Advertisement
E-Paper

তদন্তই শেষ! কোর্টে প্রশ্নের মুখে পুলিশ

অভিযোগ হয়েছিল ধর্ষণ করে খুনের। কিন্তু সেই মামলায় নিহতের ভিসেরা পরীক্ষারই কোনও উদ্যোগ হয়নি কেন, হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০১:৩১

অভিযোগ হয়েছিল ধর্ষণ করে খুনের। কিন্তু সেই মামলায় নিহতের ভিসেরা পরীক্ষারই কোনও উদ্যোগ হয়নি কেন, হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল পুলিশ। তদন্তে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে রুজু হওয়া মামলায় মঙ্গলবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী মন্তব্য করেন, ‘‘ভিসেরা পরীক্ষা না করিয়ে তদন্তকারী অফিসার তো গোটা তদন্তই শেষ করে দিয়েছেন।’’ তদন্ত সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘মামলার আবেদনকারীর টাকাকড়ি নেই। তাঁকে মানসিক ভাবে অসুস্থ মনে করে পুলিশ তদন্ত শেষ করে দিয়েছে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভোরে হিরাপুর থানা এলাকার একটি পুকুর থেকে বছর কুড়ির এক তরুণীর বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। মেয়েটির দিদি হিরাপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে তাঁর বোনকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। মৃতদেহের ময়না-তদন্ত করানো হয়। পুলিশের দাবি, ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর। দেহের ভিতরে বা বাইরে কোনও আঘাতের কোনও চিহ্ন মেলেনি। পরে অন্য এক চিকিৎসকও মৃত্যুর কারণ হিসেবে তাঁর মতামতে জানান, অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ জলে ডুবে যাওয়া।

হিরাপুর থানা সূত্রে জানা যায়, ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন থানার তৎকালীন এক সার্কেল ইনস্পেক্টর। তিনি আসানসোল আদালতে জমা দেওয়া চূড়ান্ত রিপোর্টে জানিয়েছিলেন, ধর্ষণের কোনও প্রমাণ মেলেনি। মৃতার দিদির আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত জানান, তাঁর মক্কেল পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট হননি। সে কথা জানিয়ে নিম্ন আদালতে একটি আবেদন করেন। নিম্ন আদালত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পুলিশকে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়। কিন্তু তার পরে কোনও তদন্ত হয়নি, এই অভিযোগ তুলে গত এপ্রিলে হাইকোর্টে মামলা করেন মৃতার দিদি।

সেই মামলারই শুনানি ছিল এ দিন। আদালতের নির্দেশে হাজির ছিলেন হিরাপুর থানার ওসি রাজশেখর মুখোপাধ্যায়ও। বিচারপতি বাগচী মামলার নথি পড়ে সরকারি কৌঁসুলি শুভব্রত দত্তের কাছে জানতে চান, কী কারণে তদন্তকারী ওই তরুণীর ভিসেরা পরীক্ষা করাননি। সরকারি কৌঁসুলি জানান, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। তা শুনে বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘মৃতার গলায় শ্বাসরোধের চিহ্নও মিলেছে। তদন্তকারী অফিসার বা ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসক কী করে নিশ্চিত হলেন, জলে ডোবার আগে মৃত্যু হয়নি। ভিসেরা পরীক্ষায় তো বিষও মিলতে পারত। তদন্তকারী তো গোটা তদন্তই শেষ করে দিয়েছেন।’’ তদন্তের নিয়ম মেনে তদন্তকারী কাজ করেননি বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি।

তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে বিচারপতি সরকারি কৌঁসুলিকে প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারকে আমি আদালতে হাজির হয়ে তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইব না? কেনই বা শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য থানার ওসি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?’’ বিচারপতি বাগচী পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের তদারকি করে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা এ দিন সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি এখনও আমার জানা নেই। কোর্টের নির্দেশ হাতে পেলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’ কমিশনারেটের অন্য এক পুলিশ আধিকারিকের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসকের রিপোর্ট পাওয়ার পরে তার ভিত্তিতে তদন্ত হয়। ভিসেরা পরীক্ষা কেন হয়নি, তা যিনি ময়না-তদন্ত করেছিলেন তিনিই বলতে পারবেন।’’ আসানসোল হাসপাতালে মৃতদেহের ময়না-তদন্ত কে করেছিলেন তা অবশ্য পুলিশ এ দিন জানাতে পারেনি।

Hirapur rape case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy