Advertisement
E-Paper

পলকে ঘোড়া কালো কলপে!

চকচকে চেহারা, ছোটেও দারুণ। মালিকের এই কথায় ভুলেই একটা কালো ঘোড়ায় টানা গাড়ি কিনেছিল অ্যাস্টেরিক্স আর ওবেলিক্স। মাঝপথে বৃষ্টি নামতেই মুছে গেল রং। কালো ঘোড়া রাতারাতি ফ্যাকাসে সাদা!

শান্তনু বেরা

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৭
সৈকতে সাবধান: কলপ করিয়ে ভোলবদল ঘোড়ার। দিঘায়। নিজস্ব চিত্র

সৈকতে সাবধান: কলপ করিয়ে ভোলবদল ঘোড়ার। দিঘায়। নিজস্ব চিত্র

চকচকে চেহারা, ছোটেও দারুণ। মালিকের এই কথায় ভুলেই একটা কালো ঘোড়ায় টানা গাড়ি কিনেছিল অ্যাস্টেরিক্স আর ওবেলিক্স। মাঝপথে বৃষ্টি নামতেই মুছে গেল রং। কালো ঘোড়া রাতারাতি ফ্যাকাসে সাদা!

গলদেশের গল্পের পাতার এই দৃশ্য দেখতে পারেন আপনিও। একটি বার শুধু যেতে হবে দিঘায়।

সৈকত শহরে এখন আকছার বাদামি, খয়েরি বা ছাই রঙা ঘোড়াকে কলপ করে নিমেষে কালো করে ফেলা হচ্ছে। মালিকরা বলছেন, পর্যটকদের পছন্দ সাদা আর কালো ঘোড়া। তাই এই ভোলবদল।

এতে পর্যটকেরা তো ঠকছেনই, বিপদ বাড়ছে ঘোড়াগুলিরও। কারণ, ঘোড়ার রং বদলাতে ব্যবহার করা হচ্ছে বাজার চলতি চুলের কলপ। একটা ঘোড়ায় রং করতে ১৫-২০টি কলপের প্যাকেট লাগে। খরচ পড়ে প্রায় দেড়শো টাকা। রঙের মেয়াদ একমাস। এই কলপ ঘোড়ার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানালেন সরকারি পশু চিকিৎসক আনন্দ মাইতি। তাঁর কথায়, “এতে ঘোড়ার চর্মরোগ হতে পারে, হতে পারে অ্যালার্জি। ক্ষতিকর কলপে রোমকূপ বন্ধ হয়ে শরীরে অন্য সমস্যাও হতে পারে।’’

অ্যাস্টেরিক্স কমিকসের সেই অংশ।

ওল্ড দিঘার ২ নম্বর ঘাটের কাছে সৈকত সরণির ঠিক পাশেই ঝাউবনে গোটা দশেক ঝুপড়িতে থাকে কয়েকটি পরিবার। দিঘার সৈকতে মূলত এদের ঘোড়াতেই চড়েন উৎসাহীরা। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫টি ঘোড়া আছে। তার মধ্যে অনেকগুলোই কলপে কালো। মাথাপিছু ঘোড়ায় চড়ার ভাড়া ৫০ টাকা। দিনে ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার করেন ঘোড়ার মালিক। ঘোড়া মালিক শেখ হোসেন বলেন, “পর্যটকদের ঘোড়ায় চাপিয়ে সংসার চলে। তাই ঘোড়ার ক্ষতি আমরা চাই না।’’

তা হলে কলপ করছেন কেন? হোসেনের বক্তব্য, ‘‘আগে অল্প একটু কলপ লাগিয়ে পরখ করে নিই। ঘোড়া ছটফট করলে আর লাগাই না।’’ অন্য এক ঘোড়ার মালিকের দাবি, আগে পাথরের গুঁড়ো থেকে পাওয়া রং ব্যবহার করা হত। তাতে ঘোড়ার অ্যালার্জির আশঙ্কা ছিল বেশি। তাই এখন ভাল কোম্পানির কলপ ব্যবহার করা হয়। তাতে নাকি ক্ষতি হয় না। কলপ করা ঘোড়ায় চাপলে মানুষেরও কিচ্ছুটি হবে না বলে গ্যারান্টি দিচ্ছেন ঘোড়া মালিকরা।

চিকিৎসকেরা যদিও অন্য কথা বলছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব গিরি বলেন, ‘‘সরাসরি চামড়ার সংস্পর্শে এলে এই কলপে ক্ষতি হবেই। তা ছাড়া, ঘোড়ায় চাপতে গিয়ে জামায় কলপ লাগলেও বিপদ হতে পারে। ত্বকের প্রকৃতির উপরে বিপদের মাত্রা নির্ভর করে।’’

পর্যটকেরা গোটা বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে। কলকাতা থেকে আসা চন্দন রায় বলছিলেন, “ঘোড়াগুলো যে কলপ করা তা দেখে বোঝার জো নেই। গায়ে রং লেগে কী হতে পারে তা-ও জানি না।’’ ঘোড়ার রংবদলের খবর নেই প্রশাসনের কাছেও। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারী অবশ্য বলেন, ‘‘বিষয়টা জানা ছিল না। তবে এ ভাবে পশু নির্যাতন দণ্ডনীয় অপরাধ। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলছি।’’

Horse Digha Black Colour Horse Rider
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy