Advertisement
E-Paper

বাইরে তৃণমূল ভিতরে বিজেপি, এটাই ছিল ছক

নির্বাচনের কিছু দিন আগেও রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রকাশ্যেই মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে কখনও অসন্তোষ, কখনও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। প্রার্থী তালিকা নিয়েও একাধিকবার মতবিরোধ তৈরি হয়েছে দু’জনের মধ্যে।

স্যমন্তক ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৪:৩০
বিজেপি অফিসে মুকুল রায়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

বিজেপি অফিসে মুকুল রায়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

রাজ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া ইস্তক দলের অন্দরে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। দলের শাসক গোষ্ঠীর কাছে দীর্ঘ দিন তিনি ‘গ্রহণযোগ্য’ ছিলেন না। দু’একটি উপনির্বাচনে তাঁর অঙ্ক মেলেনি বলেও অভিযোগ হজম করতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে সকলেই কার্যত তাঁকে ‘চাণক্য’ বলে মেনে নিচ্ছেন। স্বীকার করছেন, মুকুল রায়ের অঙ্ক কাজ করেছে।

কী সেই অঙ্ক? মুকুলবাবুর কথায়, ‘‘তৃণমূলের একটা বড় অংশকে আড়ালে বিজেপির মেশিনারি হিসেবে ব্যবহার করাই ছিল চ্যালেঞ্জ। তারা বাইরে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে থাকলেও ভিতরে বিজেপির জন্য কাজ করেছে। এ বার কাজ হল, তৃণমূলের সেই নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে নিয়ে আসা এবং বিজেপিতে যোগ দেওয়ানো। যাতে ২০২১ সালের আগেই তৃণমূলের সরকার ফেলে দেওয়া যায়।’’

নির্বাচনের কিছু দিন আগেও রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রকাশ্যেই মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে কখনও অসন্তোষ, কখনও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। প্রার্থী তালিকা নিয়েও একাধিকবার মতবিরোধ তৈরি হয়েছে দু’জনের মধ্যে। ফল ঘোষণার পর সেই দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘মুকুলবাবু দলে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই রাজ্য বিজেপি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তার জন্য বাহবা প্রাপ্য রাস্তায় নেমে লড়াই করা কর্মীদের। দলের জন্য যাঁদের প্রাণ গিয়েছে।’’ তবে মুকুলবাবুর অঙ্ক যে মিলেছে সে কথাও এক বাক্যে মেনে নিচ্ছেন দিলীপবাবু। প্রকাশ্যেই তারিফ করছেন।

তবে বৃহস্পতিবার থেকেই রাজ্য বিজেপির দফতরে শুরু হয়েছে নতুন গুঞ্জন। জয়ের দুই মূল ‘কাণ্ডারি’ দিলীপবাবু এবং মুকুলবাবু কি পুরস্কৃত হবেন? সে ক্ষেত্রে কি বদলাবে রাজ্য দলের সংগঠনের চেহারা? সাংসদ দিলীপ কি মন্ত্রিত্ব পাবেন দিল্লিতে? মুকুলবাবুকেও রাজ্যসভায় নিয়ে গিয়ে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হতে পারে বলে দলেরই এক অংশের ধারণা। সে ক্ষেত্রে নতুন রাজ্য সভাপতি কে হবেন, তা নিয়েও রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়েছে।

মুকুলবাবু অবশ্য এ সব নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এ সবে আগ্রহী নই। বরং বিজেপির সংগঠন যাতে আরও মজবুত করা যায়, তা নিয়েই পরিশ্রম করতে চাই। লক্ষ্য বিধানসভা নির্বাচন। তৃণমূলের সরকার ফেলে দেওয়া। ফলে এই মুহূর্তে সংগঠনের বাইরে অন্য কিছু ভাবছি না।’’

বিজেপির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য, দলে মুকুলবাবুর দায়িত্ব যথেষ্ট বাড়লেও, এখনি রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হবে, এমন ভাবার কারণ নেই। কারণ, বিজেপির দলীয় কাঠামোয় এ ভাবে সভাপতি করা হয় না। তার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। তিনি মানছেন, রাজ্যে দলের এই জয়ের নেপথ্যে সব চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছেন মুকুলবাবু এবং দিলীপবাবু। দিলীপবাবুকে পুরস্কার হিসেবে মন্ত্রী করা হলে সভাপতির পদটি ফাঁকা হবে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা করবেন বলে তিনি মনে করেন না। বরং তাঁর ধারণা, মুকুলবাবু এবং দিলীপবাবু এখন যে দায়িত্ব পালন করছেন, সে কাজেই তাঁদের পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত রেখে দেওয়া হবে। ফুটবল-ক্রিকেটে যেমন দলের ‘উইনিং কম্বিনেশন’ বদলানো হয় না, তেমনই রাজ্য বিজেপিতেও ‘উইনিং কম্বিনেশন’ এই মুহূর্তে বদলানো হবে না।

দিলীপবাবুও একই কথা বলছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আপাতত মন্ত্রী হওয়ার কোনও স্বপ্ন আমার নেই। পাখির চোখ পশ্চিমবঙ্গকে তৃণমূলমুক্ত করা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য ছাড়ব না।’’

দিলীপবাবুকে সমর্থন জানিয়েছেন রাজ্য দলের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘দিলীপবাবুকে মন্ত্রী করে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে কি না, তা ঠিক করবেন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আমরা চাই, তিনি রাজ্যে যে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, তাতেই বহাল থাকুন।’’

Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 Mukul Roy BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy