সাধারণ দিনে যে যন্ত্র এক কোটি টাকা গুনতে পারে, তার ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে দ্বিগুণ নোট। আবার ছেঁড়া-ফাটা বা জাল নোট চিহ্নিত করতে যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, তার খাটাখাটনিও কম যাচ্ছে না! এই অতি-ব্যবহারে আচমকাই বিগড়ে যাচ্ছে দু’রকম মেশিনের সেন্সর। এতে এক দিকে কারেন্সি চেস্ট-এ নোট গোনায় দেরি হচ্ছে। তেমনই আটকে যাচ্ছে ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কাজও। ফলে বেশিক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে গ্রাহককেই।
ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, একাধিক জেলার শাখা থেকে আরও নোট গোনার মেশিন চাওয়া হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। নানা জেলা সদরে থাকা অপেক্ষাকৃত বড় ব্যাঙ্কগুলি থেকে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ‘নোট কাউন্টিং’ ও ‘শর্টিং মেশিন’ পাঠানোর জন্য সদর দফতরে বার্তা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, নোট বাতিলের পরে এক মাস পেরিয়ে গেলেও তা নিয়ে অনেক কেন্দ্রীয় অফিসের তরফে সাড়া মেলেনি বলে কর্মীদের একাংশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
শিলিগুড়িতেই যেমন একাধিক ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখা গিয়েছে, একটা কাউন্টিং মেশিন নিয়ে দু-তিন জন ব্যাঙ্ককর্মী ব্যবহার করছেন। কোনও কোনও ব্যাঙ্কে কর্মী-অফিসারেরা উষ্মা জানাচ্ছেন প্রকাশ্যেই: এই শাখায় আছে তো দু’টো ‘নোট কাউন্টিং মেশিন’। তারও আবার একটা খারাপ! কাজ হবে কী ভাবে?
ফল, ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে দিনভর লম্বা লাইন। অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের গড়ে তিন ঘণ্টা লাইন দিতে হচ্ছে। কোনও কোনও যন্ত্রের আবার ‘সেন্সর’ কিছুক্ষণের জন্য অকেজো হয়ে ব্যাঙ্ককর্মীদের নাভিশ্বাস বাড়িয়ে দিচ্ছে।
নিরুপায় হয়ে ব্যাঙ্কগুলি আরও নোট কাউন্টিং মেশিন চাইছে। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য ব্যাঙ্ককে পরিকাঠামোগত এই ঘাটতি দ্রুত মেটাতে আর্জি জানানো হয়েছে। সংগঠনের তরফে কয়েক জন প্রতিনিধি জানান, নোট বাতিলের পরে এক মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু কোনও মেশিনই বাড়ানো হয়নি। তার ফলেই দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহক ও ব্যাঙ্ককর্মী, অভিযোগ ব্যাঙ্কেরই।
ব্যাঙ্ককর্মীদের বেশির ভাগই মনে করছেন, এখন আর টাকা গোনার যন্ত্র বাড়ানো হবে না। কারণ, ডিসেম্বরের পরে তো বাতিল নোট জমা পড়ার চাপ কমে যাবে। অন্য দিকে, নগদ লেনদেন কমানোর উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। তাই কেউ কেউ সহকর্মীকে আশ্বাস দিয়ে বলছেন, কষ্ট তো আর তো কটা দিন। তার পরে চাপ কমে যাবে।