Advertisement
E-Paper

সুরক্ষা-যন্ত্রে অনীহা মৎস্যজীবীদের

মাছ ধরতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছে গোলমাল করছিল একটি ট্রলারের ইঞ্জিন। ক্ষীণ মোবাইলের নেটওয়ার্কের মধ্যে ডাঙায় থাকা মালিককে সেটুকু খবরই শুধু জানাতে পেরেছিলেন ট্রলারের কর্মীরা।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও অপ্রমেয় দত্তগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৯

মাছ ধরতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছে গোলমাল করছিল একটি ট্রলারের ইঞ্জিন। ক্ষীণ মোবাইলের নেটওয়ার্কের মধ্যে ডাঙায় থাকা মালিককে সেটুকু খবরই শুধু জানাতে পেরেছিলেন ট্রলারের কর্মীরা। তার পর থেকে মোবাইলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন! খবর যায় উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাছে। ট্রলার থেকে আসা ফোনের কল রেকর্ড ঘেঁটে জলযানটির সম্ভাব্য অবস্থানও বের করেছিলেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর অফিসারেরা। আকাশপথে নজরদারি চালাতে গিয়ে মোবাইলের শেষ অবস্থান থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে ট্রলারটিকে ভাসতে দেখা যায়। সেটির ইঞ্জিন বিকল হয়েছিল।

উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা বলছেন, সমুদ্রে গিয়ে এমন বিপদে পড়া মৎস্যজীবীদের কাছে নতুন ঘটনা নয়। তাই বিপদবার্তা পাঠানোর নতুন যন্ত্র (ডিসট্রেস অ্যালার্ট ট্রান্সমিটার বা ডিএটি) বিলি করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ট্রলারটিকে খুঁজে পেতে এত বেগ পেতে হল কেন? উপকূলরক্ষী বাহিনীর ব্যাখ্যা, এ রাজ্যের বহু মৎস্যজীবীই ডিএটি ব্যবহার করছেন না। ফলে বিপদে পড়লে তাঁদের উদ্ধার করা অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

এই ব্যবস্থার উপযোগিতা কী, তা বোঝাতে গিয়ে আন্দামান সাগরের সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা শুনিয়েছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা। গত মাসের মাঝামাঝি আন্দামান সাগরে একটি পণ্যবাহী জলযান বিপদে পড়ে। উত্তাল সমুদ্রে ইঞ্জিনে জলও ঢুকতে শুরু করেছিল। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ডিএটি-র মাধ্যমে বিপদবার্তা পাঠান কর্মীরা। জলযানটির অবস্থান দেখে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে উদ্ধার করা হয় কর্মীদের। উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রথমেই নির্দিষ্ট ভাবে জলযানটির অবস্থান জানা না গেলে উদ্ধারে দেরি হতো। তাতে কর্মীদের বাঁচানো যেত কি না, সন্দেহ রয়েছে।’’

কতটা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রটি? উপকূলরক্ষী বাহিনীর কলকাতা সদর দফতরের মুখপাত্র ডেপুটি কম্যান্ডান্ট অভিনন্দন মিত্র বলেন, ‘‘সাগরে যে কোনও সময়েই বিপদ ঘটতে পারে। তাই সুরক্ষার জন্যই মৎস্যজীবীদের এই যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত। অনেক সময় জীবন ও মৃত্যুর ফারাক গড়ে দিতে পারে যন্ত্রটি।’’

তা হলে মৎস্যজীবীরা এই যন্ত্র ব্যবহার করছেন না কেন? বাহিনীর অনেকে বলছেন, এই যন্ত্র ব্যবহার করলে সাগরে নৌকোর নির্দিষ্ট অবস্থান প্রশাসন জেনে যাবে এমন ধারণা মৎস্যজীবীদের রয়েছে। তার উপরে অনেক সময়ই মৎস্যজীবীদের একাংশ সংরক্ষিত এবং নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ ধরতে চলে যান। ফলে জিপিএস প্রযুক্তির এই যন্ত্রে বিপদবার্তা পাঠালে সেই গতিবিধিও ফাঁস হয়ে যেতে পারে। তাই হয়তো এটি ব্যবহারে আগ্রহ নেই তাঁদের।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ দেবব্রত দাস আবার বলছেন, এই যন্ত্র সম্পর্কে ওই জেলার মৎস্যজীবীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ছিল না। ভুল বোতাম টিপে উল্টোপাল্টা সঙ্কেত চলে আসার আশঙ্কা ছিল। সম্প্রতি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ৫০০টি ট্রান্সমিটার বিলি হয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। তাই ফের ১২০০ ট্রান্সমিটার দিয়েছে বাহিনী। সেগুলির প্রায় সব ক’টিই বিলি হয়েছে। যন্ত্র নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বাংলা ভাষায় হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে বিলিও করা হয়েছে।

সব মৎস্যজীবী যে এই যন্ত্র ব্যবহার করছেন না, তা মেনে নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ মানবেন্দ্র হালদার বলছেন, ‘‘জেলা প্রশাসন সচেতনতা চালিয়েছে। তবু অনেকে এটা ব্যবহার করছেন না। ফের মৎস্যজীবীদের বৈঠকে ডাকা হবে। যন্ত্র ব্যবহারে যে আখেরে তাঁদেরই লাভ, তা-ও বোঝানো হবে।

Fisherman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy