Advertisement
১৭ মে ২০২৪

শোধিত বীজেও শোধন জরুরি

যে কোনও চাষের ফসল বীজ শোধনের উপর নির্ভর করে। বলা চলে, শিশুকে যেমন নানা রোগের হাত থেকে বাঁচাতে টিকা দেওয়া হয়, ফসলের ক্ষেত্রেও একই রকম গুরুত্ব বীজশোধনের।

বিপ্লব মিত্র, উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

যে কোনও চাষের ফসল বীজ শোধনের উপর নির্ভর করে। বলা চলে, শিশুকে যেমন নানা রোগের হাত থেকে বাঁচাতে টিকা দেওয়া হয়, ফসলের ক্ষেত্রেও একই রকম গুরুত্ব বীজশোধনের। বাজার থেকে কেনা বীজের প্যাকেটের উপরে বড় করে লেখা থাকে ‘ওষুধ দ্বারা শোধিত বীজ’। চাষিরা ওই বীজ কিনে আর শোধন করার প্রয়োজন বোধ করেন না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংশয় থেকেই যায়। তাই বাজার থেকে বীজ কেনার পর অবশ্যই তা শোধন করতে হবে।

এখন ধানের সময়। উত্তরবঙ্গ-সহ গোটা রাজ্যেই ‘স্বর্ণ’ জাতের আমন ধান প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে চাষ হয়। ওই ধান চাষের ক্ষেত্রে একটু সময় বেশি লাগে। আবার ‘গোতরা’ প্রজাতির ধান চাষও এখন হচ্ছে। চার মাসের মধ্যে ওই ধানের ফলন ঘরে তুলতে পারেন চাষিরা। বিশেষ করে যাঁরা আলু (জলদি) চাষ করেন তাঁরা ওই প্রজাতির ধান চাষ করেন। এই দুই প্রজাতির ধানের ক্ষেত্রেই বীজ শোধন না থাকলে শিস ধসা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় মাজরা পোকার আক্রমণেও ধানের ক্ষতি হয়।

এক্ষেত্রে বাজার থেকে বীজ কেনার পর অন্তত পক্ষে ১০-১২ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। জলে ‘ট্রাইসাইক্লোজল্্ কেমিক্যাল’ দিয়ে ভিজিয়ে রাখাই সব থেকে ভাল। প্রতি কেজিতে দেড় লিটার জলে দেড় মিলিলিটার ওষুধ দিতে হবে। ভিজিয়ে রাখার পরে ২৪-৩৬ ঘণ্টা ওই বীজ কলাপাতা বা চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এরপরেই বীজের মুখ ফেটে যাবে। তখন ওই বীজ বপন করতে হবে। অনেকে আলু বা সব্জি বীজ শোধন করার জন্য পাঁচ-পনেরো মিনিট জলে কেমিক্যাল দিয়ে ভিজিয়ে রাখে। ওই ফসলের ক্ষেত্রে তা ঠিক আছে। কিন্তু ধানের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন।

জলদি জবাব

প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। আজ উদ্যানপালন দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট
ডিরেক্টর পার্থপ্রতিম পাল এবং শ্রীনিকেতন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ সুব্রত মণ্ডল।

• আমাদের বাড়ির চারপাশে বেশ কিছু নারকেল গাছ আছে। কিন্তু মুচি অবস্থায় ঝরে যাচ্ছে। পেয়ারাও কচি অবস্থায় ঝরে যাচ্ছে। কী করব?

সুনীল ঘোষ, ঘোলা, ঘোষপাড়া

গাছের বয়স জানা নেই। তবে মোটামুটি আট বছর বা তার বেশি গাছের জন্য ১২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৬০০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট, ২২০০ গ্রাম মিউরিয়েট অফ পটাশ, ১৫০-২০০ গ্রাম বোরাক্স সার দিতে হবে। সঙ্গে ৪/৫ কিলোগ্রাম শুকনো গোবর সার। গাছের চারিদিকে ০.৫ মিটার থেকে ১.৫ মিটারের হালকা গর্ত করে এই সার প্রয়োগ করতে হবে। অতিরিক্ত গরমে পেয়ারা কচি অবস্থায় ঝরে যায়। এখন যেহেতু বর্ষা বচ্ছে, এই সমস্যা কমে যাওয়ার কথা। যদি সমস্যা না মেটে তা হলে তিন লিটার জলে ০.৫ মিলি প্লেনোফিক্স গুলে ৪-৭ বছরের গাছে প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স এর থেকে বেশি হলে প্লেনোফিক্স ১ মিলি তিন লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

• বাগানে কয়েকটি জবা গাছ আছে। কুঁড়ি আসছে। কিন্তু কুঁড়ি কালো হয়ে যাচ্ছে। ফুল ফুটছে না। কী করলে ফুল ফুটবে?

বীরেন সরকার, অরবিন্দনগর, বাঁকুড়া

গাছ কম রোদ পেলে বা মাটিতে জল জমে থাকলে সাধারণত এই সমস্যা দেখা যায়। এই দু’টো হতে দেওয়া যাবে না। এছাড়া ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করলে এর সুফল পাওয়া যায়।

• চাঁপাকলার চারা কোথায় পাওয়া যায়?

কিংশুক পট্টনায়ক, মহাদিয়া, খড়্গপুর

হুগলির চুঁচুড়া হর্টিকালচার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ফার্ম-এ পাওয়া যায়। প্রতি চারার দাম ৫ টাকা। ফোন—০৩৩-২৬৮৬১৮৩৮।

• নতুন জমিতে দু’বিঘা বেগুন চাষ করেছি। গাছে দ্বিতীয় বার মাটি দেওয়ার কাজ চলছে। কিন্তু সম্প্রতি এক-এক করে গাছের ডগা প্রথমে ঢলে পড়ছে, তারপর মরে যাচ্ছে। প্রথম বার লক্ষ্মণ দেখা মাত্রই সাত দিন অন্তর দু’বার স্ট্রেপ্টোমাইসিন ৯: ১ স্প্রে করেছি। লাভ হয়নি। উল্লেখ্য গাছ লাগানোর সময় ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি দেওয়া হয়নি। কিন্তু চারা রোপণের ১৫ দিন পর দিয়েছিলাম। কী করণীয়?

অচিন্ত্য সিংহ, জিয়ড়দা, ইন্দপুর, বাঁকুড়া

প্রথমে বিঘে প্রতি এক কুইন্টাল গোবর সার ও ১০ কেজি পটাশ সার মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। কারবেন্ডাজিম-৫০% এক গ্রাম অথবা পেনসাইক্যুরন- দেড় মিলিলিটার, প্রতি লিটার জলে দিয়ে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। সমস্যা না কমলে, সাত দিন পর, ভ্যালিড়ামাইশিন-৩%, ২ মিলিলিটার প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। প্রত্যেকটা স্প্রে আঠা-সহ করতে হবে।

চিঠি পাঠানোর ঠিকানা

আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১। ই-মেল করুন: district@abp.in

সুযোগ-সুবিধা

উন্নত মানের সংশোধিত ধানের বীজ বিলি শুরু করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতর। এক-এক জন চাষিকে কুড়ি কিলো করে ধানের বীজ দেওয়া হচ্ছে। তা দিয়ে মোটামুটি এক একর জমি চাষ করা যাবে। সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে কীটনাশকও। তবে, সারের খরচ বহন করতে হবে চাষিদেরই। ইচ্ছুক চাষিরা যোগাযোগ করুন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে। কারণ পঞ্চায়েত থেকেই তালিকা যাচ্ছে কৃষি দফতরে।

গৃহপালিত পশুদের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে প্রাক-বর্ষার সময় টিকাকরণ জরুরি। তাই বর্ধমান জেলা পরিষদ ৮ হাজার ছাগলকে টিকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে। প্রতি পঞ্চায়েতে েয প্রাণিমিত্রদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁরাই এই টিকা দেবেন। এ দিকে, কালনা ১ ব্লকের প্রাণিসম্পদ দফতর আগামী ১০ জুলাই নানদাই পঞ্চায়েতে শিবির করে গৃহপালিত পশু-পাখিদের (হাঁস, মুরগি, ছাগল) টিকাকরণের বন্দোবস্ত করেছে। সচেতনতা প্রচারও চলবে শিবিের।

চাষের জন্য ভাড়ায় মিলবে আধুনিক কৃষিযন্ত্র। বাজারে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়ায় পুরুলিয়া জেলার ৫টি কৃষি সমবায় সমিতি থেকে। কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা দিব্যেন্দু দাস জানিয়েছেন, ৫টি গোষ্ঠীকে (বলরামপুরের দু’টি , ঝালদা-১, জয়পুর এবং বরাবাজার ব্লকে একটি) এই ধরনের যন্ত্র কেনার জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে।

পটাশপুর ১ ও ২ ব্লকে ঝড়-বৃষ্টিতে ধান চাষে েয ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনপত্র খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি শুরু হয়ে যাবে।

ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনুষ্ঠান হল বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লক অফিস প্রাঙ্গনেও। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) দেবদাস মুখোপাধ্যায় জানান, প্রথম দফায় ৫০০ জন চাষিকে চেক দেওয়া হচ্ছে। বেশ কয়েক দফায় অন্য চাষিদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE