মিছিলের পুরোভাগে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
নেত্রী তাঁকে সমগ্র জঙ্গলমহলের দায়িত্ব সঁপেছেন। তবে তাঁর অগ্রাধিকার যে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল, শুভেন্দু অধিকারীর দু’দিনের কর্মসূচিতেই তার ইঙ্গিত মিলল।
গত সোমবার শালবনি, কেশপুর, মেদিনীপুর সদর, গড়বেতা ৩ এ গিয়ে দখল হওয়া একাধিক পার্টি অফিস পুনরুদ্ধার করেছিলেন শুভেন্দু। মাঝে একদিনের বিরতি। বুধবার ফের তিনি এলেন শালবনি। কাঁচা বাঁশের ঝান্ডা কাঁধে মণ্ডলকুপি পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার হাঁটলেন। বিজেপির বিরুদ্ধে গলা চড়িয়েও বললেন, ‘‘সব দল থাকবে। সব দলের অফিস থাকবে।’’ যা দেখে তৃণমূলকর্মীদেরই একাংশ বলছেন, ‘‘এ যেন অন্য শুভেন্দুদা। নন্দীগ্রাম, লালগড় পর্বে ঠিক যেমনটা দেখা যেত।’’
কিন্তু আপনাকে তো নেত্রী জঙ্গলমহলের দায়িত্ব দিয়েছেন। জঙ্গলমহলের অন্যত্রও কি এমন মিছিল হবে? পড়ন্ত বেলায় শুভেন্দু বললেন, ‘‘বুথ সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি, ব্লক সভাপতি আছেন। সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মিছিল সর্বত্র হবে। আমি যতটা পারব করব।’’
লালগড় পর্বে পশ্চিম মেদিনীপুরে এমনই পদযাত্রা করতে দেখা যেত শুভেন্দুকে। পরে দলীয় স্তরে পশ্চিমের দায়িত্ব না থাকায় মন্ত্রী শুভেন্দুকে দেখতেই অভ্যস্ত ছিল পশ্চিমের জঙ্গলমহল। কিন্তু এ দিন ফিরলেন পুরনো মেজাজে। তখন বিকেল পাঁচটা। গাড়ি থেকে নেমে নিজেই কাঁধে ঝান্ডা তুলে নিলেন। নিজেই স্লোগান তুললেন ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে...।’ মানস ভুঁইয়ারা গলা মেলালেন, ‘লড়তে হবে একসাথে।’ মিছিল এগোতে থাকল মণ্ডলকুপির দিকে।
মিছিল তো হল। লোক হল কেমন? মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল ৩টায়। ওই সময়ে শালবনিতে গিয়ে দেখা যায়, জনা কয়েক নেতাকর্মী ভিড় করেছেন। তেমন লোকজন নেই। পরে অবশ্য কেশপুরের দিক থেকে, চন্দ্রকোনা রোডের দিক থেকে, মেদিনীপুরের দিক থেকে লোকজন আসতে শুরু করেন। পাতলা ভিড় ধীরে ধীরে গাঢ় হতে শুরু করে। কেশপুরের এক নেতা বলছিলেন, ‘‘আমাকে ৭০০ লোক আনতে বলা হয়েছিল। এত লোক এখন পাব কোথায়? ৭০ জন মতো এনেছি।’’ দলের একাংশ মানছেন, ভয়ে কর্মী- সমর্থকদের অনেকে এখন বেরোতে চাইছেন না। শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ভোটে আশানুরূপ ফল হয়নি। তাই কর্মীদের কেউ কেউ মুষড়ে পড়েছিলেন। তবে এটা সাময়িক। এখন সকলকে চাঙ্গা করে দিয়েছে প্রাক্তন সিপিএম, বর্তমানে বিজেপির ঝান্ডাধারীরা। ওরা (বিজেপি) আমাদের খুঁচিয়ে দিয়েছে। আমরা রাস্তায় নেমে পড়েছি। এখন আমরা রাস্তাতেই থাকব।’’
পদযাত্রা করছেন। রাস্তায় থাকার কথা বলছেন। অনেকটাই সেই আগের মতো। তা হলে কি সব নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে? শুভেন্দুর জবাব, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৫টা বিধানসভার মধ্যে ৮টায় আমাদের লিড আছে। ঝাড়গ্রামে পঞ্চায়েতের তুলনায় আমাদের ভোট ভাল হয়েছে। গণতন্ত্রে হার-জিত আছে। এই জেলা অনেক অত্যাচার সহ্য করেছে। আর করবে না। হামলা হলে প্রতিরোধ হবে।’’ প্রতিরোধের বার্তা দিলেও উন্নয়নে সহযোগিতার কথাও বলতে ভোলেননি শুভেন্দু। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমাদের বিধায়ক আছেন, তিনি কাজ করছেন। যিনি সাংসদ হয়েছেন তিনিও কেন্দ্রের প্রকল্প নিয়ে আসুন এখানে। উন্নয়নের প্রতিযোগিতা হোক।’’
শালবনির আকাশে সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলে পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy