প্রতীকী ছবি।
স্থলভূমির উপর দিয়ে যাত্রীদের নিয়ে উড়ে যাওয়ার পথে কোনও বিপদ ঘটলে যে-কোনও সময়েই নিকটবর্তী বিমানবন্দরে নেমে যাওয়ার উপায় থাকে পাইলটের। কিন্তু রাতের অন্ধকারে সমুদ্রের মাথায় আচমকা ইঞ্জিন বিগড়ে গেলে সমস্যা ঘোরালো হয়ে ওঠে। সব চেয়ে কাছে কোন বিমানবন্দর আছে, তার থেকে তখন ঠিক কত দূরে রয়েছে বিমানটি— এই সব অঙ্ক কষে দেখতে হয়।
মাঝ আকাশে ইঞ্জিন থেকে তেল বেরোনোর মতো ঘটনা সচরাচর ঘটে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ এক অতি কঠিন পরিস্থিতি। শনিবার রাতে সেই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বাহবা দেওয়া হচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়ার কম্যান্ডার পাইলট ক্যাপ্টেন জিতেন্দ্র যাদবকে। যিনি ব্যাঙ্কক থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে শনিবার রাতে তেল লিক করতে থাকা ইঞ্জিন বন্ধ করে সমুদ্রের উপর থেকে নেমে এসেছিলেন কলকাতায়।
প্রায় ১৮ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার সঙ্গে এর মিল পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। বলা হচ্ছে, এ ভাবে সমুদ্রের মাথায় ইঞ্জিন থেকে তেল লিক করার ঘটনা এর মধ্যে খুব বেশি ঘটেনি। ২০০১ সালের ২৪ অগস্ট এয়ার ট্রানজাট সংস্থার এয়ারবাস ৩৩০ বিমানটি কানাডার টরন্টো থেকে পর্তুগালের লিসবন যাচ্ছিল। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টার উড়ান। টরন্টো থেকে রাত ১২টার পরে উড়ে অতলান্তিকের উপর দিয়ে চার ঘণ্টা যাওয়ার পরে আচমকাই বিমানটির ডান দিকের ইঞ্জিন থেকে তেল বেরিয়ে যেতে শুরু করে।
আধুনিক বিমানের ককপিটে বসে পাইলট চাইলে দেখতে পান, কোন ইঞ্জিন কতটা তেল ব্যবহার করছে। একটি ইঞ্জিন থেকে বেশি তেল বেরিয়ে গেলে সেটা সহজেই বুঝতে পারেন পাইলট। সে-ক্ষেত্রে এক দিকের তেলের ট্যাঙ্ক খালি হয়ে গিয়ে বিমানের ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাইলট সুইচ টিপে এক ট্যাঙ্ক থেকে অন্য ট্যাঙ্কে তেল পাঠিয়ে সেই ভারসাম্য রক্ষা করেন। ১৮ বছর আগে সেটাই করেছিলেন বিদেশি পাইলট ক্যাপ্টেন রবার্ট পিচে। শনিবার ঠিক একই ভাবে ভারসাম্য রক্ষা করেন ক্যাপ্টেন জিতেন্দ্র। তার পরেও অবশ্য তেল বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা অব্যাহত ছিল।
দেড় যুগ আগের ঘটনায় ডান দিকের ইঞ্জিন থেকে তেল বেরোতে শুরু করার পরে আরও তিন ঘণ্টা উড়ে লিসবনে পৌঁছনো অসম্ভব বুঝতে পেরে ক্যাপ্টেন রবার্ট সেই ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে কাছেই অতলান্তিকের মধ্যে একটি দ্বীপ লাজেস-এর বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নেমে পড়েন। রানওয়েতে নামার আগে বাঁ দিকের ইঞ্জিনও বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। শেষে শুধু ‘গ্লাইড’ করে অর্থাৎ ভেসে ভেসে নেমে এসেছিলেন তিনি। তাঁর ও সহ-পাইলটের দক্ষতায় বেঁচে যান ৩০৬ জন যাত্রী।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, শনিবার এয়ার ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন জিতেন্দ্র যখন ডান দিকের ইঞ্জিন থেকে তেল বেরোতে দেখেন, সেই সময় তিনি কলকাতা থেকে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের উপরে ছিলেন। তেল যাতে কম নষ্ট হয়, সেই জন্য তিনি ডান দিকের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন। জানতেন, ওই একটি ইঞ্জিনে ভর করে তাঁর পক্ষে দিল্লি উড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে জরুরি অবতরণ পর্যন্ত বাঁ দিকের ইঞ্জিন বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। কেন তেল লিক করল, সেই বিষয়ে তদন্তে নেমেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy