপত্র পাওয়াটা যেন সার্থক হল। আমরা খুব খুশি।”

রবিবার মধ্য, পূর্ব মশালডাঙা, কচুয়া সহ মোট ১৯টি ছিটের বাসিন্দারা বিজয় উৎসব করেন। নাজিরহাট বাজার পর্যন্ত তাঁরা মিছিল করেন। উৎসবে অজগর আলি, ক্ষিতেন বর্মনরা একে অপরের হাত ধরে হাসছিলেন। ছিটমহলগুলি ভারতে সংযুক্ত হলে কোনও বাসিন্দাই বাংলাদেশে ফিরবেন না বলে তাঁরা জানালেন। মাইকে তখন এক টানা বেজে চলছিল, ‘আই লাভ মাই ইন্ডিয়া’।

arindam saha coochbehar enclave exchange jihad hossain obama dinhata obama mashaldanga enclave indo bangla enclave treaty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy