Advertisement
E-Paper

গৌরীযুগ শেষ, নেতা রদবদলে জল্পনা তৃণমূলে

শনিবার কালীঘাটের বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নদিয়ার সংগঠনকে দু’টি সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করে দেওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে কার্যত ক্ষমতাহীন হয়ে পড়লেন এত দিন জেলা সভাপতির পদ সামলে আসা  গৌরীশঙ্কর দত্ত।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০২:১৯
গৌরীশঙ্কর দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।

গৌরীশঙ্কর দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।

সম্ভাবনাটা ছিলই। কিন্তু তা যে এত তাড়াতাড়ি ঘটে যাবে, তা দলের মধ্যে গৌরীশঙ্কর দত্তের ঘোর ‘শত্রু’ও বোধহয় আন্দাজ করতে পারেননি।

শনিবার কালীঘাটের বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নদিয়ার সংগঠনকে দু’টি সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করে দেওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে কার্যত ক্ষমতাহীন হয়ে পড়লেন এত দিন জেলা সভাপতির পদ সামলে আসা গৌরীশঙ্কর দত্ত। তাঁর পরিবর্তে ক্ষমতার অলিন্দে উঠে এলেন তরুণ সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং বর্ষীয়ান নেতা শঙ্কর সিংহ। পিছনের সারিতে চলে গেলেন কল্লোল খাঁ, উজ্জ্বল বিশ্বাস, পুণ্ডরীকাক্ষ সাহাদের মতো প্রথম দিন থেকে দল করে আসা নেতারা।

লোকসভা নির্বাচনে নদিয়ায় ভাল রকম ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। কৃষ্ণনগর কেন্দ্র রক্ষা পেলেও রানাঘাট তাদের হাতছাড়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রায় ১৫ হাজার ভোটের লিড পেলেও দক্ষিণে বনগাঁ কেন্দ্রের অধীন কল্যাণী ও হরিণঘাটায় তারা বিজেপির চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে রবিবার গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “আমি দলের জেলা সভাপতি ছিলাম। নৈতিক ভাবে এই হারের দায় আমার। তাই শাস্তিও আমারই প্রাপ্য। তা ছাড়া শারীরিক ভাবে আমিও আর দায়িত্ব পালনে সক্ষম নই।”

আগে থেকেই দলের একটা অংশ দাবি করে আসছিল, শঙ্কর সিংহকে জেলা সভাপতি করা হোক। তিনি কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসার পরে থেকে একাধিক বার রটেও যায় যে গৌরীশঙ্করকে সরিয়ে তাঁকে জেলা সভাপতি করা হচ্ছে। কিন্তু তা হয়নি। অর্ধেক জেলার দায়িত্ব পেলেও এত দিন পরে তিনি যোগ্য সম্মান পেলেন বলে মনে করছেন তাঁর অনুগামীরা। সেই সঙ্গে রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমা এলাকায় দলের বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার দায়িত্বও তাঁর ঘাড়েই চাপছে।

তবে এটাও ঘটনা যে, গৌরীশঙ্কর দত্ত দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ। একাধিক বার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সে কারণে তাঁকে লোকসভা ভোটের প্রচারে সে ভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। তবে দলে তাঁর বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে দূরত্বের কারণেই তিনি নিজের বিধানসভা কেন্দ্র তেহট্ট ছাড়া আর কোথাও সক্রিয় ছিলেন না।

বস্তুত, লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই দলের ভিতরে চাপের মুখে পড়ে যান গৌরীশঙ্কর। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জেতার দৌলতে দলের মধ্যেও উত্থান হয় মহুয়া মৈত্রের। তবে কেউই সম্ভবত ধারণা করতে পারেননি যে এই বৈঠকেই গৌরীশঙ্করকে সরিয়ে দিয়ে মহুয়াকে নেতৃত্বে তুলে আনবেন নেত্রী। ফলে দলের অন্দরে দিনভর চলেছে নানা জল্পনা। কেউ প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও এই নেতৃত্ব-বদল দলের পক্ষে কতটা ইতিবাচক হল তা নিয়েও হচ্ছে চর্চা। অনেকেই মনে করছেন, রানাঘাট এলাকায় দলে যে প্রবল গোষ্ঠীকোন্দল আছে তা সামলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই দিতে পারাটা শঙ্কর সিংহ কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কারণ দলের ভিতরেই তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মুখ আছে। পুরনো তৃণমূল নেতা ও বিধায়কদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কত জন তাঁকে মন থেকে মানতে পারবেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

কৃষ্ণনগর নিয়েও রয়েছে একই রকমের সংশয়। উজ্জ্বল বিশ্বাস বা কল্লোল খাঁয়ের মত নেতাদের বাদ দিয়ে মহুয়া মৈত্রকে দায়িত্ব দেওয়ায় দলের ভিতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। দলেরই একটা অংশের দাবি, মহুয়া সরাসরি বুথস্তরের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোটে লড়ায় অনেক বিধায়ক ও ব্লকস্তরের নেতারা ভিতরে ভিতরে ক্ষুব্ধ। গৌরীশঙ্করও যে রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়ে চুপ করে বসে থাকবেন, তেমনটা না-ও হতে পারে। তাঁর গতিবিধির উপরেও জেলা রাজনীতির অনেক কিছু নির্ভর করবে।

চেষ্টা করেও এ দিন মহুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে শঙ্কর সিংহ বলেন, “রাজনীতিতে উত্থান-পতন আছেই। আমরা সাংগঠনিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াবই।”

Gauri Shankar Dutta Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy