জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ভেসে গিয়েছে কাঁটাতারও। প্রাণ বাঁচাতে ও পারে ডাঙার খোঁজে এ পারের মানুষ।
সংখ্যায় নেহাত কমও নন তাঁরা। দিনহাটার জারিধরলা ও দরিবসের প্রায় হাজার চারেক বাসিন্দা আশ্রয়ের সন্ধানে এখন সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের মোগলহাটে। দুর্দিনে তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
টানা বর্ষণের জেরে ধরলা নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে দিনহাটার গীতালদহ ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০টিরও বেশি গ্রাম। গৃহহারা কুড়ি হাজারের বেশি মানুষ। জারিধরলা ও দরিবস সীমান্তবর্তী হলেও কাঁটাতার নেই এখানে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, বছরভরই তাঁদের নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশের উপর। হাট বাজার করা, এমনকী রাতে কেউ অসুস্থ হলেও তাঁকে বাংলাদেশের মোগলহাটে নিয়ে যান তাঁরা। যাতায়াতে তেমন কোনও বাধা দেয় না বিজিবি। ছাড় দেয় বিএসএফ-ও। তাই রবিবার রাতে যখন ফুঁসে ওঠে নদী, তখন প্রাণ বাঁচাতে সে দেশেই চলে গিয়েছেন বহু মানুষ।
সোমবার বিএসএফের স্পিড বোটে চেপে দিনহাটার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জারিধরলা ও দরিবস পরিদর্শনে যান রবীন্দ্রনাথবাবু। যদিও গ্রামের ভিতরে পৌঁছতে পারেননি তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘‘জল এমন ভাবে বেড়ে গিয়েছে যাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া মানুষের আর কিছু করার ছিল না। বাংলাদেশ সরকারকে আমরা এ জন্য ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।” এ দিন নৌকায় চেপে মন্ত্রী গীতালদহের ভোরামপয়েস্তি গ্রামে যান। সেখানে পাঁচশোরও বেশি মানুষ বাঁধের উপরে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।
কোচবিহারে জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “আমরা এলাকার দু’হাজার মানুষকে উদ্ধার করি। বাকিদের অনেকে বাংলাদেশ গিয়েছেন। পুরো তথ্য আমাদের হাতে নেই।”
এ দিকে উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন একাধিকবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে ফোন করে খোঁজখবর করেন তিনি। উত্তরবঙ্গের জলবন্দি বাসিন্দাদের সবরকম সহযোগিতার নির্দেশ দেন। টানা বৃষ্টিতে ঘোরালো হয়ে উঠেছে উত্তরের কয়েকটি জেলার পরিস্থিতি। মালদহে ফুলহারের জলস্তর না কমায় এখনও জলবন্দি হয়ে রয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ার ১৬টি এলাকার বাসিন্দারা। আলিপুরদুয়ারের কালজানি নদীতে লাল সঙ্কেত জারি হয়েছে। তিস্তা, তোর্সার জলস্ফীতিতে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন।
সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের অন্তত ১০ হাজার পরিবার বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং জেলায় ৪০০টির বেশি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার মানুষ। রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, ফোন করে মুখ্যমন্ত্রী সামগ্রিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়েছেন। জেলাশাসকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোচবিহার জেলার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উদ্ধার ও ত্রাণের কাজ চলছে।
এ দিন, জলপাইগুড়ির কাছে পাঙ্গায় বিহারের বাসিন্দা সমীর দাস (২০) নামের এক যুবক নদীর জলে তলিয়ে যান। দিন কয়েক আগে তিনি মামার বাড়িতে এসেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামেও ব্রাহ্মণী নদীর বাঁধ ভেঙে নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।