Advertisement
E-Paper

নিয়োগে অসন্তুষ্ট কোর্ট, তবে স্থগিত হচ্ছে না গণনা

রাজ্য সরকার কেন স্থায়ী নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ না করে অস্থায়ী কমিশনার নিয়োগ করল, সেই প্রশ্ন এ বার তুলল কলকাতা হাইকোর্টও। অস্থায়ী নির্বাচন কমিশনার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে শুক্রবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘অস্থায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার এখনও সরকারি অফিসার। তাঁর সব কাজের উপরেই সরকারি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাই তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকেই।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৪০

রাজ্য সরকার কেন স্থায়ী নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ না করে অস্থায়ী কমিশনার নিয়োগ করল, সেই প্রশ্ন এ বার তুলল কলকাতা হাইকোর্টও। অস্থায়ী নির্বাচন কমিশনার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে শুক্রবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘অস্থায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার এখনও সরকারি অফিসার। তাঁর সব কাজের উপরেই সরকারি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাই তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকেই।’’

এক-দুই বা তিন ঘণ্টা নয়, এই মামলায় প্রায় ন’ঘণ্টা ধরে সওয়াল-জবাব চলার পরেও অবশ্য বিধাননগর-সহ তিনটি পুরসভার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপরে কোনও স্থগিতাদেশ দেননি বিচারপতি। আজ, শনিবার বিধাননগর পুরভোটের গণনা এবং ফল ঘোষণার উপরেও কোনও অন্তর্বর্তিকালীন স্থগিতাদেশ দেননি তিনি। ফলে আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আদালতের এ দিনের শুনানির শেষে নিজের দফতরে বসে আলাপনবাবু বলেন, ‘‘গণনা স্থগিতের কোনও নির্দেশ আদালত দেয়নি। ফলে শনিবার ভোট গণনায় কোনও বাধা নেই।’’

আগামী ২৩ নভেম্বর মামলাটি ফের শুনানির জন্য উঠবে। পূর্ণাঙ্গ শুনানির পরেই এই মামলার রায় দেবেন বিচারপতি। এই মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের বক্তব্য, তখন যদি দেখা যায়, অস্থায়ী নির্বাচন কমিশনার পদে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়োগ অবৈধ, তবে তাঁর নেওয়া সমস্ত সিদ্ধান্তই বাতিল হয়ে যাবে। ফলে তিন পুরসভার ভোট নিয়ে সরকারের অস্বস্তির কাঁটা রয়েই গেল।

এ দিন মামলার শুনানির সময় বিচারপতি শুধু যে অস্থায়ী কমিশনার নিয়োগ বা তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তা নয়। নিয়োগ পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে আলাপনবাবুর নিয়োগ হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে বিচারপতি বলেন, ‘‘কেন্দ্র এবং রাজ্যের আইনে বলা আছে, কোনও ব্যক্তিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করতে গেলে তাঁর সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষ হতে হবে। ওই পদে যাঁকে নিয়োগ করা হবে, সেই ব্যক্তির সরকারি কাজে পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এমনকী ভোট পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকলে তবেই তাঁর নিয়োগ হতে পারে।’’ এর পরেই অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্রকে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আলাপনবাবু চাকরি থেকে অবসর নেননি। তা হলে কী করে ওঁকে নিয়োগ করা হল?’’

কী ভাবে আলাপনবাবুর নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য নিয়ম ভেঙেছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে আবেদনকারীর আইনজীবী সমরাদিত্য পাল বলেন, ‘‘কোনও রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করে ইস্তফাপত্র রাজ্যপালকে পাঠালে এবং রাজ্যপাল তা গ্রহণ করলে, রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার কে হবেন। কয়েকটি নাম প্রস্তাব আকারে রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়। তার পরে রাজ্যপাল নতুন কমিশনারকে নিয়োগ করেন। রাজ্য মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে ঘোষণা করে, পূর্বের ব্যক্তি ইস্তফা দিয়েছেন এবং কে নতুন পদে যোগদান করবেন।’’ সমরাদিত্যবাবুর দাবি, এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভা এ রকম কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাই এই নিয়োগ সংবিধানবিরোধী।

বিচারপতি দত্ত এজি-কে বলেন, ‘‘অস্থায়ী নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকের নথি পেশ করুন।’’ জয়ন্তবাবু তাঁকে বলেন, ‘‘রাজ্যপাল নিজেই এই (নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ) ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’’ বিচারপতি পাল্টা জানান, রাজ্যপাল সেই সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও নাম সুপারিশের সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভাকেই নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কি সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?’’

জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘উনি (আলাপনবাবু) স্থায়ী নির্বাচন কমিশনার নন। অস্থায়ী।’’ বিচারপতি জানতে চান, ‘‘কেন তাঁকে স্থায়ী কমিশনার পদে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিল না রাজ্য?’’ এজি বলেন, ‘‘তিনি অস্থায়ী হিসেবেই দায়িত্ব পালন করবেন।’’ বিচারপতির পাল্টা মন্তব্য, ‘‘তাই তো এত সমালোচনা হচ্ছে!’’ এজি-র কাছে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কী ভাবে আপনি নিশ্চিত করবেন যে এই কমিশনার স্বাধীন ভাবে কাজ চালাতে পারবেন?’’ বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘রাজ্য যখন চাইবে, অস্থায়ী কমিশনারকে সরিয়ে দেবে। তিনি রাজ্য সরকারের চাকরিতে ফিরে যাবেন। নতুন এক জনকে নিয়োগ করা হবে। এটা চলতে পারে না।’’

এ দিন এই মামলাকে ঘিরে আদালত চত্বরে আগাগোড়া ছিল টানটান উত্তেজনা। শনিবার তিন পুরসভার গণনা হবে কি না, আলাপনবাবুর নিয়োগ অবৈধ কি না, তা জানতে ভিড় করেছিলেন অনেকেই। রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরও তাকিয়ে ছিলেন আদালতের দিকে। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ বিচারপতি দত্ত দিল্লির উড়ান ধরতে প্রায় উঠেই পড়েছিলেন।

তিনি এজি-সহ উপস্থিত আইনজীবীদের বলেন, ‘‘দিল্লিতে বিশেষ কাজ রয়েছে। পাঁচটায় ফ্লাইট।’’ তখন তিনি বলেন, ‘‘মামলার নিষ্পত্তি হয়নি জেনেই অস্থায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকী ভোটগণনার দিনও ঘোষণা করেছেন। আমি কোনও নির্দেশ দিচ্ছি না। তবে ভোটগণনা করা হবে কি না, অস্থায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের বিবেকের উপরেই আমি তা ছেড়ে দিচ্ছি।’’ তা শুনে এজি আপত্তি জানালে বিচারপতি দত্ত বিকেলে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্তই বাতিল করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি সওয়াল পুরোটাই শুনব। দিল্লি যাওয়ার উড়ান দরকার হলে রাতে বা আগামিকাল ধরব। আপনারা সওয়াল থামাবেন না।’’ সওয়াল ফের শুরু হলে তিনি ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।

কিন্তু এত কিছুর পরেও বিচারপতি কোনও রায় বা স্থগিতাদেশ না দেওয়ায় আবেদনকারীর তরফের অনেকেই বেশ হতাশ। তাঁদের বক্তব্য, প্রায় ন’ঘণ্টা ধরে এত সওয়াল-জবাব এবং বিচারপতি দিল্লি যাত্রা পিছিয়ে দিলেও কোনও রায় না হওয়াটা বেশ আশ্চর্যের। তাঁরা এখন পরবর্তী শুনানির দিকে তাকিয়ে।

এ দিন অতিরিক্ত এজি লক্ষ্মী গুপ্তের কাছে বিচারপতি দত্ত জানতে চান, আলাপনবাবুকে নিয়োগের আগে তাঁর বেতন কাঠামো, চাকরির শর্তাবলি ইত্যাদি ঠিক করা হয়েছিল কি না। লক্ষ্মীবাবু জানান, তিনি এখনও নিশ্চিত নন ওই ব্যাপারে। তবে লক্ষ্মীবাবু আদালতে একটি ফাইল পেশ করে জানান, কী ভাবে তাঁর নিয়োগ হয়েছিল, তা ওই ফাইলে বলা আছে। ফাইল পড়ে বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘বিকেল চারটেয় রাজ্যপালের কাছে আগের কমিশনার ইস্তফা দিলেন। রাত আটটায় নতুন কমিশনারের নাম ঘোষণা হয়ে গেল। অথচ তাঁর বেতন, নতুন কাজের শর্তাবলি কিছুই ঠিক হল না!’’

সওয়াল-জবাব শেষে বিচারপতি দত্ত পরবর্তী শুনানির দিন ঘোষণা করে এজলাস ছাড়েন। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ৭টা ২৫।

high court freedom alapan bandyopadhyay alapan bandyopadhyay freedom justice dipankar dutta dipankar dutta abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy