ফুলটুসি রায়। —নিজস্ব চিত্র
নথির খোঁজ নেই। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ দেওয়ার পরে বছর ঘুরে গেলেও তাই একটি খুনের পুনর্বিচারের মামলা শুরু করা যাচ্ছে না জঙ্গিপুর আদালতে।
নথি উধাওয়ের সমস্ত ঘটনা লিখিতভাবে জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে আর্জি জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদের সুতির বামুয়া গ্রামের বছর পঞ্চাশের ফুলটুসি রায়। প্রধান বিচারপতির নির্দেশের অপেক্ষায় এখন ফুলটুসি।
২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দিন দুপুরে ছোট ছেলেদের মধ্যে গুলি খেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামেরই জনা বারো পড়শি যুবক ফুলটুসির স্বামী শঙ্কর রায়কে ঘিরে ধরে। তার পরে বোমা আর হাঁসুয়ার কোপে ছিন্ন ভিন্ন করে পেলে তাঁকে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর জখম হন তার তিন আত্মীয়ও। ধৃতদের গ্রেফতার করে আদালতে খুনের ধারায় চার্জশিটও দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০১০ সালের ৩১ মে জঙ্গিপুরের দ্বিতীয় ফাস্ট ট্রাক আদালতের তৎকালীন জেলা ও দায়রা বিচারক অভিযুক্ত ১২ জনকেই বেকসুর খালাস করে দেন।
ফুলটুসির অভিযোগ, ‘‘সবার চোখের সামনে বোমা নিয়ে হামলা হল স্বামীর উপর। ময়না তদন্তের রিপোর্টেও বোমার আঘাতের কথা বলা হল, তা সত্বেও জঙ্গিপুরের সংশ্লিষ্ট আদালতে ওরা খালাস পেয়ে গেল।’’
তবে, হাল ছাড়েননি ফুলটুসি। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সটান কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন এক সপ্তাহেপর মধ্যেই। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে হাইকোর্টে একাধিক শুনানির হয় মামলার।
ফুলটুসি বলেন, “মাত্র বিঘে চারেক জমি। দুই নাবালক ছেলে। কীভাবে দিন চলেছে আমিই জানি। তবু জমি বিক্রি করে স্বামীর খুনের বিচারের জন্য হাইকোর্টে ছুটে চলেছি।”
শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর নির্দেশ দেন— জঙ্গিপুরের দ্বিতীয় ফাস্ট ট্রাক আদালতের বিচারে একাধিক অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে জঙ্গিপুরের সংশ্লিষ্ট আদালতকে শঙ্কর রায় হত্যা মামলার পুনর্বিচারের নির্দেশ দেন।
ফুলটুসির জঙ্গিপুর আদালতের আইনজীবী সোমনাথ চৌধুরী বলেন, “হাইকোর্টে মামলা হওয়ায় জঙ্গিপুর আদালত থেকে মামলার যাবতীয় নথি পাঠানো হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। হাইকোর্টের রায় সহ মামলার সমস্ত নথি ২০১৫ সালে ৩৯৯সি আর(১) মেমোতে জঙ্গিপুর আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
কিন্তু জঙ্গিপুর আদালতে বহুবার খোঁজ নেওয়ার পরে শেষতক ফুলটুসি জানতে পারেন, হাইকোর্ট থেকে এক বছর আগে পাঠানো মামলার নথি বা রায় কোনোটাই তাদের কাছে পৌঁছয়নি। আর তাই, হাইকোর্টে নির্দেশ কার্যকরী করে বিচারই শুরু করা যায়নি।
ওই আদালতের সরকারি আইনজীবী বামনদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “সেই নথি জঙ্গিপুর আদালতে আসেনি এটুকু বলতে পারি। তাই পুনর্বিচার শুরু হচ্ছে না।’’
এই খুনের মামলায় অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অশোক সাহা। তিনি বলেন, “হাইকোর্টের পুনর্বিচারের নির্দেশ দেওয়ার কথা আমরা জানি। কিন্তু মামলার নথি না মিললে পুনর্বিচার হবে কি করে?’’
হার না মানা ফুলটুসি এ বার কী করবেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy