ঘরে ঢুকেছে জল। ত্রিপল টাঙিয়ে ছাদে বসবাস। উদয়নারাণপুরে। নিজস্ব চিত্র।
জল কমছে উদয়নারায়ণপুরে। আমতা-২ ব্লকেও যতটা এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল, শনিবার বিকেল পর্যন্ত তা হয়নি। পরিস্থিতি দেখে হাওড়া জেলা প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত বড় বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে। তবে, এ দিন বিকেলে ঘরের দালানে খেলতে গিয়ে বন্যার জলে তলিয়ে গিয়ে ঋদ্ধি ধাড়া (৩) নামে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে উদয়নারায়ণপুরের শিবপুরে। পরে তার দেহটি মেলে।
ডিভিসি যেখানে ১ লক্ষ কিউসেকের বেশি পরিমাণ জল ছাড়লে এই দুই ব্লকে বন্যা হয়, সেখানে গত বৃহস্পতিবার জল ছাড়া হয়েছিল ২ লক্ষ ৩১ হাজার কিউসেক। এত বেশি জল ছাড়ার ফলেই প্রমাদ গোনে জেলা প্রশাসন।
তা হলে কোন ম্যাজিকে বিপর্যয় এড়ানো গেল?
জেলা প্রশাসন-সহ বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, হাওড়ায় এসে পৌঁছনোর আগেই ডিভিসির জল বিভিন্ন জায়গায় দামোদরের বাঁধ ভেঙে হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা ভাসিয়েছে। ফলে, বিপর্যয়ের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে হাওড়া। তা ছাড়া, দু’মাস আগে যখন বন্যা হয়, তখন টানা বৃষ্টিতে দামোদর ও রূপনারায়ণ নদ ভরা ছিল। ফলে, তখন মাত্র ১ লক্ষ ৫৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়াতেই ভেসে যায় উদয়নারায়ণপুরের ১১টির মধ্যে ১০টি এবং আমতা-২ ব্লকের ১৪টি পঞ্চায়েতই। এ বারে দুই নদেই জল তুলনায় কম ছিল।
এ বারে উদয়নারায়ণপুরের ৯টি এবং আমতা-২ ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়েছে। উদয়নারায়ণপুরে খোলা হয়েছে ৯৮টি ত্রাণ শিবির। সেখানে ঠাঁই নিয়েছেন ১৬ হাজার দুর্গত। আমতা ২ ব্লকে ১০টি ত্রাণ শিবিরে আছেন প্রায় ৮ হাজার মানুষ। শনিবার বিকেল থেকে উদয়নারায়ণপুরে জল কমতে শুরু করলেও আমতা-উদয়নারায়ণপুর রাজ্য সড়ক এখনও জলমগ্ন। উদ্ধারকাজে সেনা এ দিনও কাজ করেছে। উদয়নারায়ণপুর ব্লক অফিস খিলাতে স্থানান্তরিত করা হলেও গুরুত্বপূর্ণ সব নথি সংরক্ষিত আছে বলে জানান জেলাশাসক মুক্তা আর্য। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেমনটি আশঙ্কা করেছিলাম, তেমনটি ঘটেনি। মাত্র দু’মাস আগে দু’টি ব্লকে বন্যার প্রকোপ যেমন ছিল, এ বারের প্রকোপ তার চেয়ে কম।’’
সেচ দফতর সূত্রের খবর, উদয়নারায়ণপুরের জলই নেমে এসে এ দিন আমতা-২ ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েত এলাকাকে ভাসিয়েছে। বিকেলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী পুলক রায় উদয়নারায়ণপুরে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখেন। হাওড়া এবং হুগলি জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে ত্রাণ এবং উদ্ধার কাজের তদারকি করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকেই দায়িত্ব দিয়েছেন। আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘উদয়নারায়ণপুর থেকে জল নেমে আসায় আরও কিছু এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা। দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
বন্যায় চাষের ভাল রকম ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। জেলা পরিষদের কৃষি সংক্রান্ত কর্মাধ্যক্ষ রমেশ পাল বলেন, ‘‘অগস্টের প্রথম সপ্তাহের বন্যার ধাক্কা সামলে চাষিরা ফের ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। তাতে জোর ফলন হয়েছিল। বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
তথ্য সহায়তা: সুব্রত জানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy