Advertisement
E-Paper

ধান চাষে বড় ক্ষতি, আশঙ্কা

গত কয়েক দিন লাগাতার বৃষ্টিতে নদী, বিল কাঁদর উপচে জলে ডুবেছে কৃষি জমি। আর তাতেই ধান চাষে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা করছে জেলা কৃষি দফতর। জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে ধানের চারা রোপণ করার পরে জেলা জুড়ে ১৮ হাজার হেক্টর ধানখেত এবং ৫ হাজার হেক্টর বীজতলা জলের তলায় ডুবে গিয়েছিল।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০০:৫২

গত কয়েক দিন লাগাতার বৃষ্টিতে নদী, বিল কাঁদর উপচে জলে ডুবেছে কৃষি জমি। আর তাতেই ধান চাষে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা করছে জেলা কৃষি দফতর।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে ধানের চারা রোপণ করার পরে জেলা জুড়ে ১৮ হাজার হেক্টর ধানখেত এবং ৫ হাজার হেক্টর বীজতলা জলের তলায় ডুবে গিয়েছিল। রবিবার সে ভাবে বৃষ্টি না হলেও এখনও বহু জমিতে জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই অবস্থার উন্নতি না ঘটলে ক্ষতি অবসম্ভাবী, মত জেলা কৃষি আধিকারিকদের। শুধু ধান চাষই নয়, মার খেয়েছে সব্জি চাষও। জেলা উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রদীপ মণ্ডল বলছেন, ‘‘ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কত হবে, সেটা জানতে আরও কয়েকটা দিন প্রয়োজন। তবে, সদ্য রোওয়া ধানচারার উপরে কাদা জল জমলে ক্ষতি হবেই। আর বীজতলা জলে ডুবে থাকলে চারা মরে যাবে। সে ক্ষেত্রে কৃষিজমিতে ধান রোওয়ার জন্য চারার ঘাটতি পড়বে।’’

দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরের হিসাব ধরলে জুলাই মাসের শেষ ভাগে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার মূলে রয়েছে স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত। জেলা সহ-কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল বলেন, ‘‘আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ৩২৪.২ মিলিমিটার। সেখানে শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের গড় ৫৮২.৪৬ মিলিমিটার। তবে, রামপুরহাট মহকুমার তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে সিউড়ি ও বোলপুর মহকুমায়।’’ তিনি জানান, রামপুরহাটে বৃষ্টি হয়েছে ৩০৪.৫ মিলিমিটার। বোলপুরে হয়েছে ৭৪৮.৪ মিলিমিটার। খুব পিছিয়ে নেই সিউড়ি মহকুমাও। সেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৯৪.৬৭ মিলিমিটার। অমরবাবু জানিয়েছেন, রবিবার পর্যন্ত জেলায় ৫১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৭৫টি মৌজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর এসেছে। তার মধ্যে ক্ষতি পরিমাণ সব থেকে বেশি বোলপুর মহকুমার লাভপুর, নানুর, ইলামবাজার ও বোলপুর ব্লকেই। ধানের জমি এবং বীজতলা জলমগ্ন হয়েছে ৪১টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। সিউড়ি মহকুমার মহম্মদবাজার, সাঁইথিয়া, সিউড়ি ১ ও ২, খয়রাশোল— এই সব ব্লকগুলি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কোথাও কুঁয়ে নদী, কোথাও ব্রাহ্মণী, বক্রেশ্বর বা কূশকর্ণিকা নদীর জলে, কোথাও আবার কাঁদর বা বিল থেকে জল উপচে ভেসে গিয়েছে ধানখেত। লাভপুর ব্লকের থীবা পঞ্চায়েতের কাঁদরকুলা, বলরামপুর, থীবা, রামঘাঁটি মিরিটি কিংবা জামনা পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণীগ্রাম, রামকৃষ্ণপুর, মামুদপুর, নানুরের বড়া, চণ্ডীপুর, মোহনপুর, সাওতা অথবা মহম্মদবাজার ব্লকের পুরাতনগ্রাম, বাতাসপুর, জয়রামপুর বা কাপিষ্টা, আঙ্গারগড়িয়া— সকল জায়গায় চাষিদের একই সমস্যা। ক্ষতিগ্রস্ত চাষি সুবীর মণ্ডল, বিশ্বজিৎ ঘোষ, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, সনাতন সামাত, হুমায়ুন শেখ, সামসিল হোদা, উজ্জ্বল শেখ বা আহ্লাদ মণ্ডলরা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই জুন মাসে বৃষ্টি ঠিক মতো হচ্ছিল না। সেই অভিজ্ঞতার জন্য অনেকেই বীজতলা তৈরি করতে দেরি করেছেন। জুন মাসের শেষ থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলেও তাই চাষ শুরু করতে একটু সময়ও নিয়েছেন। কেউ কেউ সবে ধান রোয়ার কাজ শুরু করেছেন বা শেষ করেছেন। আবার অনেকেরই বীজতলা তৈরি হয়েছে সবে। ওই চাষিরা বলছেন, ‘‘এই সময় এত বৃষ্টি খেত ভাসিয়ে দেওয়ায় অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের। জমি তৈরির খরচ, সার, অনুখাদ্যের জন্য যা খরচ করার, সে তো করা হয়েছে। জল নেমে যাওয়ার পর ওই জমিতে ধান পুঁততে হলেও আবার খরচ বহন করতে হবে চাষ করার জন্য।’’ তাতেও সমস্যা মিটবে না বলেই মনে করছেন ওই চাষিরা।

এই পরিস্থিতিতে নতুন করে বীজতলা তৈরির সুযোগ আর আছে কি? প্রদীপবাবু বলছেন, ‘‘এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে স্বল্প সময়ে ধান চাষে যে বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে বা যে প্রাজাতির বীজ রয়েছে, সেগুলি ব্যবহারে চাষিদের পরামর্শ দেবে কৃষি দফতর। এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।’’

rain Farmer paddy crop luvpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy