Advertisement
E-Paper

শ্মশানযাত্রী সেজে পাকড়াও, জামিন পেল পাচারকারীরা!

বন দফতরের দাবি, সিংহ পাচারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক পাচারচক্র জড়িত। পাচারের অভিযোগে ধৃত ওয়াসিম রহমান, ওয়াজিদ আলি এবং মহম্মদ গুলাম গাউস সেই চক্রের শরিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৯ ০৩:৩৩
বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উদ্ধারের পরে সল্টলেকের বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্রে। শনিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উদ্ধারের পরে সল্টলেকের বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্রে। শনিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

সিংহ ও বাঁদর পাচারের অভিযোগে শুক্রবার রাতে পাকড়াও করা হয়েছিল তিন যুবককে। উদ্ধার করা হয় একটি সিংহ শাবক এবং তিনটি বিরল প্রজাতির বাঁদরও। শনিবার সেই অভিযুক্তদের জামিন দিলেন ব্যারাকপুর আদালতের বিচারক।

সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতায় একাধিক বন্যপ্রাণী পাচারের ঘটনা সামনে এসেছে। কিন্তু সিংহ পাচারের ঘটনা স্মরণীয় অতীতে ঘটেছে কি না, তা মনে করতে পারছেন না বনকর্তাদের অনেকেই। বন দফতরের দাবি, সিংহ পাচারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক পাচারচক্র জড়িত। পাচারের অভিযোগে ধৃত ওয়াসিম রহমান, ওয়াজিদ আলি এবং মহম্মদ গুলাম গাউস সেই চক্রের শরিক। অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে যাওয়ায় পাচারের তদন্ত ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তবে রাজ্য বন দফতরের সহকারী ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘জামিন খারিজের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। তদন্তও চলবে।’’

বনকর্তাদের একাংশের দাবি, জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছিল। এ দিন আদালতে সরকারি কৌঁসুলিকে বক্তব্য পেশের সুযোগই দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের কানেও পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় বন্যপ্রাণ অপরাধদমন ব্যুরো (ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো বা ডব্লিউসিসিবি)-র আঞ্চলিক অধিকর্তা অগ্নি মিত্র বলেন, ‘‘গুরুতর অভিযোগ ছিল। অভিযুক্তেরা জামিন পাওয়ায় হতাশ হয়েছি।’’ বনকর্তারা জানান, সিংহশাবক তো বটেই, বাকি তিনটি বাঁদরের দু’টি ‘হোয়াইট হেডেড লাঙুর’, লুপ্তপ্রায় প্রজাতির। অন্যটি ‘জাভান লাঙুর’ও বিপদগ্রস্তের তালিকায়। ফলে মামলাটির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।

জাভান লাঙুর
(ট্র্যাকিয়োপিথেকাস অরাটাস)
• বাসস্থান: জাভা, ইন্দোনেশিয়া
• দৈর্ঘ্য: গড়ে ৫৫ সেন্টিমিটার (লেজ বাদে)
• ওজন: ৭-৯ কিলোগ্রাম
• খাবার: ফলমূল, পাতা

সূত্রের খবর, ধৃতেরা হাওড়ার বেলিলিয়াস রোডের বাসিন্দা। তাঁদের গাড়ির ড্যাশবোর্ডে একটি রাজনৈতিক দলের পতাকাও মিলেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওয়াসিম কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বাকি দু’জন তাঁর শাগরেদ। কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি চোরাকারবারে যুক্ত তাঁরা। ওয়াজিদের ভাইপো গোলাম রসুল এ দিন বলেন, ‘‘কাকা এখানে থাকে না। মাঝেমধ্যে আসত। এর বেশি জানি না।’’ গোলামের পরিজনেরা তাঁর ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তা হলে এ দিন ধৃতদের জামিন পাওয়াতে কারা তৎপর হলেন? সদুত্তর মেলেনি।

হোয়াইট হেডেড লাঙুর
(ট্র্যাকিয়োপিথেকাস পলিয়োসেফালাস)
• বাসস্থান: ভিয়েতনাম, চিন
• দৈর্ঘ্য: গড়ে ৫০ সেন্টিমিটার (লেজ বাদে)
• ওজন: ৮-৯ কিলোগ্রাম
• খাবার: ফলমূল, পাতা

বাংলাদেশ থেকে আনা এই প্রাণীগুলিকে মুম্বইয়ে নিয়ে যাওয়া হত। সেখান থেকে পশ্চিম ভারতের কোনও রাজ্যের ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায় পাঠানোর ছক ছিল। এর আগেও এ ভাবে বিপন্ন গোত্রের প্রাণী পাচার হয়েছে। অগ্নিবাবু বলেন, ‘‘আগেও এ ভাবে বন্যপ্রাণী পাচার হয়েছে বলে খবর মিলেছিল। তার পর থেকেই সতর্ক ছিলাম। নির্দিষ্ট খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে হানা দিয়ে সাফল্য মিলেছে।’’ দিন দুয়েক আগেই ডব্লিউসিসিবি-র একটি দল বনগাঁয় বাংলাদেশ সীমান্তে চলে যায়। ওই এলাকায় হোটেলে উঠলে যদি গোপন অভিযানের তথ্য ফাঁস হয়, সেই আশঙ্কায় শ্মশানযাত্রী সেজে রাত কাটাতে হয়েছে তাঁদের। শুক্রবার সন্ধ্যায় বন্যপ্রাণীগুলি সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকলে তাঁরা পাচারকারীদের পিছু নেন। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে অপেক্ষায় ছিলেন বন দফতরের অফিসারেরা। সেখানেই পাচারকারীদের পাকড়াও করা হয়।

বন মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, চোরাকারবারিরা তাইল্যান্ডের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে সিংহকে ঘেরাটোপে বন্দি করে প্রজনন করায়। সেই শাবকগুলিকেই বিক্রি করে তারা। বিভিন্ন ধনী ও প্রভাবশালীরা এই ধরনের পোষ্য রাখেন। সিংহশাবকটির শান্ত হাবভাব দেখে বনকর্তাদের অনুমান, সেটি ‘বন্য’ নয় অর্থাৎ জঙ্গলে জন্মায়নি। বাঁদর তিনটি সম্পর্কেও একই ধারণা। উদ্ধার করার পরে সিংহ ও বাঁদরদের সল্টলেকের বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেখা যায়, খাঁচার ভিতরে রীতিমতো ঝিমোচ্ছে তারা। বন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পাচারের পথে যাতে সাড়াশব্দ না-করে তার জন্য সম্ভবত ঘুমের
ওষুধ দেওয়া হয়েছিল।’’ পরে প্রাণীগুলিকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়। আপাতত প্রাণীগুলিকে চিড়িয়াখানার হাসপাতালে আলাদা ভাবে রাখা হয়েছে।

আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানান, সিংহটি ভারতীয় বা আফ্রিকার, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেটির বয়স মাস ছয়েক। এ দিন দুপুরে ডাক্তারি পরীক্ষার পর প্রাণীগুলিকে ‘ওআরএস’ মেশানো জল খেতে দেওয়া হয়। পরে সিংহটি ২৫০ গ্রাম সেদ্ধ মুরগির মাংস খেয়েছে। বাঁদরগুলি শসা, পেঁপে খেয়েছে। মোটামুটি সুস্থ থাকলেও সব ক’টি প্রাণীকে সিসিটিভির নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সর্বক্ষণ দেখভালের জন্য দু’জন কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে।

Endangered Animals Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy