এভারেস্ট-জয়ী দুই তরুণী। (বাঁ দিকে) ত্রিশলা গুরুঙ্গ ও সুলক্ষণা তামাঙ্গ। নিজস্ব চিত্র
পাহাড়ের মেজাজের ছোঁয়া দুই কন্যার পরিবারেও।
মঙ্গলবার সারা দিনই রোদ ঝলমলে ছিল দার্জিলিং পাহাড়। ঝলমল করছিল ত্রিশলা, সুলক্ষণাদের বাড়ি দু’টোও। করবেই তো। গত কয়েক দিনের উদ্বেগের মেঘ কেটে গিয়ে খুশির রোদ্দুরে ভাসছিলেন পাহাড়ের দুই কন্যার পরিজনেরা। গত বেশ কয়েক দিনের আশঙ্কা কেটে গিয়েছিল চেনা গলায় একটা ফোনে।
দার্জিলিঙের লাসা গ্রামে মঙ্গলবার বেলায় ফোন আসে গণেশ গুরুঙ্গের বাড়িতে। ও পারে এভারেস্ট বেসক্যাম্প থেকে মেয়ে ত্রিশলা। ‘‘বাবা, আমরা পেরেছি! পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দুতে আমরা পায়ের ছাপ রেখে এসেছি!’’ মেয়ের গলা শুনে গলা বুজে এসেছিল বাবার। হওয়ারই কথা। এর আগে শেষ বার মেয়ের কথা হয়েছিল গত মার্চে বেসক্যাম্প থেকে রওনা হওয়ার সময়। তার মধ্যে সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছেন এ বারের এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে একাধিক অভিযাত্রীর সঙ্কটের কথা।
উদ্বেগটা তাই ক্রমশ বাড়ছিল। গণেশবাবু বলছিলেন, ‘‘শেষ বার কথা বলার সময়েই মেয়ে জানায় শিখরে পৌঁছে ফেরার পরেই ফের কথা বলবে। মেয়ে শৃঙ্গ জয় করে বেসক্যাম্পে ফিরেছে। নিরাপদ রয়েছে বলে জানিয়েছে। মেয়ের ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি।’’ আবেগে গলা বুজে আসে তাঁর। তাঁর মেয়েকে রোল মডেল করে পাহাড় ও সমতলের অগুনতি তরুণ-তরুণী অভিযাত্রীরাও উৎসাহী হলে মেয়ের অভিযান সার্থক হবে বলে মনে করছেন তিনি।
আবেগের একই ছবি দার্জিলিঙের কাছারি রোডে ওমপ্রকাশ তামাঙ্গের বাড়িতেও। তাঁর মেয়ে সুলক্ষণাও ছিল ত্রিশলার এভারেস্ট অভিযানের সঙ্গী। এনসিসি মহিলা অভিযাত্রী দলের আরও সাত জনের সঙ্গে ঘরের দুই মেয়ের শিখরে পৌঁছানোর খবর পেয়ে তাঁদের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন বন্ধু থেকে প্রতিবেশীরা।
সুলক্ষণার বাবা ওমপ্রকাশ তামাঙ্গ এত দিন লোকমুখে শুনছিলেন। এ দিন বেস ক্যাম্প থেকে মেয়ের ফোন করার পর প্রথম কথা হয়। সেখানেই প্রথম তিনি মেয়ের কাছে জানতে পারেন শিখরে ওঠার গল্প। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে সব সময়ই বলত, আমি পারব। খেলাধূলাতেও উৎসাহও ছিল অপরিসীম। তবে এভারেস্ট ছুঁয়ে ফিরবে এতটা আশা করিনি। ও করে দেখাল।’’
মঙ্গলবার সারা দিনই তাঁদের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন বন্ধু, পড়শিরা। ত্রিশলার বাবা গণেশবাবু বা সুলক্ষণার বাবা ওমপ্রকাশবাবুরা মঙ্গলবার দিনভর ব্যস্ত রইলেন পড়শিদের ‘মুহ মিঠা’-র আব্দার মেটাতেই। ত্রিশলা দার্জিলিংয়ের সাউথফিল্ড কলেজের ভূগোল অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ত্রিশলার চেয়ে কয়েক বছরের ছোট বোন ত্রিবেণীও উচ্ছ্বসিত দিদির সাফল্যে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। দিদি এভারেস্ট জয়ী! বন্ধুদের কাছে গর্ব করে বলছি। দিদি ফিরলে সবাই আলাপ করতে চেয়েছে।’’ গর্ব করছেন সুলক্ষণার ঘুম কলেজের অধ্যক্ষ শেরিং তামাঙ্গও। নিজের কলেজের প্রথম বর্ষের কলা বিভাগের ছাত্রীর বাড়িতেও গিয়েছিলেন তিনি। বললেন, ‘‘ওঁকে স্বাগত জানাতে বিশেষ আয়োজনের কথা ভাবছি। ও আমাদের গর্ব।’’
গৌরব কারকি, দীপিকা রাঠৌরের নেতৃত্বে মোট ১৫ জনের দল গিয়েছিলেন সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অভিযানে। গত ২০১৪-র ডিসেম্বর থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। কয়েকশো ছাত্রীকে প্রাথমিক পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল দার্জিলিঙের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে (এইচএমআই)। সেখান থেকে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ৪০ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। তাদের আবার ২০১৫ সালের মে-জুন মাসে আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই সময় উত্তরপ্রদেশের দেওটিব্বা প্রায় ৬ হাজার মিটার উচ্চতায় তাঁদের ওঠা অনুশীলন করানো হয়। তার মধ্যে থেকে ফের সেরা ১৫ জনকে বেছে নেওয়া হয়। সেই দলটিই চলতি বছরের ৩০ মার্চ কাঠমান্ডুতে পৌঁছন। দলটিতে উত্তরপ্রদেশ, জম্মু কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরাখণ্ড, চণ্ডীগড়, হিমাচল প্রদেশ, মিজোরাম ও রাজস্থানের ছাত্রীরা রয়েছেন। এই দলেরই সদস্য সুলক্ষণা, ত্রিশলারা। দিল্লির এনসিসির অতিরিক্ত প্রচার নির্দেশক উমন কোহলি বলেন, ‘‘১০জন ক্যাডেট ছিল দলটিতে। বাকিরা তাঁদের সহায়তার জন্য ছিল। এর মধ্যে একজন পৌঁছতে পারেননি। বাকি ন’জনই ২১ মে দু’দফায় শৃঙ্গে পৌঁছন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy