Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ফুরিয়ে যাচ্ছে খাবার, এর পর কিছু জুটবে কি

৫ তারিখ সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ হ্যাভলক দ্বীপে পৌঁছেছিলাম। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে আড়াই ঘণ্টার ফেরি। হ্যাভলকের আকাশ ঝকঝকে। দিনটা রাধানগর বিচে ঘুরেই কাটালাম।

স্বাধীন চট্টোপাধ্যায়
হ্যাভলক দ্বীপ (আন্দামান) শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৯
Share: Save:

৫ তারিখ সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ হ্যাভলক দ্বীপে পৌঁছেছিলাম। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে আড়াই ঘণ্টার ফেরি। হ্যাভলকের আকাশ ঝকঝকে। দিনটা রাধানগর বিচে ঘুরেই কাটালাম। স্কুবা ডাইভিং, আন্ডার ওয়াটার সি-ওয়াকিং কখন করা যাবে, তা নিয়ে আমার আট বছরের মেয়ে সংভি ও স্ত্রী মমতা তখন ভীষণ উত্তেজিত। তখনও জানতাম না, কী দুঃস্বপ্ন অপেক্ষা করছে!

পরের দিন ভোর থেকে সেই যে ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি শুরু হয়েছে, থামার নাম নেই। আমাদের হোটেলটা সমুদ্রের কাছেই। সে কী গর্জন! সুনামির ভিডিওতে দেখেছিলাম, কী ভাবে সমুদ্রের কাছের হোটেলগুলো জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল। তেমন কিছু হবে না তো! হোটেলের ম্যানেজার অবশ্য ভরসা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃতির তাণ্ডবের কাছে তার মূল্য কতখানি! শুনছি, দুর্যোগ আরও বাড়বে। ৮-৯ তারিখের জন্য ‘চরম সতর্কতা’ জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। নতুন করে নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে।

বুধবার রাত থেকে হোটেল অন্ধকার। হ্যাভলকের সব কিছুই পোর্ট ব্লেয়ারের উপর নির্ভরশীল। সেখান থেকেই সব ধরনের খাবার আসে। ফেরি আসছে না। তাই খাবার সরবরাহও বন্ধ। মজুত করা পাউরুটি প্রায় শেষ। চাল, ডালও শেষ হয়ে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ব্রেকফাস্টে শুকনো তিন পিস
পাউরুটি দিয়েছিল। এ রকম চললে শুক্রবার সকাল থেকে ব্রেকফাস্ট মিলবে কি না সন্দেহ।

হাতে টাকা বলতে তো দু’হাজারের নোট। এখানে কে ভাঙিয়ে দেবে? হ্যাভলকে স্টেট ব্যাঙ্কের একটা এটিএম আছে। তার ঝাঁপ বন্ধ। হোটেলের সোয়াইপ মেশিন কাজ করছে না। এখানে পেট্রোল পাম্প নেই। ডিজেল-পেট্রোলও ফেরিতে আসে। টানা লোডশেডিংয়ের জন্য ৬ তারিখ থেকেই জেনারেটর চলছে। ম্যানেজার জানিয়েছেন, ডিজেলও শেষ। এখন তাই অন্ধকারই সঙ্গী। টিভি চলছে না। ইন্টারনেট বন্ধ। কোনও খবরও পাচ্ছি না। মোবাইল দেখাচ্ছে ৭ শতাংশ ব্যাটারির চার্জ বাকি। ফুরিয়ে গেলে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হবে।

গত দু’দিন ধরে সতেরো-আঠারো ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। কিন্তু আকাশ ভরসা দিচ্ছে না। ঝোড়ো হাওয়া চলছেই। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরেই আমাদের কলকাতায় ফেরার উড়ান ছিল। সেখান থেকে রাঁচী। টিকিট বাতিল করব, তারও উপায় নেই। শুনেছিলাম নৌসনা আমাদের উদ্ধার করতে আসছে। কিন্তু নতুন যে নিম্নচাপটা তৈরি হয়েছে, সে তো হ্যাভলকের কাছেই। এই উত্তাল সমুদ্রে জাহাজ আসা সম্ভব কি?

এখানে আসার আগে মেয়ে বার বার প্রশ্ন করত, ‘‘বাবা, আমরা কবে আন্দামান যাব?’’ হোটেলের অন্ধকার ঘরে বসেও সে প্রশ্ন করে চলেছে, ‘‘বাবা, কবে রাঁচী ফিরব?’’

*লেখক বেসরকারি সংস্থার কর্মী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Andaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE