Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ভূকম্পের ভয়ে শিলিগুড়িতে মাঠেই পরীক্ষা

ভূমিকম্পের ভয়ে ভরা বৈশাখের দুপুরে মাঠে বসেই পরীক্ষা দিলেন শিলিগুড়ি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। মঙ্গলবার দুপুরে ভূকম্পের সময় শিলিগুড়ি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পার্ট ওয়ানের পরীক্ষা চলছিল। ফের ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝতে পেরেই হুড়োহুড়ি করে কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়েন পরীক্ষার্থীরা। ভূকম্পের রেশ কেটে গেলেও আবার পরীক্ষার হলে যেতে সাহস পাননি অনেকে।

কম্পনের আতঙ্কে ভরসা নেই কলেজ-বাড়ির উপর। তাই মাঠেই চলছে পরীক্ষা। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

কম্পনের আতঙ্কে ভরসা নেই কলেজ-বাড়ির উপর। তাই মাঠেই চলছে পরীক্ষা। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০৪:১৯
Share: Save:

ভূমিকম্পের ভয়ে ভরা বৈশাখের দুপুরে মাঠে বসেই পরীক্ষা দিলেন শিলিগুড়ি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।

মঙ্গলবার দুপুরে ভূকম্পের সময় শিলিগুড়ি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পার্ট ওয়ানের পরীক্ষা চলছিল। ফের ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝতে পেরেই হুড়োহুড়ি করে কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়েন পরীক্ষার্থীরা। ভূকম্পের রেশ কেটে গেলেও আবার পরীক্ষার হলে যেতে সাহস পাননি অনেকে। তাই কলেজ কর্তৃপক্ষ সামনের মাঠেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উজ্জ্বল সরকার বলেন, ‘‘এই গরমেও ছাত্রছাত্রীরা মাঠেই থাকতে চাইছিল। কলেজ ভবনটিও পুরনো। তাই শুধু ওই পরীক্ষাটি নয়, পরের অন্য পরীক্ষাগুলোও মাঠেই নেওয়া হয়েছে।’’ পরীক্ষার্থী শ্রেয়া ঘোষ বলেন, ‘‘২৫ এপ্রিল ভূমিকম্পের পরে বেশ কয়েকবার মাটি কেঁপে উঠেছিল। এ বারও তাই হবে বলে আশঙ্কা ছিল। সে কারণেই আমরা আর কলেজে ফিরতে চাইনি।’’

একই কারণে মঙ্গলবার রাতটা রাস্তাতেই কাটাবেন বলে ভেবে রেখেছেন শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির বেশ কিছু বহুতলের বাসিন্দা। তাঁদেরও বক্তব্য, মাঝরাতে যদি ফের মাটি কেঁপে ওঠে, তখন কিছু করার থাকবে না। তাই অন্তত এই রাতটা বহুতলে না থাকাই ভাল। তাই শিলিগুড়ি কলেজের যে মাঠে দুপুরে পরীক্ষা হয়েছে, সন্ধ্যায় সেখানে রাতে শোওয়ার ব্যবস্থা করেছেন অনেকে। অনেকে ছোট পার্কে জায়গা রেখেছেন রাতের জন্য।

গতবারের ভূমিকম্পে বড় ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এ বারও আতঙ্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনেক স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে বেরোতে গিয়ে আহত হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের শয়রাপুর হাইস্কুলে রেলিং ভেঙে পড়ে পঞ্চম ও সপ্তম শ্রেণীর ১০ জন ছাত্রছাত্রী জখম হয়। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়াতে এক শিক্ষিকা ও দুই ছাত্রীকেও হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। মালদহের সামসির বৈদ্যনাথপুর হাই স্কুলে মঙ্গলবার ভূমিকম্পের সময় হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি করে নামতে গিয়ে কমবেশি ২০ জন জখম হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন ছাত্রীকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুরের একটি স্কুলে তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে নীচে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন এক শিক্ষক। বেশ কিছু স্কুলে পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়।

ভূমিকম্পের সময় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও রোগীদের ছেড়ে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে কয়েকজন চিকিৎসককে। পিছন পিছন ছুটে বেরিয়ে গিয়েছেন কয়েক জন রোগীও। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে স্যালাইনের বোতল হাতে ঘণ্টা খানেক হাসপাতালের সামনের রাস্তায় বসে ছিলেন চাউলহাটি এলাকার বাসিন্দা ছবিয়া খাতুন। হাসপাতাল সুপার পার্থ দে বলেন, “অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। অনেক বুঝিয়ে তাঁদের ওয়ার্ডে পাঠাতে হয়েছে।”

কাঁপুনিতে ছাদ ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় উঠে দাঁড়িয়েছেন শয্যাশায়ী এক বৃদ্ধাও। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে তিন দিন ধরে শয্যাশায়ী তিনি। এ দিন ভূমিকম্পের পরে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে দাঁড়িয়ে তাঁর নাতি পুরাতন মালদহের বাসিন্দা সুদীপ লোহার বলেন, ‘‘ঠাকুমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা। উঠে দাঁড়াতে পারছিলেন না। ভূমিকম্পের পরে গিয়ে দেখি তিনিও আতঙ্কিত হয়ে দিব্যি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE