Advertisement
০৪ মে ২০২৪

এখনও কতটা মোহিত রায়গঞ্জ, পরীক্ষা দিতে হচ্ছে মোহিতকে

নানা স্তরে বার্তা মিললেও তৃণমূলে যাননি। কিন্তু রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের জীবন এখন তৃণমূলময়। দূরের বা কাছের, যে-ই হোক না, সুরে না মিললেই বলছেন, ‘‘তুমিও তৃণমূল হয়ে গিয়েছো!’’

জনসভা: মিরিকে পুরভোটের প্রচারে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

জনসভা: মিরিকে পুরভোটের প্রচারে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

কিশোর সাহা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ১৪:৩০
Share: Save:

নানা স্তরে বার্তা মিললেও তৃণমূলে যাননি। কিন্তু রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের জীবন এখন তৃণমূলময়। দূরের বা কাছের, যে-ই হোক না, সুরে না মিললেই বলছেন, ‘‘তুমিও তৃণমূল হয়ে গিয়েছো!’’

কেন এমন বলছেন ‘রায়গঞ্জের রাজা’? তাঁর পারিষদেরাই আড়ালে আবডালে বলছেন, মোহিতের সাজানো সংসার তো টলমল করছে শহরের ‘উদীয়মান তারকা’ অমল আচার্যের ধাক্কায় (দু’জনকে এই সব উপাধি দিয়েছেন শহরের মানুষই)। আর অমলের যুদ্ধকে সাংগঠনিক ভাবে গুছিয়ে দিতে এখানে এসে ঘাঁটি গেড়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের তরফে এই জেলার দায়িত্ব তাঁর। অনেকে বলছেন, তাঁর প্রধান সৈন্যসামন্তরা ঘাসফুলের পতাকা হাতে তুলে নেওয়ার পরে এখন সর্বত্রই তৃণমূলের ভূত দেখছেন মোহিত। তাই কখনও পুলিশ, কখনও প্রশাসনের কর্তা বা নির্বাচন কমিশনের আধিকারিক, কখনও আবার সাংবাদিকের কথা বা প্রশ্ন অপছন্দ হলেই ‘তৃণমূল-তৃণমূল’ বলে উঠছেন।

ভরসন্ধ্যায় হেঁটে ঘাম ঝরিয়ে ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে ঘুরছিলেন শুভেন্দু-অমল। সঙ্গের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। মোহিতের কথা শুনে নিঃশব্দ হাসি ফুটে উঠল তাঁদের মুখে। শুভেন্দু বললেন, ‘‘এখন রায়গঞ্জ আর ওঁদের (কংগ্রেস-সিপিএম) সঙ্গে নেই। সেই উপলব্ধি থেকেই ‘সবাই তৃণমূল’ বলতে বাধ্য হচ্ছেন।’’ অমল বলছিলেন, রায়গঞ্জ মানেই একসময়ে ছিল খুনোখুনি, তোলা আদায়, বোমা-গুলি। ‘‘গত ৬ বছরে সব ঠান্ডা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরপ্রশাসকের হাতে শহরের চেহারা বদলে গিয়েছে। তাই রায়গঞ্জবাসী এখন কর্পোরেশন হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।’’

এই কথা আবার উড়িয়ে দিচ্ছেন মোহিত। রায়গঞ্জের বিধায়ক তথা চার বারের পুর চেয়ারম্যান বলছেন, ‘‘ওরা তো সন্ত্রাসের রাজনীতি করছে। পুলিশ যদি বহিরাগত গুন্ডাদের আটকায়, যদি ভোটটা ঠিকঠাক হয়, তা হলে আমরাই বোর্ড গড়ব।’’ বাড়ির অদূরে একটি ক্লাবের মন্দিরে তখন পুজোর ঘণ্টা বাজছে। কথা বলতে বলতে সে দিকে তাকিয়ে কিছুটা আনমনা মোহিত। দলের এক সদস্য ফিসফিস করে বললেন, ‘‘সেই যে আত্মগোপন করার পরে ফিরে এলেন দাদা, তার পর থেকেই কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছেন।’’

কংগ্রেসের কেউ কেউ জানালেন, সিপিএম তো আছেই। ভোটের দিন ৮৫টি বুথের সামনে শিলিগুড়ির কায়দায় সমবেত পাহারা দিতে বিজেপিকেও ব্রাত্য মনে করছেন না তাঁরা। সেই নিয়ে কথাও চলছে। সম্প্রতি প্রচারে এসে নিজের তৈরি এই মডেলের কথা (যা ‘শিলিগুড়ি মডেল’ হিসেবেই পরিচিত উত্তরবঙ্গে) বলে গিয়েছেন অশোক ভট্টাচার্যও। বিজেপির জেলা সম্পাদক নির্মল দামেরও দাবি, তাঁরা এ বারে চোখে পড়ার মতো প্রভাব ফেলবেন।

তবু কোথাও যেন বেসুর রায়গঞ্জ, বুঝতে পারছে কংগ্রেস। কোথাও যেন ‘মোহিতে মোহিত নয়’। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন অমলরা। আর রায়গঞ্জের পরিবেশ যে অনেকটাই বদলে গিয়েছে, সেটা মানছেন গৃহবধূ থেকে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদের অনেকেই।

এখন একটাই প্রশ্ন, ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়বে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Municipality Election Mohit Sengupta congress TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE