Advertisement
১১ মে ২০২৪

দুষ্কৃতীদের আড্ডায় এ বার ডাইনোসরের হুঙ্কার

রাতের অন্ধকারে গাড়ি থামিয়ে চলত লুঠপাট, ছিনতাই। আবার অন্যত্র খুন করে জঙ্গলে ঘেরা ওই জায়গায় এনে ফেলে দেওয়াও হতো।

বন: সাজানো হবে, অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র

বন: সাজানো হবে, অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৮
Share: Save:

কয়েক বছর আগেও জায়গাটা ছিল দুষ্কৃতীদের ‘স্বর্গরাজ্য’!

রাতের অন্ধকারে গাড়ি থামিয়ে চলত লুঠপাট, ছিনতাই। আবার অন্যত্র খুন করে জঙ্গলে ঘেরা ওই জায়গায় এনে ফেলে দেওয়াও হতো।

সেখানেই এ বার রাতে শোনা যাবে বাঘ, ডাইনোসরের হুঙ্কার, ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ। ভোরের আলো ফুটতেই শোনা যাবে বিভিন্ন পাখির ডাক, সঙ্গে মৃদু স্বরের গান। দিবাস্বপ্ন নয়! এমনই পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার।

দুই ও ছয় নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগস্থলে ওই জায়গার নাম উত্তর জয়পুরবিল। প্রায় সাড়ে তিন একর ওই জমিতেই ‘গ্রিন পার্ক’ বানানোর কাজ শুরু করেছে হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা (এইচআইটি)। বালি-জগাছা পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রের খবর, জায়গাটির ভোল বদলের জন্য গ্রিন পার্কের পরিকল্পনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানান স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্পটি অনুমোদন করার পরে সাড়ে চার কোটি টাকা খরচে কাজটি করেছে রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনস্থ সংস্থা এইচআইটি। প্রথম পর্যায়ে জঙ্গল সাফ করে, গাছগুলির ডালপালা ছেঁটে, মাটি ফেলে জমি উঁচু করা হচ্ছে।

জমির ৬০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে গোলাকৃতি একটি জলাশয়। সেটি সহ বাকি ঝোপ-জঙ্গল ভরা জায়গাটিকে ঘিরে রয়েছে জাতীয় সড়ক। ওই জায়গাতেই একটি অংশে রয়েছে বন দফতরের একটি নার্সারি। স্থানীয়েরা জানান, আগে শীতে ওই জলাশয়ে পরিযায়ী পাখি এলেও সংস্কারের অভাবে এখন সেটি পুরো বেহাল। হাওড়া জেলা পরিষদের সদস্য বিকাশ দে বলেন, ‘‘জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। পার্ক তৈরি হলে কর্মসংস্থানও হবে।’’

তিনি জানান, নলবন, ইকো পার্কের ধাঁচেই সাজবে জয়পুর বিল। জলাশয়ের চারধার দিয়ে বাঁধানো হাঁটার জায়গা, বাহারি আলো, বসার জায়গা, বোটিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও জলাশয়ের চারপাশে থাকবে রঙিন আলো-সহ মিউজিক্যাল ফোয়ারা। তৈরি হবে ভাসমান ক্যাফেটেরিয়া, ঝুলন্ত বারান্দা। বন দফতরকে বিকল্প জায়গা দিয়ে নার্সারির জায়গায় তৈরি হবে ফুড পার্ক এবং বসবে বাচ্চাদের খেলনা। পাশে পিকনিকের জন্য থাকবে রান্নার জায়গা, শৌচাগার। জলাশয় ও পিকনিকের জায়গা ঘিরে বসানো হবে দেবদারু, রক্তকরবী, গোলাপ, ক্যামেলিয়া-সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।

পার্কের বাকি অংশে বড় গাছে ঘেরা জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখা মিলবে বাঘ, ডাইনোসর, জিরাফ, হরিণের মডেল। রাত নামলেই সেগুলিকে নিয়ে হবে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড প্রদর্শনী। জঙ্গলের সামনের অংশে থাকছে দোতলা গেস্ট হাউস। পর্যটকেরা রাতে সেখানে থাকতেও পারবেন। তেমনি অল্প খরচে যে কোনও অনুষ্ঠানেও ভাড়া পাওয়া যাবে। গভীর রাতে ওই গেস্ট হাউসে বসেই শোনা যাবে জীবজন্তুদের আওয়াজ। পার্কে ঢোকার মুখেই থাকবে বিশ্ব বাংলার গেট। দূর থেকে ওই গেটে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যাবে গ্লোব। নিরাপত্তার জন্য সামনেই তৈরি হচ্ছে পুলিশ ফাঁড়ি। তৈরির পরে পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণ করবে বালি জগাছা পঞ্চায়েত সমিতি। রাজীববাবু বলেন, ‘‘হাওড়ার উন্নয়নে বিভিন্ন এলাকার সৌন্দর্যায়নেও জোর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আশা করি এই পার্ক তৈরি হলে প্রচুর পর্যটকের ভিড় হবে। আগামী শীতেই পার্কটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE