উৎসবের মেজাজে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
হোয়াট্স অ্যাপে ডাক দিলে, দেখা হল হোলি পার্টি পুলে!
এ রবি-দুপুর যেন অন্য বসন্ত-বিলাপের সাক্ষী। রং মাখার বা মাখানোর ভীরু মধ্যবিত্ত জড়তা উধাও। হোলি পার্টির আসরে রং মেখে রেন-ডান্সের মাদকতায় সঙ্কোচ ঠেলে সাবালক হয়ে উঠছে কলকাতা।
শান্তিনিকেতনের আদলে আবির খেলা বা সাবেক কলকাতার রীতি মেনে গান গেয়ে প্রভাতফেরির বাঙালিকে খুঁজে পাওয়া যায় না, বলা যাচ্ছে না। তবে রেস্তদারদের অনেকেরই আগ্রহ নামী হোটেলে বা ক্লাবে বচ্ছরকার হোলি পার্টিতে সামিল হওয়ার। চুক্তিমাফিক জুটিতে বা সগুষ্টি ইয়ারদোস্তদের সম্মেলন। রেন ডান্সের তালে অঝোর ফোয়ারায় ভিজছে দেহ-মন। পানাহারেরও দেদার বন্দোবস্ত।
কলকাতার এই নতুন পার্বণী খেয়ালের বাইরে সাবেক কিছু রীতিও বেঁচে আছে। গল্ফগ্রিন-সল্টলেকে ‘খোল দ্বার খোল’-এর আহ্বানে দেখা গেল গড়ে উঠেছে আস্ত শান্তিনিকেতন। নাচের তালে ফাগের গন্ধে সেখানে উদ্যাপন বসন্ত উৎসবের। ব়ড়বাজার বা শেক্সপিয়র সরণির কাছাকাছি উৎসবের নাম আবার ‘হোলি’। প্রেমশঙ্কর অগ্রবালের ভাঙের ঠেকে বেলা ১২টা না-বাজতেই লম্বা লাইন। সেখানে দাঁড়িয়ে ঘন ঘন মোবাইল বাজছে তৃষ্ণার্তদের। বাগুইআটির সুদীপ সরকার হাসলেন, ‘‘আরে গিন্নি তাড়া দিচ্ছে। কয়েক ঢোঁক মেরে ওরাও এনজয় করার মুডে মুখিয়ে আছে কি না!’’ সুগন্ধি সরবতে নিপুণ হাতে সিদ্ধি মিশিয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতা।
আরও পড়ুন: ঐতিহ্যের রঙে রঙিন শান্তিপুরের দোল উৎসব
রংবাজি। দোলের হুল্লোড়। রবিবার, সদর স্ট্রিটে। ছবি: শৌভিক দে
সুনসান শহরে বেশির ভাগ দোকানপাটই বন্ধ। চেনা ছবিগুলোর বাইরে উৎসবের ছোঁয়াচটা এখন টের পাওয়া যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে লাল-নীল-সবুজের আক্ষরিক অর্থেই মেলা বসেছে। রং মেখে ভূত ছবিতে প্রোফাইল পিকচার না-বসালে আর কিসের দোল!
হোলি-পার্টির বাঁধাধরা রুটিনের বাইরে মর্জিমাফিক আনন্দের উপকরণও ঘরে-ঘরে ছড়িয়ে। বিকেলে পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁর জনৈক ম্যানেজার বলছিলেন, ‘‘আমরা দরজা খোলা রাখলেও রবিবারের তুলনায় লোক কমই আসছে!’’ মাঝদুপুর অবধি ঢুকু-ঢুকুর সঙ্গতে দোল খেলা। তারপর রংমাখা আঙুল ঝোলে ডুবিয়ে মাংসভাত খেয়ে দিবানিদ্রা। এটাও বহু বাঙালির বচ্ছরকার দোলের রুটিন!
দোলের গান অবশ্য ইদানীং ইন্টারনেটেই শোনে বেশিরভাগ বাঙালি। তবে গান শুনতে শুনতে কারও সাবেক দোলের রোম্যান্সের জন্য মনকেমন করে। কখনও বা মনে পড়ে যায়, হাসপাতালে শুয়ে থাকা অসুস্থ আত্মীয় কিংবা বৃদ্ধাবাসের বাসিন্দা আত্মীয়টির কথা। তাঁরাও হয়তো চেনাজানাদের মধ্যে নিজের মতো করে রং ভাগাভাগি করছেন।
আসলে এ কালের দোলের মধ্যেও মিশে থাকে সে-কালের রং। একেলে ‘বালম পিচকারি’র অসঙ্কোচ আমেজেও কেউ কেউ মনে মনে বলে ওঠেন, ‘এসো হে বন্ধু থেকো না দূরে গাও ফাগুয়ার গান, এই মিলনে রঙিন হরষে রাঙিয়ে নাও মনপ্রাণ!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy