Advertisement
২১ মে ২০২৪

জমা জলে পচছে বহু সব্জি, ক্ষতির আশঙ্কা চাষিদের

মাঝে দু’এক দিন রোদের দেখা মিললেও জমিতে জমা জল রয়েছে একই জায়গায়। নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা থেকে সব্জি সবই। জোগান কমে গিয়ে সব্জির বাজারেও আগুন। সাধারণ ক্রেতাদের দাবি, বাজারে সব্জির দাম ক্রমেই চড়ছে। আবার দাম দিয়েও যে সব্জি মিলছে তা নিম্নমানের।

ক্রেতা নেই, সব্জির দোকান ফাঁকা। কালনায় নিজস্ব চিত্র।

ক্রেতা নেই, সব্জির দোকান ফাঁকা। কালনায় নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০১:০৬
Share: Save:

মাঝে দু’এক দিন রোদের দেখা মিললেও জমিতে জমা জল রয়েছে একই জায়গায়। নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা থেকে সব্জি সবই। জোগান কমে গিয়ে সব্জির বাজারেও আগুন। সাধারণ ক্রেতাদের দাবি, বাজারে সব্জির দাম ক্রমেই চড়ছে। আবার দাম দিয়েও যে সব্জি মিলছে তা নিম্নমানের।

জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি সব্জির চাষ হয় কালনা মহকুমায়। বিশেষত পূর্বস্থলী১ এবং ২ ব্লক সব্জি ভাণ্ডার বলে পরিচিত। অথচ এই এলাকাতেই সব্জি সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই বলে চাষিদের দাবি। চাষিরা জানান, জমি থেকে সব্জি তুলে সরাসরি পাইকারি বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আড়তদারের মাধ্যমে তা বিক্রি হয়। আড়তদার নিজের কমিশন কেটে নিয়ে সব্জি বিক্রির টাকা দেন চাষিদের। জানা গিয়েছে, এলাকার চাহিদা মিটিয়ে পারুলিয়া, কালেখাঁতলা, নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি, চকবাজার, ধাত্রীগ্রামের মতো পাইকারি বাজার থেকে ১০০ ট্রাকেরও বেশি সব্জি রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে রফতানি হয়। তবে চাষিদের দাবি, এখন সব্জির জোগান এতটাই কম যে বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। তাতেও চড়া দাম দিয়ে মধ্য থেকে নিম্ন মানের সব্জি কিনতে ফড়েদের মধ্যে হুড়োগুড়ি পড়ে যাচ্ছে বলে চাষিদের দাবি। হাওড়া থেকে কালনার চকবাজারে আসা গোপাল ভৌমিক নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ভাল সব্জি অমিল। যা পাওয়া যাচ্ছে বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে। খারাপ সব্জি গাড়িতে নিয়ে যেতে যেতে আরও খারাপ হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, স্বাভাবিক জোগানের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ কম সব্জি মিলছে। পেঁয়াজের দরও বেশ চড়া। ব্যবসায়ীদের দাবি, দিন পনেরো ধরেই সব্জির জোগান কমছে। সপ্তাহ খানেক ধরে ভাল সব্জি মিলছেই না। চকবাজারের সব্জি বিক্রেতা ধ্রুব দে বলেন, ‘‘ভাল সব্জি পেতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও খানিকটা সময় লাগবে।’’

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সব্জির জোগান মারাত্মক ভাবে কমে যাওয়ার কারণ জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি। দফতরের দাবি, জল নেমে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই ফের বৃষ্টি শুরু হয়ে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত মহকুমার ব্লকগুলিতে হাজার মিলিমিটারের কাছাকাছি বৃষ্টিপাত হয়ে গেছে। যেখানে সারা বছরে বৃষ্টিপাত দরকার হয় ১২০০ মিলিমিটারের আশপাশে। ফলে বিঘের পর বিঘে জমিতে দীর্ঘ দিন ধরে জল জমে রয়েছে। এর উপর খড়ি এবং বাঁকা নদীর উপচে পূর্বস্থলী এবং মন্তেশ্বরের ৪০টির বেশি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ফলে সব্জির খেতে জল জমে গোঁড়া পচা রোগ দেখা গিয়েছে। যার জেরে জমিতেই শুকিয়েই যাচ্ছে গাছ। মহকুমা কৃষি দফতরের এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষেরও আশঙ্কা, ‘‘বর্তমানে আবহাওয়া যা তাতে গোঁড়াপচা রোগের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।’’ পূর্বস্থলীর সব্জী চাষিদের দাবি, নিচু এলাকার বেশির ভাগ খেতই সব্জিশূন্য। উঁচু জমির সব্জির ফলনও চার ভাগের এক ভাগ। সব্জি চাষি আকবর শেখ জানান, দুর্গাপুজোর কথা মাথায় রেখে প্রতিবার বহু চাষি এ সময় ফুলকপি চাষ করেন। উৎসবের মরসুমে ভাল দামও মেলে। কিন্তু এ বার বেশির ভাগ চারাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সব্জি চাষি গোলোক দাস বলেন, ‘‘সারা বছরের জোগান ঠিক রাখতে বড় গাছের পাশাপাশি ছোট গাছকেও তৈরি করি। কিন্তু এ বার গাছ, চারা সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জমি তৈরির পরে ফের চারা তৈরি করে তা থেকে সব্জি পেতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাবে।’’ পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ও সব্জিতে ক্ষতির কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি জানান, কৃষি দফতরকে বলা হয়েছে ক্ষয়ক্ষতির একটি রিপোর্ট তৈরি করতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Heavy rain farmer howrah kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE