Advertisement
০৫ মে ২০২৪

টিকাকরণে ঘাটতি, বাড়ছে হেপাটাইটিস-বি

সময়বিধি মেনে আগাম প্রতিষেধক প্রয়োগের কাজ ঠিকঠাক হলে অনেক রোগেরই আশঙ্কা রুখে দেওয়া যায়। অথচ বিভিন্ন ব্যাধির টিকাকরণে পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা সাফল্য-ব্যর্থতায় মেশামেশি। যেমন যক্ষ্মা বা ডিপথিরিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে এখানকার টিকাকরণ সন্তোষজনক।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১২
Share: Save:

সময়বিধি মেনে আগাম প্রতিষেধক প্রয়োগের কাজ ঠিকঠাক হলে অনেক রোগেরই আশঙ্কা রুখে দেওয়া যায়। অথচ বিভিন্ন ব্যাধির টিকাকরণে পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা সাফল্য-ব্যর্থতায় মেশামেশি। যেমন যক্ষ্মা বা ডিপথিরিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে এখানকার টিকাকরণ সন্তোষজনক। কিন্তু হেপাটাইটিস বি-র মোকাবিলায় টিকাকরণ কর্মসূচিতে পিছনের সারিতেই রয়ে গিয়েছে এই রাজ্য। যদিও বাংলায় ওই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্টেই এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। যক্ষ্মা রুখতে বিসিজি কিংবা ডিপথিরিয়া, টিটেনাস, হুপিংকাশি রুখতে ডিপিটি-র ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। অথচ হেপাটাইটিস বি-র ক্ষেত্রে টিকাকরণের হার মাত্র ৬৬ শতাংশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, হেপাটাইটিস বি টিকাকরণের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে সব চেয়ে ভাল অবস্থা অন্ধ্রপ্রদেশের— ১০৫.০ শতাংশ। আর সব চেয়ে খারাপ অবস্থা মণিপুরের— মাত্র ২৭.৩ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। এর জন্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন তাঁরা। দায়ী করছেন আমজনতাকে সচেতন করার ব্যাপারে তাঁদের উদাসীনতাকেও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র সুপারিশ অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে জন্মের পরে পরেই নবজাতককে হেপাটাইটিস বি প্রতিষেধকের একটি ডোজ দেওয়ার কথা। অথচ পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ জেলা ও মহকুমা হাসপাতালে ওই টিকা মজুত থাকে না বলে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে রাজ্যকে জানানো হয়েছে। এমনকী অনেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ওই প্রতিষেধক নিয়মিত সরবরাহ করা হয় না। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব এবং সামগ্রিক টিকাকরণের উন্নতি নিয়ে সরকারি তরফে যে-রাজ্যে বড় মুখ করে এত বড়াই করা হয়, সেখানে হেপাটাইটিস বি-র মতো জরুরি টিকা কেন সব শিশুকে দেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হেপাটাইটিস বি-র প্রথম প্রতিষেধকটি জন্মের পরে পরে কিংবা খুব বেশি দেরি হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দিতে হয়। কোনও মতেই তার থেকে বেশি দেরি করা যায় না। প্রথমটির পরে এক মাস বয়সে একটি এবং ছ’মাস বয়সে আরও একটি প্রতিষেধক দেওয়া হলে পরবর্তী সময়ে ওই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে রোগ সংক্রমণের প্রশ্নটি জড়িত থাকা সত্ত্বেও এ রাজ্যে এমন ফাঁক কেন?

কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী এর কারণ মূলত দু’টি।
• ঘাটতি রয়েছে প্রতিষেধক সরবরাহে।
• রোগটি কতটা ভয়ঙ্কর, সেই বিষয়ে নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ধারণাই নেই।
এমনকী অনেক চিকিৎসকের মধ্যেও এই ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। সচেতনতায় ঘাটতির সেই ফাঁকে শিশুর জন্মের পরে অনেক ক্ষেত্রেই যথাসময়ে হেপাটাইটিস বি-র টিকা দেওয়া হয় না। আবার হাসপাতালে নবজাতককে প্রথম ডোজটি দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে বাকি দু’টি ডোজ নেওয়ার ব্যাপারে পরিবারের লোকেদের সচেতন করা হয় না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ হয় না টিকাকরণ।

রাজ্যে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতিতে যে-টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছে, তার চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু সমস্যা হয়তো হয়েছিল। তার জেরে হার কমে গিয়েছিল। এখন আবার সেটা বাড়ছে।’’ একই কথা বলেছেন পরিবার কল্যাণ আধিকারিক শিখা অধিকারী। তাঁর দাবি, হেপাটাইটিস বি টিকাকরণের ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ অচিরেই সামনের সারিতে পৌঁছবে।

কিন্তু পৌঁছনোর জন্য তো চাই সচেতনতা। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে আদৌ কোনও পরিকল্পনা আছে কি?

স্বাস্থ্যকর্তারা নিরুত্তর।

রাজ্যের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, সচেতনতায় গলদটা একেবারে গোড়াতেই। এ ব্যাপারে সব চেয়ে জরুরি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সময়ে মায়েদের পরীক্ষা করা।

অথচ এখনও সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় সেই পরীক্ষাটাই করা হয় না। তাই অনেক সময়েই জানা হয়ে ওঠে না, প্রসূতির শরীরে ওই রোগের ভাইরাস আদৌ আছে কি না। যে-হেতু জন্মের পরে শিশুদের টিকাকরণ হচ্ছে না, তাই কোনও প্রসূতির হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থাকলে তাঁর সন্তানদের মাধ্যমে রোগ ছড়ানোর ধারা অব্যাহতই থাকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hepatitis B Vaccination Shortage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE