Advertisement
১১ মে ২০২৪
COVID-19

‘বিনা চিকিৎসায়’ মৃত্যু, আক্ষেপ স্ত্রীর

ঘটনার পিছনে চিকিৎসার অব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন পরিবারের সদস্যেরা।

ছবি প্রতীকী

ছবি প্রতীকী ফাইল চিত্র

সীমান্ত মৈত্র  
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৩৩
Share: Save:

একাধিক বার বিভিন্ন হাসপাতালের চক্কর কেটেও বাঁচানো গেল না করোনা আক্রান্ত এক রোগীকে। গাইঘাটার মাঝবয়সি ওই ব্যক্তি বুধবার রাতে বাড়িতেই মারা গিয়েছেন। ঘটনার পিছনে চিকিৎসার অব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন পরিবারের সদস্যেরা।

স্ত্রীর কথায়, ‘‘স্বামীকে নিয়ে কলকাতার একাধিক হাসপাতালে গিয়েছি। হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ করেছি, ভর্তি নিতে। কেউ শোনেনি। শেষে বাধ্য হয়ে স্বামীকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। সম্পূর্ণ বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন।’’

পরিবার ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ এপ্রিল জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে ঠাকুরনগরে চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে যান ওই ব্যক্তি। করোনা পরীক্ষার জন্য লালারস সংগ্রহ করা হয়। পাঠানো হয় এনআরএস হাসপাতালে। পরে চাঁদপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সুস্থ হওয়ায় ১৫ এপ্রিল ছুটি দেওয়া হয়।

১৭ এপ্রিল ফের অসুস্থ বোধ করেন তিনি। আবারও চাঁদপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা স্ত্রীকে জানান, অক্সিজেন মাত্রা কমে যাচ্ছে। দ্রুত তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যেতে হবে। ওই ব্যক্তির স্ত্রীর কথায়, ‘‘স্বামীকে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে রাতে আরজিকর হাসপাতালে যাই ১৭ এপ্রিল রাতে। সেখানে চিকিৎসকেরা অক্সিজেন দেন। ইসিজি ও এক্স-রে করেন। কিন্তু ভর্তি না করে কিছু ওষুধপত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। তখনও আমরা করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাইনি।’’

মৃতের পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট তাঁরা পান ১৮ এপ্রিল। লালারস দেওয়ার এত দিন পরে কেন রিপোর্ট আসছে, তা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। রিপোর্ট দেরিতে আসায় রোগীকে করোনা হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা পর্যন্ত করতে পারেননি বলে জানায় পরিবারটি। ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট এখন পাঁচ দিন পরে আসছে।

মৃতের স্ত্রীর কথায়, ‘‘বুধবার স্বামীর শারীরিক অবস্থার খুব খারাপ হয়। এনআরএস, বেলেঘাটা আইডি এবং আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাই ওঁকে। কোথাও স্বামীকে ভর্তি করাতে পারিনি। বলা হয়েছে, শয্যা নেই। বাধ্য হয়ে স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফিরি। বুধবার রাতে বাড়িতেই মারা যান। বাড়িতে দেহ ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে প্রশাসন বাড়ি থেকে দেহ নিয়ে গিয়েছে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, করোনা আক্রান্ত কোনও রোগীকে সরকারি যে কোনও হাসপাতালে সরাসরি নিয়ে গিয়ে ভর্তির সুযোগ নেই। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।

কী সেই নিয়ম?

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফোন করে প্রথমে রিপোর্ট পাঠাতে হয়। তারপরে স্বাস্থ্য দফতর রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করে। যদিও করোনায় আক্রান্ত রোগীর পরিবারের অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর সকলের কাছে নেই। ওই নম্বরে ফোন করলেও রোগী ভর্তি করতে দীর্ঘ সময় লাগে। অনেকেরই আবার স্মার্ট ফোন নেই। মৃতের স্ত্রী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের একটি ফোন নম্বরে ফোন করেছিলাম। জানানো হয়েছিল, এখন ভর্তি করা সম্ভব নয়।’’ গাইঘাটা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুজন গায়েন অবশ্য বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কন্ট্রোল রুমের নম্বর আমরা এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে দিই। স্বাস্থ্যকর্মীরাও কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর আক্রান্ত রোগীর পরিবারের লোকজনকে দিয়ে দেন। ফোন নম্বর পেতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ তবে স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। জেলায় শয্যার সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই ফোন করলেই দ্রুত ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। মৃত ব্যক্তি নকল গয়না বিক্রি করতেন। এক ছেলে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। মৃতের স্ত্রীর কথায়, ‘‘একটু চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে স্বামীকে বাঁচাতে পারতাম। পরিবারটা ভেসে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gaighata COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE