Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আস্ত গ্রামই ত্রাণ শিবিরে

আমোদর নদের জলে ডুবে রয়েছে বাঁকুড়ার কোতুলপুর ব্লকের ব্রহ্মডাঙা গ্রাম। ওই গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই আশ্রয় নিয়েছেন ব্লক অফিস লাগোয়া সরকারি ত্রাণ শিবিরে। বাড়ির পোষ্য গবাদি পশুদের ফেলে রেখে ত্রাণ শিবিরে যেতে পারেননি শুধু গুটিকয়েক মানুষ।

দুর্গত এই শিশুও। কোতুলপুর ব্লক অফিসের ত্রাণ শিবিরে ব্রহ্মডাঙার বাসিন্দারা।

দুর্গত এই শিশুও। কোতুলপুর ব্লক অফিসের ত্রাণ শিবিরে ব্রহ্মডাঙার বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোতুলপুর শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০১:৪৭
Share: Save:

আমোদর নদের জলে ডুবে রয়েছে বাঁকুড়ার কোতুলপুর ব্লকের ব্রহ্মডাঙা গ্রাম। ওই গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই আশ্রয় নিয়েছেন ব্লক অফিস লাগোয়া সরকারি ত্রাণ শিবিরে। বাড়ির পোষ্য গবাদি পশুদের ফেলে রেখে ত্রাণ শিবিরে যেতে পারেননি শুধু গুটিকয়েক মানুষ।

শুক্রবার রাতে গ্রাম ঘিরে ফেলে আমোদর। সেই রাতের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে রবিবার ত্রাণ শিবিরে কেঁদে ফেললেন ব্রহ্মডাঙার বিমল সাঁতরা। বললেন, “রাত বাড়তে বাড়তেই হাঁটু সমান জল হয়ে গেল গ্রামে। রবিবার সকালে এক কোমর। আর অপেক্ষা না করে ছেলে-বউকে নিয়ে সব ফেলে জল ঠেঙিয়ে হাঁটা দিলাম। দুপুর নাগাদ পৌঁছলাম ব্লক অফিসের ত্রাণ শিবিরে। যে-ভাবে জল বাড়ছিল, আর কিছুক্ষণ থেকে গেলে সপরিবার ভেসেই যেতাম।’’ একই সঙ্গে সব ফেলে বিমলবাবুদের সঙ্গে এসেছেন গ্রামের হারাধন মিদ্যা। তাঁর বৃদ্ধা মা জল ভেঙে আসতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হারাধনবাবুর কথায়, “এই ত্রাণ শিবির থেকেই গোগড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করতে হয়েছে মাকে। ত্রাণ শিবিরে সকালে গুড় আর চিঁড়েমুড়ি, দুপুরে খিচুড়ি খেয়ে মাকে দেখতে ছুটতে হচ্ছে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।’’ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা, ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বিদ্যুৎ মিদ্যা বলেন, “জল দেখতে দেখতে প্রায় এক মানুষ সমান হয়ে গেল। পুরো গ্রাম ভেঙে চলে আস্তে বাধ্য হলাম আমরা। গুটিকয়েক লোক এখনও নিজেদের গবাদি পশুদের বাঁচাতে বিপদের ঝুঁকি নিয়েই গ্রামে থেকে গিয়েছে। এখান থেকে তাঁদের খাবার পৌঁছনো হচ্ছে খুব কষ্ট করে।’’

ব্রহ্মডাঙা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পড়ে মৃণাল সাঁতরা। মুখ কালো করে এ দিন শিবিরে ঘুরতে ঘুরতে সে বলে, “বাড়ির জিনিসপত্রের সঙ্গে বইপত্রও ভেসেছে। ঘরে ফেরার পর সে-সব আবার জোগাড় করতে হবে।’’ একই সমস্যার কথা জানালেন ওই গ্রামের কলেজ পড়ুয়া দীপঙ্কর মিদ্যা। কামারপুকুর কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্র বলেন, “বাড়িতে জল ঢোকায় পড়ার বইপত্রও নষ্ট হয়েছে। জানি না কী ভাবে সমস্যা সামলাবো।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শিবিরে যে ৩৫০ জন আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই ব্রহ্মডাঙার বাসিন্দা।

চেষ্টা করেও বালিঠ্যা গ্রামে নিয়ে যাওয়া গেল না স্পিডবোট।

বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত এ দিন জানিয়েছেন, মহকুমায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোতুলপুর ব্লক। সে কারণে এই ব্লকেই খোলা হয়েছে ২১টি ত্রাণ শিবির। এ ছাড়া জয়পুরে তিনটি ত্রাণ শিবির চলছে। কোতুলপুরের গোপীনাথপুর সরোজবাসিনী স্কুলে একটি ত্রাণ শিবির খুলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এলাকার কিছু দুর্গতকে। যদিও তাঁদের ক্ষোভ, শনিবার রাতে শিবিরে এসে কোনও খাবার মেলেনি। রবিবার সকালেও মেলেনি টিফিন। রবিবার দুপুর থেকে রান্নার তোড়জোড় চলছে। ওই এলাকার সিহড় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও হলদিপুকুরিয়া প্রাথমিক স্কুলের ত্রাণ শিবিরে এদিন দুপুরে খিচুড়ি বিলি করে রামকৃষ্ণ মিশন। প্লাবিত এলাকায় ও ত্রাণ শিবিরে গিয়ে দুর্গত মানুষদের খোঁজ খবর নিয়েছেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খান ও কোতুলপুরের বিধায়ক শ্যামল সাঁতরা।

এ দিন কোতুলপুরে গিয়ে দেখা যায় বালিঠ্যা গ্রামে এখনও জলবন্দি রয়েছেন কিছু মানুষ। তাঁদের উদ্ধারের জন্য একটি স্পিড বোট নিয়ে যাওয়া হলেও আমোদরের জলে টান থাকায় সেটিকে কাজে লাগানো যায়নি। গ্রামের বাসিন্দা হারু রায়, রামু রায় বলেন, “আমোদরের জল ঢোকায় আমাদের গ্রামের ১৭টি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ঘুরপথে এ দিন সকালে কিছু শুকনো খাবার আমাদের পাঠানো হয়েছে। একটি বোট পাঠিয়ে প্রশাসন আমাদের নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে বলে শুনেছি। তবে জল নামতে থাকায় আমরা এ নিয়ে এখনই ভাবছি না।’’ মহকুমাশাসকও বলেন, “ওই পরিবারগুলিকে শিবিরে নিয়ে আসার তোড়জোড় চলছিল। তবে জল কমায় ওদের আগ্রহ তেমন নেই বলেই শুনছি। ওরা বাড়ি ছেড়ে আস্তে চাইলে নৌকো পাঠানোর ব্যবস্থা করা যাবে। ওই গ্রামে শুকনো খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে।’’

এ দিকে ডিভিসি জল ছাড়ায় দামোদর নদ তীরবর্তী সোনামুখী, পাত্রসায়র ও ইন্দাসের বিভিন্ন গ্রামে জল বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি দেখতে রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এ দিন সোনামুখীর বিধায়ক দীপালি সাহাকে সঙ্গে নিয়ে ওই অঞ্চল ঘুরে দেখেন। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুও এদিন কোতুলপুর-জয়পুরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

ছবি দু’টি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE