Advertisement
E-Paper

কোর্টে লড়ে প্রতিরোধী যক্ষ্মার ওষুধ আদায়

অবশেষে আইনি লড়াইয়ে জিতে জীবনযুদ্ধে জেতার রসদ পেলেন পটনার অষ্টাদশী শ্রেয়া ত্রিপাঠী। ওই তরুণী ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত। প্রচলিত কোনও ওষুধ কাজ করে না তাঁর শরীরে। অথচ ভারতে প্রতিরোধী যক্ষ্মার ওষুধ বেরিয়ে যাওয়ার দু’বছর পরেও তা পাচ্ছিলেন না শ্রেয়া।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৮

অবশেষে আইনি লড়াইয়ে জিতে জীবনযুদ্ধে জেতার রসদ পেলেন পটনার অষ্টাদশী শ্রেয়া ত্রিপাঠী।

ওই তরুণী ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত। প্রচলিত কোনও ওষুধ কাজ করে না তাঁর শরীরে। অথচ ভারতে প্রতিরোধী যক্ষ্মার ওষুধ বেরিয়ে যাওয়ার দু’বছর পরেও তা পাচ্ছিলেন না শ্রেয়া। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মৃত্যুর দিকে। বাঁচার লড়াইয়ে জিততে মরিয়া হয়েই দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। আদালতের সেই লড়াইয়ে জিতে বাঁচার নতুন স্বপ্ন দেখছেন ওই তরুণী।

প্রতিরোধী যক্ষ্মার সেই ওষুধটির নাম ‘বেডাকুইলিন’। ওই জীবনদায়ী ওষুধ বিশ্বের বাজারে এসেছে বছর তিনেক আগে। আর দু’বছর আগে পৌঁছেছে ভারতে। তবু তা পাচ্ছিলেন না শ্রেয়া। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নিয়মের ফেরে ওই ওষুধ তাঁর অধরা ছিল। ওষুধটি দেওয়া হচ্ছিল ভারতের পাঁচটি রাজ্যের ছ’টি কেন্দ্র থেকে। বিহার ওই রাজ্যগুলির মধ্যে ছিল না। কেন্দ্রের ফরমান ছিল, নির্দিষ্ট পাঁচ রাজ্যের বাসিন্দা ছাড়া আর কাউকে ওই ওষুধ দেওয়া চলবে না। কেননা ওই ওষুধের নির্বিচার ব্যবহারে বিপত্তির আশঙ্কা ষোলো আনা।

আদালতে ওই তরুণীর প্রশ্ন ছিল, যে-দেশে যক্ষ্মা-আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি, সেখানকার একটি রাজ্যের বাসিন্দা হয়েও ওই জীবনদায়ী ওষুধ তিনি পাবেন না কেন? ওষুধ থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁকে তিলে তিলে এগিয়ে যেতে হবে মৃত্যুর দিকে?

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধি আদালতে জানিয়েছিলেন, জীবনদায়ী ওই ওষুধের নির্বিচার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু সেই যুক্তি ধোপে টেকেনি। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে দিল্লি হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, সরকারি ভাবে বিহারে এই ওষুধ দেওয়া এখনও শুরু না-হলেও শ্রেয়ার শারীরিক অবস্থার কথা বিচার করে তাঁকে বেডাকুইলিন দিতে হবে।

আরও পড়ুন:
সদ্যোজাতদের জন্ডিস রোখার পথ দেখিয়ে চমক ভারতীয়ের

চেন্নাইয়ে শুরু বিধায়ক-বন্দি খেলা

দেশের সব রাজ্যেই যে দ্রুত বেডাকুইলিন চালু করা প্রয়োজন, রায়ে সেটাও উল্লেখ করেছে দিল্লি হাইকোর্ট। শ্রেয়ার দায়ের করা মামলার গতিপ্রকৃতি বুঝে গত ডিসেম্বরেই স্বাস্থ্য মন্ত্রক সব রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছিল, ওই জীবনদায়ী ওষুধ প্রয়োগের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নির্দেশিত পরিকাঠামো তাদের আছে কি না।

শ্রেয়ার লড়াইয়ে পশ্চিমবঙ্গের ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্তেরা যে এখনই কোনও সুফল পাবেন না, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (যক্ষ্মা) সুনীল খাপাডের চিঠি স্বাস্থ্য ভবনে পৌঁছনোর পরেই সেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যক্ষ্মার সেকেন্ড লাইন ওষুধে কোনও রোগীর প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে কি না, তা নির্ণয়ের ঠিকঠাক পরিকাঠামোই নেই রাজ্যে। এই অবস্থায় বেডাকুইলিনের মতো ফিফথ লাইন ড্রাগ দিতে যে-পরিকাঠামো দরকার, তা কবে তৈরি করা যাবে, কেউ জানে না। তাই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের চিঠির জবাব এখনও দিয়ে উঠতে পারেনি রাজ্য। নানা অজুহাতে কাল হরণ করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য দফতরের সাম্প্রতিকতম সমীক্ষা বলছে, ২০১৬ সালে রাজ্যে প্রায় ছ’লক্ষ লোককে পরীক্ষা করে ৮৭ হাজারের শরীরে যক্ষ্মা সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। সেই ৮৭ হাজারের মধ্যে আবার প্রায় দু’হাজারের শরীরে প্রচলিত ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হয়ে গিয়েছে। আর ১৫০ জন রোগীর দেহে কার্যত কোনও ওষুধই কাজ করছে না। অবিলম্বে বেডাকুইলিন চালু করাই তাঁদের বাঁচানোর একমাত্র রাস্তা। কিন্তু পরিকাঠামোর দশা এমনই যে, পশ্চিমবঙ্গে কবে এর ব্যবহার শুরু হবে, সেটা কেউই বলতে পারছে না।

এই অনিশ্চয়তা কেন?

‘‘বেডাকুইলিন চালু করার জন্য যক্ষ্মার রেজিস্ট্যান্ট প্যাটার্নের পুরো স্পেসিমেন রাখার ল্যাবরেটরি দরকার। ল্যাবরেটরির কর্মী দরকার। ওষুধ চলাকালীন রোগীদের ফলো-আপ রাখার কর্মী দরকার। এ-সব চট করে হয় না। সময় লাগে,’’ বলছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের যক্ষ্মা বিভাগের প্রধান শান্তনু হালদার।

গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিল্লির মতো রাজ্য সেই পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলল কী করে?

রাজ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিযুক্ত কনসালট্যান্ট সঞ্জয় সূর্যবংশীর জবাব, ‘‘প্রয়োজন ও জোগানের মধ্যে যে-ফাঁক থাকে, কিছু রাজ্য তাড়াতাড়ি তা পূরণ করতে পেরেছে। পশ্চিমবঙ্গও করবে। আমরা বসে নেই।’’

কী বলছে কেন্দ্র?

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অন্যতম কর্তা খাপাডে জানান, কাউকে দোষ দেওয়া তাঁদের অভিপ্রায় নয়। রোগের দাপট রোখার জন্য যা করার, সেটা করতেই হবে। ‘‘গুজরাত, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু, কেরল খুব ভাল কাজ করেছে। আমরা চাই, সব রাজ্যই ভাল কাজ করুক,’’ বলেন খাপাডে।

স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের ক্ষোভ, এক অষ্টাদশী কন্যে আইনি লড়াই চালিয়ে যক্ষ্মার জীবনদায়ী ওষুধ প্রাপ্তির পথ সুগম করে দিল। সেই পথে গড়গড়িয়ে চলাটা পশ্চিমবঙ্গ রপ্ত করতে পারছে না, এটাই আফসোস।

Tuberculosis Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy