Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাবা এখনও ফিরছে না কেন, বুঝতে পারছে না ছোট্ট অর্ক

চক দিয়ে দেওয়াল-মেঝে জুড়ে আঁকিবুকি কাটছে কচি হাত। হঠাৎ দেখে মনে হচ্ছে, ‘বাবা’ লিখল বুঝি! মা কাঁদছে। কেঁদে চলেছে দাদু-ঠাকুমাও। সাড়ে তিন বছরের অর্কর মাথায় ঢুকছে না, যারা তার কান্না ভোলায়, আজ তারাই এত কাঁদছে কেন! এ রকম একটা দিনে বাবা-ই বা বাড়ি ফিরছে না কেন, বোধগম্য হচ্ছে না তার। তাই মাঝেমধ্যে গলা জড়িয়ে মাকে ভোলানোর চেষ্টা করে চলেছে।

মাকে সান্ত্বনা অর্কর। ছবি: শৈলেন সরকার

মাকে সান্ত্বনা অর্কর। ছবি: শৈলেন সরকার

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

চক দিয়ে দেওয়াল-মেঝে জুড়ে আঁকিবুকি কাটছে কচি হাত। হঠাৎ দেখে মনে হচ্ছে, ‘বাবা’ লিখল বুঝি!

মা কাঁদছে। কেঁদে চলেছে দাদু-ঠাকুমাও। সাড়ে তিন বছরের অর্কর মাথায় ঢুকছে না, যারা তার কান্না ভোলায়, আজ তারাই এত কাঁদছে কেন! এ রকম একটা দিনে বাবা-ই বা বাড়ি ফিরছে না কেন, বোধগম্য হচ্ছে না তার। তাই মাঝেমধ্যে গলা জড়িয়ে মাকে ভোলানোর চেষ্টা করে চলেছে।

ছোট্ট অর্ক জানে না, তার বাবা অসীম মুখোপাধ্যায় আর ফিরবেন না। শনিবার অন্ডালের সিএল জামবাদ খনিতে মার খেয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। অসীমবাবুকে খুনের দায়ে ওই খনির ফোরম্যান তথা আইএনটিটিইউসি নেতা কেদার পাল আপাতত পুলিশি হেফাজতে। পরিবারের অভিযোগ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ঠিকাদার অসীমবাবুর থেকে তোলা নিতেন কেদার। কিন্তু সম্প্রতি অসীমবাবু টাকা দিতে চাননি। শনিবার তিনি খনিতে গেলে কেদার তাঁর সঙ্গে বচসা বাধান। অভিযোগ, হঠাৎই মারতে শুরু করেন। আর তাতেই মৃত্যু হয় অসীমবাবুর।

শনিবার দুপুরে সেই খবর পাওয়ার পর থেকেই অর্ককে কোলে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন অসীমবাবুর বৃদ্ধ বাবা দীপক মুখোপাধ্যায়। তাঁর পুত্রবধূ চিন্ময়ীদেবী বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন অসীমবাবুর মা মালতীদেবী। রবিবারও বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল।

বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। সারা দিনই পাড়া-পড়শি থেকে নেতাদের আনাগোনা। বাড়ির বাইরে জমাট ভিড়। চক হাতে এ ঘর-ও ঘর ঘুরে বেড়াচ্ছে অর্ক। পড়শিরা এসে আদর করছে তাকে। অচেনা লোক দেখলেই জামা টেনে ধরে সে জিজ্ঞেস করছে, “বলো না, আমার বাবা কখন আসবে?”

উত্তর দিতে না পেরে মুখ লুকোচ্ছেন সকলেই। ক্যামেরা হাতে চিত্র সাংবাদিককে তার প্রশ্ন, “তুমি বাবার ছবি তুলেছ? কোথায় পেলে বাবাকে?”

আগামী বুধবার অসীমবাবুর ছোট ভাই অনুপের মেয়ের অন্নপ্রাশন হওয়ার কথা ছিল। তা নিয়ে অসীমবাবুরই উৎসাহ ছিল সবচেয়ে বেশি। মালতীদেবী বলছিলেন, “আমার বড় ছেলেই অনেককে নিমন্ত্রণ করেছিল। সে-ই আর ভাইঝির ভাত খাওয়া দেখে যেতে পারল না!” অভিযুক্ত কেদার দাবি করেছিলেন, অসীমবাবুর উচ্চ রক্তচাপ ছিল। সে কারণেই ধাক্কাধাক্কির পরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিন মালতীদেবী বারবার বলেন, “আমার ছেলের কোনও অসুখ ছিল না। কখনও শুনিনি, ওর রক্তচাপ ছিল। খুনিরা ওকে রোগী সাজানোর চক্রান্ত করছে। আমি এর বিহিত চাই।”

বাড়িতেই একটি ঘরে যন্ত্রপাতি এনে কাজ করতেন অসীমবাবু। প্রতিবেশীরা জানান, ওই ঘর থেকে নানারকম যন্ত্রের আওয়াজ পেলেই অর্ক বুঝত, বাবা বাড়িতে আছে। রবিবার মাঝেমধ্যেই সে ওই ঘরে গিয়ে উঁকি দিয়েছে। কিন্তু বাবার দেখা নেই।

সকালে কী খেয়েছো? আধো গলায় উত্তর আসে, “দুধ আর চিঁড়ে।” তার পরেই পাল্টা প্রশ্ন, “কিন্তু আমার বাবা গেল কোথায়?”

নিরুত্তর সবাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE