E-Paper

‘বম্ব’ থেকে বোমা আনেন ব্রহ্মবান্ধব

ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান অস্ত্র যে বোমা, সেই শব্দটির সঙ্গে বাঙালির প্রথম পরিচয় করিয়েছিলেন হুগলি জেলার খন্যানে ১৮৬১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জন্মানো স্বাধীনতা সংগ্রামী, বাগ্মী ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৭
Brahmabandhav Upadhyay

ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়।  —ফাইল চিত্র।

দিনটা ৬ মে, ১৯০৭। প্রকাশিত হল ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সন্ধ্যা’ পত্রিকা। সেখানে যথারীতি মজাচ্ছলে পরাধীন বাঙালির বুকে তিনি আগুন জ্বাললেন কলমের খোঁচায়। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্রহ্মবান্ধব লিখলেন, ‘বাঙালি বোমা তৈরি করে ফেলেছে। মা কালীর বোমা। ফিরিঙ্গি মারার জন্য এই বোমা সব্বাই যেন ঘরে ঘরে সংগ্রহ করে’।

তখন ইংরেজিতে ‘বম্ব’ শব্দটি ছিল। কিন্তু বাংলা অভিধানে ‘বোমা’ ছিল না। পত্রিকায় সেই শব্দের আমদানি করলেন ব্রহ্মবান্ধব। ব্যস। সারা বাংলায় হই হই কাণ্ড। কেউই প্রায় বুঝতে পারছেন না, বোমা জিনিসটা কী! এক চপের দোকানি লঙ্কা আর বেসন দিয়ে অন্য রকম চপ ভাজা শুরু করলেন। গোলাকৃতি সেই চপের নাম হল ‘বোমা’।

তত দিনে রসায়নের ছাত্র বিভূতি চক্রবর্তী বোমা তৈরি ফেলেছেন গোপনে। যুগান্তর অফিসের ভিতরে বোমা বাঁধা শুরু হয়েছে। বোমা বানাতে বিপ্লবীদের একশো টাকা দিয়েছিলেন ভবানীপুরের যোগেশচন্দ্র ঘোষ। বোমা নিয়ে হেমচন্দ্র ঘোষ, বারীন্দ্রকুমার ঘোষরা ফুলার সাহেবকে মারতে পিছু নিয়ে ব্যর্থ হলেন।

ব্রহ্মবান্ধবের লেখার পরে পরেই বোমা বাঁধার কাজে উল্লাসকর দত্ত, নগেন্দ্রনাথ ঘোষ, চন্দননগরের মণীন্দ্রনাথ নায়েকরা এগিয়ে এলেন। ডাক-পিয়োনের পোশাকে কিংসফোর্ডকে বই-বোমা দিতে গেলেন পরেশ মল্লিক। তবে, পার্সেলে আসা বইটি খুলেও দেখেননি সাহেব। হেমচন্দ্রের বানানো বোমার একটি ব্যবহার করা হয়েছিল চন্দননগরের মেয়র মঁসিয়ে তার্দিলকে মারতে। অন্যটি নিয়ে মজফ্‌ফরপুরে সাহেব মারতে গিয়ে ধরা পড়লেন ক্ষুদিরাম। মেরে ফেলা হল প্রফুল্ল চাকিকে। মুরারীপুকুরের বাড়ি তল্লাশিতে অরবিন্দ ঘোষ-সহ অনেক বিপ্লবী গ্রেফতার হলেন বোমা মামলায়। দীর্ঘ স্বাধীনতা যুদ্ধে বোমা হয়ে উঠল বিপ্লবীদের পরম অস্ত্র। যা কাঁপুনি ধরিয়েছিল ব্রিটিশদের।

ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান অস্ত্র যে বোমা, সেই শব্দটির সঙ্গে বাঙালির প্রথম পরিচয় করিয়েছিলেন হুগলি জেলার খন্যানে ১৮৬১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জন্মানো স্বাধীনতা সংগ্রামী, বাগ্মী ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়। নিঃশব্দে পেরিয়ে গেল তাঁর আরও এক জন্মদিন। জন্মস্থানে আগাছার আড়ালেই রইল তাঁর নামফলক।

(তথ্য: পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bombs Bengali Language

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy