Advertisement
০৫ মে ২০২৪

প্রয়াত প্রবীণ ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অশোক ঘোষ

প্রয়াত হলেন ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪। গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত প্রায় একমাস ধরে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গত কয়েক দিন ধরে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ২৫ মিনিট নাগাদ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ১৪:৫৭
Share: Save:

প্রয়াত হলেন ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪। গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত প্রায় একমাস ধরে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গত কয়েক দিন ধরে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ২৫ মিনিট নাগাদ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

১৯২১-এর ২ জুলাই অশোকবাবুর জন্ম। তাঁর পৈতৃক বাড়ি হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমায়। পরে ঘোষ পরিবার ওই জেলারই চুঁচুড়ায় বাড়ি করে উঠে আসে। অশোকবাবু ছিলেন ফরোয়ার্ড ব্লকের হোল-টাইমার সদস্য। বাড়ি ছেড়ে তিনি দলের কাজেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। থাকতেন দলেরই দেওয়া ঘরে। শুধু ভাইফোঁটার দিন চুঁচুড়ায় যেতেন, বোনের কাছে ফোঁটা নিতে। বাড়িতে যাতায়াত বলতে এটুকুই। গত বছরেও অসুস্থ শরীরে ফোঁটা নিতে গিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে তিনি কলকাতার কড়েয়া রোডে এক সরকারি আবাসনে থাকতেন। রাজ্যে তখন বামফ্রন্ট সরকার। তবে, নয়ের দশকের মাঝামাঝি সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-এর হেমন্ত বসু ভবন সংস্কারের পর থেকে ফরোয়ার্ড ব্লকের পার্টি অফিসের চার তলাতেই থাকতেন অকৃতদার অশোকবাবু। এ ছাড়া পুরুলিয়ার সুইসা-য় ‘সুভাষ আশ্রম’ আছে। ওই আশ্রমের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ ছিল তাঁর। যত দিন শরীর সুস্থ ছিল, বছরে এক বার করে সেখানে যেতেন। কয়েক দিন করে থাকতেনও।

রাজনৈতিক জীবনের একটা সময়ে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি, অযোধ্যা-- এই সব পিছিয়ে পড়া এলাকায় দিনের পর দিন থেকে প্রচুর কাজ করেছেন তিনি। ওই এলাকার সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ এতটাই বেশি ছিল যে, অন্তিম ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পরে তাঁর দেহ যেন সুইসা-র ওই আশ্রমে সমাধিস্থ করা হয়।

১৯৪৬ সাল থেকে আমৃত্যু ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য কমিটির সম্পাদক ছিলেন অশোকবাবু। এ রকম ভাবে কোনও একটা প্রতিষ্ঠিত দলের শীর্ষ পদে থেকে যাওয়ার নজির এ দেশে আর কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নেই। এমনকী, বিশ্ব রাজনীতিতেও বিরল।

পশ্চিমবঙ্গের বামেদের যে যুক্তফ্রন্টের রাজনীতি, তাতেও অশোকবাবুর ভূমিকা ছিল বিরাট। ছয়ের দশকে প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার এবং তার পরে ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠা দু’টি ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অন্যতম স্থপতি। প্রয়াত সিপিএম নেতা জ্যোতি বসুর সঙ্গে তাঁর অসম্ভব ভাল রাজনৈতিক তালমিল ছিল। জ্যোতিবাবুর মৃত্যুর পর থেকে যে কারণে প্রবীণতম নেতা হিসেবে বামফ্রন্টে তাঁর গুরুত্ব ছিল। ১৯৭৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ফরোয়ার্ড ব্লক টানা বামফ্রন্টের শরিক হিসেবে মন্ত্রিসভায় ছিল। কিন্তু, অশোকবাবুর নেতৃত্বে বেশ কয়েক বার ফরোয়ার্ড ব্লক বামফ্রন্টের মধ্যে থেকেই বিদ্রোহ করেছে। আবার অশোকবাবুই উদ্যোগী হয়ে সেই বিবাদ মিটিয়েছেন।

যেমন, বুদ্ধদেববাবুর সরকার যখন খুচরো ব্যবসায় ‘মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’র মতো বহুজাতিক সংস্থাকে ছাড়পত্র দিতে গিয়েছিল, অশোকবাবু তখন মন্ত্রিসভা থেকে ফব-র সব সদস্যকে প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়েছিলেন। পরে, ফরোয়ার্ড ব্লকের চাপেই মেট্রোকে খুচরোর বদলে পাইকারি ব্যাবসার লাইসেন্স দিয়ে রফা করেছিল সিপিএম।

নন্দীগ্রামে যখন তৃণমূল এবং সিপিএমের মধ্যে প্রবল সংঘর্ষ চলছে, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলোচনার টেবিলে হাজির করার জন্য অশোকবাবুর উদ্যোগে সর্বদল শান্তি বৈঠক হয়েছিল। নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুরে আলাদা করে সভা করে অশোকবাবু ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর দল সিমিএমের সঙ্গে একমত নয়। পরে অবশ্য ফব লোকসভা এবং বিধানসভায় বামফ্রন্টের শরিক হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।

এ ছাড়া তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি— তিনি ছিলেন এই তত্ত্বের প্রবল প্রবক্তা। তার জন্য কংগ্রেস, সিপিএম বা যখন যার সঙ্গেই প্রয়োজন হয়েছে, সংঘাতে জড়াতে দ্বিধা করেননি অশোকবাবু। মনোজ মুখোপাধ্যায় কমিশন যখন রিপোর্ট দিল যে, তাইহোকুতে ওই দিন এ রকম কোনও দুর্ঘটনাই ঘটেনি, সেই রিপোর্ট কেন কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার গ্রহণ করবে না, তা নিয়ে বামফ্রন্টের মধ্যে প্রবল হইচই বাধিয়েছিলেন অশোকবাবুরা।

অসুস্থ শরীর নিয়ে কেন তিনি দলের শীর্ষ পদে আছেন, তা নিয়ে শেষের কয়েক বছর দলের অন্দরে বেশ জলঘোলা হয়েছে। কিন্তু, ফব-এর এখনকার নেতৃত্বের অনেকেই তাঁর হাত ধরে দলে এসেছিলেন। সকলেই প্রায় তাঁর হাতে গড়া। কাজেই পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যায়নি।

শেষ কয়েক বছরে প্রতি জন্মদিনে ফব-র অফিসে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে অশোকবাবুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসতেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অশোকবাবুও স্নেহবশত মমতা সম্পর্কে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। যা নিয়ে দলের এবং বামফ্রন্টের অস্বস্তি হয়েছে। কিন্তু, অশোকবাবু বরাবরই বলেছেন, ব্যক্তিগত সৌজন্যের সঙ্গে রাজনীতিকে মিলিয়ে ফেলাটা ঠিক নয়।

আরও পড়ুন...

নেতাজিকে নিয়ে টানাটানি দেখে লজ্জা করে আজকাল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ashoke ghosh forward bloc leader passed away
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE