প্লেটলেট তিন হাজারের নীচে। শরীর অস্বাভাবিক ফুলে গিয়েছে। সঙ্গে প্যানক্রিয়াটাইটিস। দু’টি ফুসফুসেও সংক্রমণ এতটাই যে, স্বাভাবিক ভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছিল না মেয়ে।
মা আশা হারাতেই বসেছিলেন প্রায়। ডেঙ্গির মরসুমে যখন রোজ দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা, দশ বছরের আয়ুষি দত্তকে কিন্তু সুস্থ করে তুললেন চিকিৎসকেরা। মঙ্গলবার দুপুরে মায়ের হাত ধরে বাঁশদ্রোণীর সূর্যনগরে বাড়ি ফিরেছে সে।
আয়ুষির ক্ষেত্রে যা পারা গেল, অন্যদের বেলায় তা হচ্ছে না কেন? ডাক্তারদের মতে, বহু ক্ষেত্রেই অভিভাবকেরা যখন বাচ্চাকে নিয়ে আসছেন, তখনই অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। আয়ুষির চিকিৎসা যিনি করেছেন, সেই শিশুচিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘সব ক্ষেত্রে যে জ্বর আসতেই হবে তা নয়। এ বার অনেক ক্ষেত্রেই তাপমাত্রা বেশি উঠছে না। যদি সন্তানকে দেখে বোঝেন, সে কোনও অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে, তা হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। প্রয়োজনে ভর্তি করে দিন। টানা নজরদারি এবং ফ্লুইড খুব জরুরি।’’
শিশু চিকিৎসকেরা অনেকেই মনে করছেন, সঠিক সময়ে ফ্লুইড দেওয়া শুরু হয়েছিল বলেই বাঁচানো গিয়েছে আয়ুষিকে। তবে মাপ না বুঝে অতিরিক্ত জল খাওয়ানো যাতে না হয়, সে ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন তাঁরা। শিশু চিকিৎসক সুব্রত চক্রবর্তী মনে করেন, এনএস১ কিংবা আইজিএম পজিটিভ হল কি হল না, সেই নিয়ে অযথা বিতর্কের প্রয়োজন নেই। ক্লিনিক্যালি দেখেই যদি ডাক্তার মনে করেন ডেঙ্গি হয়েছে, তা হলেই দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা দরকার। যার প্রথম এবং প্রধান ধাপ, শরীরে প্রয়োজনীয় ফ্লুইড প্রবেশ করানো।
ঝুঁকির উপসর্গ
জ্বর, কিন্তু সর্দি-কাশি একেবারেই নেই
মুখ ফুলে যাওয়া
হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
মাথায়/পেটে/পিঠে ব্যথা
নাড়ির অস্বাভাবিক গতি
প্রস্রাবের পরিমাণ কম
জ্বর ছাড়ার পরেও খুব কাহিল
সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তটা চিকিৎসক নেবেন। যদি ডেঙ্গি না-ও হয়, স্যালাইন চালালে বড় কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু যদি ক্যাপিলারি লিকেজ শুরু হয়ে যায় এবং স্যালাইন না চালানো হয়, তা হলে পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।’’
আয়ুষির জ্বর এসেছিল ২৬ অক্টোবর। পরের দিনই তাকে যোধপুর পার্কের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে আসে ডেঙ্গি পজিটিভ। এর পরেই অবস্থার অবনতি শুরু হয়। প্লেটলেট নেমে হয় ৩০ হাজার। দ্রুত বাড়তে থাকে সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন অর্থাৎ সিআরপি। ওই হাসপাতালে শিশু বিভাগের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট না থাকায় আয়ুষিকে স্থানান্তরিত করা হয় পার্ক সার্কাসের একটি শিশু হাসপাতালে। তত ক্ষণে গোটা শরীর ফুলে গিয়েছে। ক্যাপিলারি লিকেজ শুরু হয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রস্রাব। পরীক্ষা করে দেখা যায়, প্লেটলেট তিন হাজারেরও নীচে নেমে গিয়েছে।
অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘খুব কঠিন লড়াই ছিল। রক্তচাপ, নাড়ির গতি একটানা নজরে রাখা হয়েছিল। পর্যাপ্ত ফ্লুইড দিয়ে ক্যাপিলারিগুলিকে স্বাভাবিক করা হয়। আমরা একসঙ্গে লড়ে মেয়েটিকে মায়ের কোলে ফেরাতে পেরেছি।’’ অপূর্ববাবুর মতে, নার্সদের ভূমিকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রোগীকে নিয়মিত নজরে রাখার কাজটা মূলত তাঁরাই করেন।
আয়ুষির মা পূবালি দত্ত পেশায় শিক্ষিকা। গত বছর ঠিক এমনই একটা সময়ে তিনি স্বামীকে হারিয়েছিলেন। পূবালি বলেন, ‘‘মেয়েটাকে দেখে মনে হয়েছিল, আশা নেই। ডাক্তারবাবুরা যে ওকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, সে জন্য ওঁদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy