পরিবেশে দেদার কার্বন-দূষণ ছড়ানোর জন্য ট্রাক-সহ বিভিন্ন যানবাহনে ‘ওভারলোডিং’ বা বাড়তি পণ্য বহনকে দায়ী করা হয়। রাতের শহরে দুর্ঘটনার পিছনেও ভিলেন সেই ওভারলোডিং। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ বা ‘সামলে চালাও, প্রাণ বাঁচাও’ কর্মসূচিতে নেমে এমনটাই ধরা পড়েছে সরকারের নজরদারিতে।
তাই ওভারলোডিং ঠেকাতে এ বার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। ঠিক হয়েছে, ওভারলোডিংয়ের মোকাবিলায় জাতীয় ও রাজ্য সড়কের বিভিন্ন টোল প্লাজায় নিয়মিত নজরদারি চালাবে সরকার। নিয়ম অনুযায়ী ওই নজরদারি চালানোর কথা রাজ্যের পরিবহণ দফতরেরই। কিন্তু ওই দফতরের যথেষ্ট পরিকাঠামো না-থাকায় পরিবহণ অফিসারদের সঙ্গে থাকবেন পুলিশকর্মী এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরাও।
ওভারলোডিং খলনায়ক কেন?
পরিবহণ-কর্তারা জানাচ্ছেন, বেশ কয়েকটি কারণেই ওভারলোডিংকে খলনায়ক বলতে হচ্ছে।
যে-সব ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, তারা বহনক্ষমতার বাইরে প্রচুর পণ্য বহন করে। ক্ষমতার অতিরিক্ত মালপত্র তোলায় দৌড়তে দৌড়তে চালক অনেক সময়েই ট্রাকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ঘটে দুর্ঘটনা।
ওভারলোডিংয়ের জন্য সড়কের উপরে অনেক বেশি চাপ পড়ে। তাতে দ্রুত সড়ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্ষতি হয় সেতুরও।
অতিরিক্ত মালপত্র বোঝাই করলে বাড়তি চাপ পড়ে ট্রাকের ইঞ্জিনের উপরেও। তাতে ইঞ্জিনের ধোঁয়ায় বিষাক্ত কার্বনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তার জেরে স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যায় দূষণ।
ওভারলোডিং ঠেকাতে এত দিন যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?
পরিবহণ দফতরের বক্তব্য, ব্যবস্থা আছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। ওভারলোডিংয়ের মোকাবিলায় এখন রাজ্যের মাত্র ছ’টি জায়গায় চেক পোস্ট রয়েছে। নানান আয়তনের ট্রাকের বহনক্ষমতা নানা রকম। নির্দিষ্ট ওজনের বেশি মালপত্র তুললে মোটরযান আইন অনুযায়ী এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এবং বাড়তি প্রতি টন পণ্য-পিছু আরও এক হাজার টাকা করে জরিমানার বন্দোবস্ত আছে। কিন্তু তার পরেও দেখা যাচ্ছে, নিয়মবিধি ও নজরদারির ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে বহু ট্রাক।
ফেডারেশন অব ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুভাষচন্দ্র বসুর অভিযোগ, অনেক ট্রাক বেআইনি ভাবে বাড়তি মালপত্র বোঝাই করলেও পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের লোকজন টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। ‘‘তাই দুর্ঘটনা ঘটে। এই প্রবণতায় লাগাম পরানো উচিত,’’ বলেন সুভাষবাবু।
পরিবহণ দফতরের কর্তারা অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। এক কর্তা বলেন, ‘‘এই ধরনের অভিযোগের সারবত্তা নেই। কড়া হাতেই নজরদারি চলবে।’’ এর আগেও ট্রাকের ওভারলোডিং নিয়ে একাধিক বার সরব হয়েছেন ট্রাক-মালিকেরা। অতিরিক্ত মালপত্র বোঝাই করলে আখেরে তাঁদের ব্যবসার ক্ষতি হয় এবং একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি হয় বলে পরিবহণ-কর্তাদের কাছে জানিয়েছেন তাঁরা। ট্রাক-মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি চেকপোস্টে ইতিমধ্যেই জোরদার নজরদারি শুরু করেছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু তাতে আশাপ্রদ ফল মেলেনি বলেই দাবি পরিবহণ-কর্তাদের। তাই এ বার সারা রাজ্যেই ওভারলোডিং বন্ধে কঠোর হতে চাইছে সরকার। বিশেষ ভাবে ওভারলোডিংয়ে নজরদারির জন্য রাজ্যের ৩০টিরও বেশি টোল প্লাজায় চেক পোস্ট তৈরি করা হবে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘টোল প্লাজায় গাড়ির গতি কম থাকে। তাই ওখানে গাড়ির উপরে নজরদারি করা সহজ। সেই জন্যই টোল প্লাজাগুলিতে চেক পোস্ট তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঠিক হয়েছে, জাতীয় সড়কের টোল প্লাজায় পরিবহণ দফতরের কর্মীরা থাকবেন। একসঙ্গে টোল প্লাজার টাকা নেওয়া এবং চেক পোস্টের কাজ চলবে। এক কর্তার কথায়, ‘‘পৃথক পরিকাঠামো তৈরির পরে নজরদারি শুরু হলে অনেক সময় লেগে যেত। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy