Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

অ্যাজোলা সার ও গোখাদ্য

অ্যাজোলা ভাসমান জলজ ফার্ন যার পাতায় অ্যানাবিনা, নস্টক জাতীয় মিথোজীবী নীলাভ সবুজ শ্যাওলা বাস করে, যা বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন শোষণ করে। শোষণের হার বিঘা প্রতি ৪-৫ কেজি যা ৯-১১ কেজি ইউরিয়ার সমান। এখানকার পরিবেশে অ্যাজোলা পিনাটা, অ্যাজোলা মাইক্রোফিলা টিকতে পারে।চাষি-বন্ধুরা বর্ষার ধান চাষের আগে সাধারণত ধইঞ্চা, শন প্রভৃতি বুনতে অভ্যস্ত ছিলেন। ওই সব সবুজ সারের বয়স দেড়-দু’মাসের মাথায় মাটির সঙ্গে মাড়িয়ে দিতে হয়।

সুব্রত মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০১
Share: Save:

সার অ্যাজোলার গুরুত্ব

চাষি-বন্ধুরা বর্ষার ধান চাষের আগে সাধারণত ধইঞ্চা, শন প্রভৃতি বুনতে অভ্যস্ত ছিলেন। ওই সব সবুজ সারের বয়স দেড়-দু’মাসের মাথায় মাটির সঙ্গে মাড়িয়ে দিতে হয়। পচানোর জন্য এই সময়ে প্রচুর জলের দরকার। অনিয়মিত বর্ষায় সব সময়ে ধইঞ্চা মাড়ানো ও পচানো সম্ভব না হওয়ায় চাষিরা উৎসাহ হারাচ্ছেন। অন্য দিকে ধান চাষের মাস খানেক আগে জলকাদা জমিতে বিঘা প্রতি ৪-৫ কেজি অ্যাজোলা ছড়িয়ে দিলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে গোটা জমি সবুজে ঢেকে যাবে। এর পরে এক বার চাষ দিলে ৫-৬ দিনের মধ্যে তা পচে গিয়ে বিঘা প্রতি ১০০-১২৫ টন সবুজ সার ও ৪-৫ কেজি নাইট্রোজেন সরাসরি মাটিতে যোগ করবে। গোবর সারের বিকল্প হিসাবে এটি সুস্থায়ী কৃষির উল্লেখযোগ্য স্তম্ভ। ধান পোঁতার দিন দশক পরে জমিতে অ্যাজোলা ছেড়ে দিলে ধানের বৃদ্ধি ভাল হয়। তা বেশ কিছু উদ্ভিদ হরমোন ও ভিটামিন জমিতে যোগ করে ও নানা অনুখাদ্য গাছের গ্রহণযোগ্য করে তোলে, অন্য আগাছার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। অন্য ফসলে এ সার প্রয়োগে সুফল মেলে।

গোখাদ্য অ্যাজোলার গুরুত্ব

সবুজ গোখাদ্য হিসাবে অ্যাজোলা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর কারণ অন্য সবুজ গোখাদ্যের তুলনায় এটিতে ফুড প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস বেশি। নানা সময়ে নানা পরীক্ষার পরে দেখা গিয়েছে, অ্যাজোলা খাওয়ানোয় মাস খানেকের মধ্যেই গরু-ছাগলের দুধের পরিমাণ বেড়েছে। গবাদিদের স্বাস্থ্যেরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এমনকী এর ব্যবহারে গবাদিদের বন্ধ্যাত্ব দূর করাও সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।

অ্যাজোলা তৈরির পদ্ধতি

আড়াই মিটার লম্বা ও দেড় মিটার চওড়া একটি চৌবাচ্চা তৈরি করতে হবে। যার গভীরতা হবে ২৫ সেমি। প্রথমে তাতে একটি পলিথিন পেতে বেড তৈরি করতে হবে। সেখানে ৩-৪ সেন্টিমিটার পুরু করে জমির মাটি ছড়িয়ে ধীরে ধীরে জল ভর্তি করতে হবে ১০ সেমি পর্যন্ত। এর পরে ৪-৫ দিনের পুরনো গোবর ও ২০-২৫ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট ওই জলের সঙ্গে গুলে রাখুন। পরের দিন ২০০ গ্রামের মতো অ্যাজোলা বেডের উপরে ছড়িয়ে দিন। দিন সাতেকের মধ্যে বেড ভরে যাবে অ্যাজোলায়। বেড থেকে তুলে ভাল করে ধুয়ে গবাদিদের তা খাওয়ানো যেতে পারে বা সার হিসাবে দেওয়া যেতে পারে গাছে। অ্যাজোলা সংগ্রহ শুরু করার পর সাত দিন অন্তর বেডে ৫০০ গ্রাম পুরনো গোবর ও ১০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট দিতে হবে। ছ’মাস পরে নতুন বেড তৈরি করতে হবে ও প্রতি মাসে নতুন জল ভরতে হবে।

লেখক কৃষি বিশেষজ্ঞ, রথীন্দ্র কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র, বিশ্বভারতী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fertilizer fodder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE