Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ঝড়ে উড়ে গেল হোমের চালা

পারদ চড়তে চড়তে ছুঁয়েছিল ৪০.১ ডিগ্রি। নাজেহাল হয়ে অনেকেই ভেবেছিলেন, একটু ঝড়-বৃষ্টি হলে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে। বৃষ্টি হল। সঙ্গে এল ঝড়। সেই ঝড়বৃষ্টিতে পারদ অনেকটাই নেমে এল বটে, কিন্তু দিনের শেষে হিসেবের খাতায় সেই স্বস্তিটুকু চাপা পড়ে গেল ক্ষয়ক্ষতির তলায়।

বিষ্ণুপুরে।—নিজস্ব চিত্র

বিষ্ণুপুরে।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

পারদ চড়তে চড়তে ছুঁয়েছিল ৪০.১ ডিগ্রি। নাজেহাল হয়ে অনেকেই ভেবেছিলেন, একটু ঝড়-বৃষ্টি হলে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে। বৃষ্টি হল। সঙ্গে এল ঝড়। সেই ঝড়বৃষ্টিতে পারদ অনেকটাই নেমে এল বটে, কিন্তু দিনের শেষে হিসেবের খাতায় সেই স্বস্তিটুকু চাপা পড়ে গেল ক্ষয়ক্ষতির তলায়। শুক্রবার সন্ধ্যার সেই ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছে জেলার অনেক এলাকা। লোডশেডিং-এ নাভিশ্বাস উঠেছে বাসিন্দাদের। ঝড়ে ছিঁড়ে যাওয়া তার থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুও হয়েছে এক জনের।

জেলা হাওয়া অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার। সঙ্গে বৃষ্টিও হয়েছে ৩২.৯ মিলিমিটার। শুক্রবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেলে ঝড়ের আগে তাপমাত্রা ছিল ৩৮.১ ডিগ্রিয়। পরে তা নেমে দাঁড়ায় ২৫ ডিগ্রিতে। ঝড়বৃষ্টির দৌলতে শনিবার সারা দিনও তাপমাত্রা কিছুটা কম ছিল। এ দিনও জেলার বেশ কিছু অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়া। শনিবার বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.১ ডিগ্রি।

শুক্রবার ঝড়ের তাণ্ডবে জেলা জুড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। বিভিন্ন এলাকায় অনেক গাছ ভেঙে এবং উপড়ে পড়ে অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ইলেক্ট্রিক তারের উপরে গাছের ডাল পড়ে, তার ছিঁড়ে মৃত্যু হয়েছে বড়জোড়ার সাবগ্রাম মোড়ের এক বাসিন্দার। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত মনসা হাজরা (৬৫) চা পাতা কিনতে মুদি দোকানে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে গ্রামের মোড়ে ইলেক্ট্রিকের কাটা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। বড়জোড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে, চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান। জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়েছেন, মৃতের পরিবার সরকারি নিয়ম মাফিক ক্ষতিপূরণ পাবে।

শুকতো দেওয়া হয়েছে বইখাতা। বাঁকুড়ার হোমে তোলা নিজস্ব চিত্র।

শুক্রবারের ঝড়ে বাঁকুড়া শহরের কেঠারডাঙা এলাকার একটি বেসরকারি হোমের একটি ঘরের টিনের চালা উড়ে গিয়েছে। হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘরে প্রায় ৫০ জন আবাসিক ছিল। তাদের আপাতত অন্য ঘরে রাখা হয়েছে। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ওই ঘরের আবাসিকরা ভিজে যাওয়া বই পত্র রোদে শুকোতে দিচ্ছে। তারা বলে, “খুব জোরে ঝড় হচ্ছিল। আমরা তখন ভিতরেই ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে মাথার উপর থেকে চালটা উড়ে গেল। সবাই ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম।”

জেলাশাসক জানান, বিভিন্ন ব্লক থেকে অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ত্রিপলের ব্যবস্থা করতে বিডিওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রশাসন বা পঞ্চায়েত তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।

এ দিনের ঝড়ে জেলার অধিকাংশ ব্লকেই কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। ওন্দার মুড়াকাটা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল গ্রামের বাসিন্দা বীরেন চৌধুরীর বাড়ির খড়ের চালার একাংশ ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের মাথা গোঁজার ঠাই নেই। এখনও ব্লক বা পঞ্চায়েত থেকে কেউ এসে খবরও নেয়নি এক বার।’’ ঝড়ে তাঁর পড়শি ধীরেন রায়ের বাড়ির চাল উড়ে বৃষ্টির জল ঘরে ঢুকে পড়েছে। ধীরেনবাবু বলেন, ‘‘এই চালা ঘরটুকুই সম্বল ছিল। এখন কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’’ এ দিনের ঝড়ে ওই গ্রামের সুভাষ চৌধুরী এবং মানিক চৌধুরীর বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাঁকুড়া ২ ব্লকের কাশীনাথ গ্রামেও বেশ কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই গ্রামের বধূ পুষ্প মালের বাড়ির খড়ের চালা উড়ে গিয়েছে ঝড়ে। গ্রামের আর এক বধূ মণি মালের টালির বাড়ির ছাউনিও ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, “একটা ত্রিপলের জন্য হন্যে হয়ে পঞ্চায়েতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও সাহায্যই করা হল না।” তবে বাঁকুড়া সদর মহকুমা শাসক অসীম কুমার বালা বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা বানানোর কাজ চলছে। ত্রিপলের অভাব নেই। দ্রুত বিলি করা হবে।”

এ দিকে শুক্রবার সন্ধ্যার ঝড়বৃষ্টির পরেই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত। মাঝরাত পর্যন্ত বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। একই অবস্থা হয় বিষ্ণুপুর শহরেও। প্রায় রাত কাবার করে শহরে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হলেও বিভিন্ন গ্রামে শনিবার বিকেল পর্যন্ত লোডশেডিং চলেছে। শনিবারও দু’ই পুরশহরের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় লোডশেডিং লেগে ছিল। বিদ্যুৎ দফতরের বাঁকুড়ার রিজিওনাল ম্যানেজার চন্দ্রশেখর সেনগুপ্ত বলেন, “ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি না পড়লেও বহু জায়গায় গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে ইলেক্ট্রিক তারের উপর। তার জেরেই পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়েছে। তবে ঝড় থামার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা মেরামতির কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

storm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE