Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দক্ষিণবঙ্গে আরও ঘোরালো বন্যা পরিস্থিতি

জেলায় জেলায় অবিরাম বৃষ্টিতে ক্রমেই ঘোরালো হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নিম্নচাপের ভ্রূকুটি। ফলে এখনই রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আশা কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গাইঘাটা, হাওড়া, আরামবাগ থেকে শুরু করে দুই মেদিনীপুর বা বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা— ভারী বর্ষণের জেরে প্লাবিত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। সোমবার সকালেও একনাগাড়ে বৃষ্টির জেরে পরিস্থিতির সামান্যতম উন্নতি হয়নি।

বর্ধমানের জলমগ্ন এলাকা। —নিজস্ব চিত্র।

বর্ধমানের জলমগ্ন এলাকা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ১৫:২৮
Share: Save:

জেলায় জেলায় অবিরাম বৃষ্টিতে ক্রমেই ঘোরালো হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নিম্নচাপের ভ্রূকুটি। ফলে এখনই রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আশা কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গাইঘাটা, হাওড়া, আরামবাগ থেকে শুরু করে দুই মেদিনীপুর বা বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা— ভারী বর্ষণের জেরে প্লাবিত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। সোমবার সকালেও একনাগাড়ে বৃষ্টির জেরে পরিস্থিতির সামান্যতম উন্নতি হয়নি।

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমার গাইঘাটা ব্লকে এ দিন সকাল থেকেই প্রবল বর্ষণ হচ্ছে। আসলে অবিরাম বর্ষণ চলছে গত কয়েক দিন ধরেই। এর জেরে জলমগ্ন হয়েছে বহু বাড়িঘর। বৃষ্টির জমা জল তো ছিলই। এ বার ইছামতী ও যযুনা নদীর জল উল্টে এলাকার খাল-বিল-বাঁওর হয়ে লোকায়লে ঢুকে পড়ে গাইঘাটার বিস্তৃীর্ণ এলাকা প্লাবিত হল। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই ব্লকের রামনগর, সুটিয়া, শিমুলিয়া, ঝাউডাঙা, জলেশ্বর-১, জলেশ্বর-২ এবং ইছাপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কোথাও সড়ক জলের তলায় কোথাও বা বাজার-বাসস্ট্যান্ড জলের তলায় চলে গিয়েছে। ব্লকের বেশিরভাগ খেত এখন নদীর আকার নিয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্লকের প্রাথমিক ও হাইস্কুলে ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। ত্রাণশিবিরের বাইরেও বহু মানুষ রাস্তায়, সেতুর উপর বা পরিচিতদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ত্রাণ না মেলায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বানভাসিদের মধ্যে। প্রশাসন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত এলাকায় ১৭টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। বিডিও পার্থ মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ছ’শোটির মতো ত্রিপল ও পঞ্চাশ ক্যুইন্টাল চাল বিলি করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ষোল হাজার।’’

যদিও জলবন্দি মানুষের সঠিক হিসেব আপাতত প্রশাসনের কাছেও নেই। কারণ, প্রতি মুহূর্তেই জলবন্দি মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

অন্য দিকে, দামোদরের জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে গেলেও ডিভিসি সোমবার সকাল থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দারা। গত শনিবার ৫৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ তা উদয়নারায়ণপুরের উপর দিয়ে বয়ে যায়। সোমবার সকাল থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে ডিভিসি। এ দিন ৩৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। এতে কোনও বিপদ হবে না বলে জানিয়েছেন সেচ দফতরের কর্তারা। তবুও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে উদয়নারায়ণপুরের কুর্চি-শিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুর্চি শাসমলপাড়া এবং পালপাড়ায় দামোদরের বাঁধের নিচু অংশে বালি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। একই কাজ করা হচ্ছে রামপুরেও।

জলমগ্ন কেতুগ্রামের আনখোনা।

গাইঘাটার মতো প্রায় একই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমায়। এমনিতে এখানে সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে, সৃষ্টি হয় বন্যা পরিস্থিতির। গত কয়েক দিন ধরেই এখানে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছে ঘাটাল। এ দিন সকালেও সে চিত্রনাট্যে পরিবর্তন ঘটেনি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পাশের দুই জেলা বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় প্রবল বর্ষণ। ফলে ঘাটালের কংসাবতী ও শিলাবতী নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে। বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলেও জল বাড়ছে ঘাটালের বিভিন্ন খালবিল-নদীনালায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, মেদিনীপুর সদর মহকুমা-সহ গড়বেতা ৩ (চন্দ্রকোণা রোড)-এ রবিবার রাতের প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে বহুসংখ্যাক মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। কেবলমাত্র চন্দ্রকোণাতেই শতাধিক বাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। চন্দ্রকোণা রোড-সহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বহু জায়গায় ডুবে গিয়েছে আঁধারে। উপড়ে পড়েছে বহু সংখ্যক বড় বড় গাছ। এর মধ্যে সাত বাঁকুড়া ও কড়সা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বর্ধমানের অবস্থাও প্রায় একই। বিপদসীমার কাছাকাছি বইছে ভাগীরথী নদী ও অজয় নদ। টানা বৃষ্টিতে আপাতত বন্ধ কেতুগ্রামের ফেরি চলাচল। খোনা গ্রাম পঞ্চায়েতের আটটি গ্রাম জলের তলায় জুবে গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।

এক দিকে দামোদর এবং মুন্ডেশ্বরী নদী দিয়ে ডিভিসি-র ছাড়া জল, অন্য দিকে গত দু’দিনের টানা বৃষ্টি—এই দুইয়ের প্রভাবে আরামবাগ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার চেহারা নিয়েছে, খানাকুলের দু’টি ব্লক-সহ পুড়শুড়া এবং আরামবাগ ব্লকের অংশবিশেষে জমির উপরে প্রায় তিন ফুট জল জমেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসনগুলি সূত্রের খবর, নদীগুলির মাথায় মাথায় জল থাকায় বৃষ্টির জমা জলও নদীতে নামছে না, উল্টে নদীর জল বিভিন্ন খালের সংযোগমুখ দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে মাঠে। এই অতিরিক্ত বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পুড়শুড়া এবং খানাকুলের দু’টি ব্লকের অনেক জায়গায় স্লুইস গেটও বন্ধ রাখা হয়েছে। তার জেরে মাঠের জমা জল নামার পথও অনেক জায়গায় বন্ধ। সদ্য রোপন করা আমন ধান-সব্জি জলের তলায়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষিজীবীরা। ইতিমধ্যেই শুধু পুড়শুড়াতে ডিহিবাতপুর পঞ্চায়েত, কেলেপাড়া পঞ্চায়েত এবং ভাঙ্গামোড়া পঞ্চায়েতের সদ্য আমন ধান রোপন করা প্রায় ১৬০০ হেক্টর জমি তিন ফুট জলের তলায়। আরও খারাপ পরিস্থিতি খানাকুল-২ নম্বর ব্লকে। সেখানের ১১টি পঞ্চায়েত এলাকার ৫৩টি মৌজার সবক’টিই জলমগ্ন।

আরামবাগ মহকুমা শাসক প্রতুলকুমার বসু বলেন, “নতুন করে ডিভিসি-র জল ছাড়ার কোন খবর নেই, বৃষ্টিপাতও কমেছে, মাঠে জমা জল ধীরে হলেও নামছে। ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Flood situation South Bengal rain storm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE