Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Balagarh

ফের ভাঙছে গঙ্গার পার, বলাগড়ের গ্রামে আতঙ্ক

বলাগড়ে গঙ্গার ভাঙন রোধে পাকাপাকি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। এলাকাবাসী চান, কেন্দ্র ও রাজ্যের সমন্বয়ে ওই কাজ হোক।

গঙ্গার ভাঙন দেখাচ্ছে পড়ুয়ারা। বলাগড়ের চাঁদরা গ্রামে।

গঙ্গার ভাঙন দেখাচ্ছে পড়ুয়ারা। বলাগড়ের চাঁদরা গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।

বিশ্বজিৎ মণ্ডল
বলাগড় শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩৭
Share: Save:

গঙ্গাভাঙন অব্যাহত বলাগড়ে। বুধবার হুগলির এই ব্লকে শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতের চাঁদরা গ্রামে ১০০ ফুটের বেশি এলাকা জুড়ে গঙ্গার পার ভেঙেছে। কংক্রিটের ঘাট ভেঙে বসে গিয়েছে। গঙ্গা থেকে তুলে খেতে জল দেওয়ার জন্য পাম্প-ঘর বসে গিয়ে হেলে পড়েছে। ঘরটিতে ফাটলও ধরেছে। কয়েকটি বাড়ি গঙ্গার কার্যত কিনারে চলে এসেছে। ভাঙনের বহর দেখে আতঙ্কিত এলাকাবাসী।

মহকুমাশাসক (সদর) স্মিতা শুক্লা সান্যাল জানান, ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে।

বলাগড়ে গঙ্গার ভাঙন রোধে পাকাপাকি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। এলাকাবাসী চান, কেন্দ্র ও রাজ্যের সমন্বয়ে ওই কাজ হোক। কিন্তু দিনের পর দিন নানা প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কাজের কাজ হয়নি। এর মধ্যেই ফের এক লোকসভা নির্বাচন দোরগোড়ায়। দিন কয়েক আগেই এই ব্লকে প্রচারে এসে হুগলির তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি জিতলে লোকসভায় ভাঙন রোধের কথাই প্রথমে বলবেন। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনাও করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তাঁকে পাল্টা শুনিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।

চাঁদরা গ্রামের মানুষ জানান, বুধবার ভোর থেকে প্রবল ভাবে পার ভাঙতে থাকে। পাকা ঘাট-সহ সেচের ঘর বসে যায়। প্রায় ৪০০ বিঘা কৃষিজমিতে জল দেওয়া হয় নদী-সেচ ব্যবস্থার (আরএলআই পাম্প) মাধ্যমে। ঘরটি নদীগর্ভে চলে যেতে বসায় সেখান থেকে যন্ত্র বের করে নেন চাষিরা। পরে সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন। পাম্প-ঘর অন্যত্র সরানোর আশ্বাস দেন তাঁরা।

নির্মলা বারিক নামে এক বৃদ্ধার কথায়, ‘‘এক সময় গঙ্গা আমাদের বাড়ি থেকে দু’শো-তিনশো মিটার দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে এখন পঞ্চাশ মিটারে এসে ঠেকেছে। রাতে ঘুম উবে গিয়েছে। এই বুঝি বাড়ি চলে গেল গঙ্গায়! ছেলে টোটো চালিয়ে সংসার চালায়। আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে অন্যত্র জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করা অসম্ভব। তাই প্রশাসনের কাছে আর্জি, দ্রুত ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করুক।’’

এলাকাবাসী জানান, যেখানে এখন পার ভাঙছে, সেখানে আগে ঘরদোর ছিল। ভাঙনের আশঙ্কায় সেই সব পরিবার অন্যত্র চলে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা কাজিয়ায় ব্যস্ত থাকেন। সমস্যা সমাধানে তৎপরতা দেখা যায় না!

রাজনৈতিক দলের তাল ঠোকাঠুকি অব্যাহত। এ দিন লকেট বলেন, ‘‘গঙ্গাভাঙনের বিষয়টি আমি অনেকবার লোকসভায় তুলেছি। কিন্তু সেটা নিয়ে তৃণমূল কথা বলতে দিত না। কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে টাকা দিয়েছে। সেই টাকা ফেরত চলে যায়। কারণ, তারা দেখাবে যে কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করেনি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কী ভাবে গঙ্গাভাঙন রোখা যায়, আগামী দিনে আমরা দেখব। কেন্দ্রের দেওয়া টাকা রাজ্য সরকার কী করেছে, কোথায় নয়ছয় করেছে তার তদন্ত হবে।’’

লকেটের মন্তব্য প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্প বিশ বাঁও জলে। অনেক প্রকল্পই ওরা ঘোষণা করে। বাস্তবে হয় না। লকেট মিথ্যা বলছেন।’’ শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতের প্রধান তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গঙ্গাভাঙনে রোধে কেন্দ্র টাকা দিয়েছে এবং খরচ করতে না পারায় তা ফেরত গিয়েছে, এমন নথিপত্র
বের করে দেখান সাংসদ! শুনলাম, তিনি চাঁদরা গ্রামে আসবেন! কোথায় তিনি? এখানে এলে ঘিরে ধরবেন এলাকার মানুষ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Balagarh River Bank River Ganges
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE