Advertisement
১১ মে ২০২৪

পরীক্ষা কেন্দ্রেই অসুস্থ, মৃত্যু ছাত্রীর

পিংলার সাহরদা এলাকার কুলতাপাড়ার বাসিন্দা সঙ্গীতা সাহরদা কালীপদ বিদ্যাপীঠের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

সঙ্গীতা দাস।

সঙ্গীতা দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৩
Share: Save:

খড়্গপুর: পড়াশোনার ইচ্ছা ছিল প্রবল। তাই জন্মের সময় হৃদ্‌পিণ্ডে ফুটো ধরা পড়লেও স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন নিয়মমাফিক। একটু ‘ধীর পা’য়ে হলেও এক একটি ক্লাসের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছেছিলেন দ্বাদশ শ্রেণিতে। এ বার দেওয়ার কথা ছিল উচ্চ মাধ্যমিক। কিন্তু প্রথম দিনের পরীক্ষা শুরু আগেই লড়াই থেমে গেল পিংলার ওই ছাত্রী সঙ্গীতা দাসের (২১)। মঙ্গলবার পরীক্ষাকেন্দ্রেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল তাঁর।

পিংলার সাহরদা এলাকার কুলতাপাড়ার বাসিন্দা সঙ্গীতা সাহরদা কালীপদ বিদ্যাপীঠের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে তাঁর পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল পিংলারই পিণ্ডরুই হাইস্কুল। এ দিন সকালে বাড়ি থেকে বাবা ভক্ত দাসের সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েছিলেন সঙ্গীতা। তাঁর আসন ছিল দোতলার একটি ঘরে। সিঁড়ি দিয়ে সেই ক্লাসরুমে পৌঁছতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ছাত্রা। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির স্বাস্থ্যকর্মীরা স্থানীয় চিকিৎসককে ডেকে আনেন। সাহরদা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অজিত সামন্ত এবং সঙ্গীতার বাবার উপস্থিতিতেই দেওয়া হয় ওষুধ ও স্যালাইন। পরে অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান সঙ্গীতা। পুলিশে সঙ্গীতার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়েছে।

পেশায় চাষি ভক্ত দাস এবং তাঁর স্ত্রী আলপনার দুই মেয়ের মধ্যে সঙ্গীতাই ছিল বড়। তাঁর জন্মের পরেই চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, হৃদ্‌যন্ত্রে ফুটো রয়েছে। বছর পাঁচেক বয়সে সঙ্গীতার চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরু, চেন্নাই-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছুটেছেন পরিজনেরা। সঙ্গীতা অবশ্য পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। বছর আটেক বয়সে সঙ্গীতা স্কুলে ভর্তি হন। পরিবারের দাবি, পড়াশোনা নিয়ে তাঁকে কখনও চাপ দেওয়া হয়নি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাল ফল না হওয়ায় এক বছর নষ্ট হয় সঙ্গীতার। পরে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে কলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি।

পরিবারের দাবি, এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে সঙ্গীতা যে উদ্বিগ্ন ছিলেন, তা কাউকে বুঝতে দেননি। সোমবার রাতেও ১০টা পর্যন্ত পড়ে ঘুমোতে গিয়েছিলেন। অন্য দিন সকাল ৬টায় ঘুম ভাঙলেও এ দিন সঙ্গীতা রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ উঠে পড়তে বসেন। বাবা ভক্তা দাস বলেন, “বড় মেয়ে অসুস্থ থাকায় পড়াশোনায় চাপ দিতাম না। দিন কয়েক আগে ও নিজেও আমাকে ওর পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে বারণ করেছিল।’’ এ দিন বাবা-মেয়ে ভাত খেয়ে বেরিয়েছিলেন। পরীক্ষাকেন্দ্রের গেটের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন বাবা। স্কুলের তরফে ফোনে তাঁকে মেয়ের অসুস্থতার কথা জানানো হয়। পিণ্ডরুই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কণিষ্ক সিংহ বলেন, “ওই পরীক্ষার্থী সিঁড়ি দিয়ে ওঠার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেন। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।”

মেয়ের মৃত্যুতে জ্ঞান হারাচ্ছেন আলপনা। মুখে একটাই কথা— ‘‘মেয়েটা প্রণাম করে বেরিয়েছিল। আর ফিরে এল না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary Pingla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE