Advertisement
১০ মে ২০২৪
CV Ananda Bose

রাজ্যপালের বাজেট বক্তৃতা: কেন্দ্রের বঞ্চনা, শিক্ষার গুণগান

কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই সরব রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। আর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজ্যের প্রাপ্যে নিয়ন্ত্রণ চেয়ে পথে নেমেছে বিরোধী বিজেপি।

Picture of Governor CV Anand Bose.

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ রাও বোস। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০২
Share: Save:

রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগেই ‘সিলমোহর’ দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ রাও বোস। প্রথা মেনেই রাজ্য সরকারের তৈরি বাজেট বক্তৃতায় ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস প্রকল্পে সেই পরিস্থিতির কথাই পড়েছেন রাজ্যপাল। এ নিয়ে সরকার-বিরোধী টানাপড়েনেও বিশেষ মাত্রা যোগ হল রাজ্যপালের এই বক্তৃতার পরে। যে নিয়োগ দুর্নীতি এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিরোধীরা রাজ্য সরকারকে প্রতিনিয়ত কাঠগড়ায় তোলে, রাজ্যপালের বক্তৃতায় তা খারিজ করে দুই ক্ষেত্রেই সরকারি সফাল্যের দাবি করা হয়েছে।

সাধারণত রাজ্যপালের বাজেট বক্তৃতা সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারই তৈরি করে দেয়। তবে এ নিয়ে রাজ্যপালের তরফে আপত্তি জানানোর সুযোগও থাকে। অনেক সময় সরকারের তৈরি বক্তৃতার সঙ্গে সহমত না হলে রাজ্যপাল প্রথম এবং শেষাংশ পড়ে নিয়মরক্ষা করে থাকেন। কিন্তু এ বার তা হয়নি। যে প্রশ্নে রাজ্যের শাসক ও বিরোধীদের লাগাতার যুদ্ধ চলছে সেই উন্নয়নের প্রশ্নে রাজ্যপাল সরকারের তৈরি বক্তৃতা সম্পূর্ণ পাঠ করে তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থান নিয়েছেন বলেই রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত।

রাজ্যপালের বক্তৃতায় সরকার মিথ্যা তথ্য দিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, ‘‘বঞ্চনার অভিযোগ কোথা থেকে এল? রাজ্যপাল যতই সরকারের লিখে দেওয়া মিষ্টি কথা বলুন না কেন, আমরা তাঁকে প্রকৃত তথ্য দেব।’’ এই সূত্রে তিনি ফের বলেন, ‘‘কেন্দ্র আবাস যোজনা বা ১০০ দিনের কাজের মতো নানা প্রকল্পেই টাকা দিয়েছে। রাজ্য সরকার কেন্দ্রের টাকা নয়ছয় করেছে।’’

কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই সরব রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। আর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজ্যের প্রাপ্যে নিয়ন্ত্রণ চেয়ে পথে নেমেছে বিরোধী বিজেপি। বুধবার সেই দাড়ি টানাটানিতে রাজ্য সরকারের বক্তব্যে সায় পড়েছে রাজ্যপালের বাজেট বক্তৃতায়। বক্তৃতায় রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘তিনটি ক্ষেত্রে এ বছর আমরা বিশেষ সাফল্য অর্জন করতে পারিনি, সেগুলি হল— এমজিএনআরইজিএ (১০০ দিনের কাজ), গ্রামীণ আবাসন ও গ্রামীণ সড়ক।’’ রাজ্য সরকার কেন সাফল্য পায়নি তা ব্যাখ্যা করে রাজ্যপাল আরও বলেছেন, ‘‘এ বছর রাজ্য এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের কাছ থেকে তার প্রাপ্য টাকা পায়নি। ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া এখনও পাওনা রয়েছে রাজ্যের।’’

শুধু আবাস-সহ তিনটি যৌথ প্রকল্পে বঞ্চনার অভিযোগই নয়। রাজ্যপালের পাঠ করা বাজেট বক্তৃতায় আরও যে বিষয় রাজনৈতিক মহলের নজর কেড়েছে, তা হল শিক্ষা। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক স্তরে যে আলোড়ন চলছে এ দিন সেই ক্ষেত্রে তৃণমূল সরকারের ১০ বছরের অগ্রগতিরই হিসেব রয়েছে রাজ্যপালের বক্তৃতায়। রাজ্যপালের কথায়, ‘‘বিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে গত ১০ বছরে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৭২৫১টি নতুন বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ২৮৮৬টি নতুন বিদ্যালয় খোলা হয়েছে।’’ স্মার্ট ফোন কিনতে সরকারের দেওয়া ১০ হাজার টাকা, সংখ্যালঘু বৃত্তি হিসেবে ৬৬৮৪ কোটি টাকা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই বক্তৃতায়। উচ্চশিক্ষার উন্নতিতে সরকারি পদক্ষেপের বিবরণ দিয়েছেন রাজ্যপাল।

নিয়োগ দুর্নীতি তো নয়ই, যে ‘মিড-ডে মিল’ নিয়ে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অতিসম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল, তা নিয়েও সন্তোষ স্পষ্ট হয়েছে রাজ্যপালের বক্তৃতায়। এ সম্পর্কে বক্তৃতায় রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘১ কোটি ১৮ লক্ষের বেশি পড়ুয়াকে মিড-ডে মিল প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে এবং মিড-ডে মিল রান্নার জন্য ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে এলপিজি সংযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।’’

এ ছাড়াও ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো সহায়তা প্রকল্প, শিল্প- কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ, পরিবহণ দফতরের কাজকর্ম সাফল্য হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে রাজ্যপালের বক্তৃতায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE