Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
COVID-19

পুত্রশোক বুকে চেপেই ফের কোভিড-যুদ্ধে পাপ্পু

গত বছর করোনার অনুপ্রবেশের পর থেকেই শ্রীরামপুর শহর জুড়ে তাঁর উপস্থিতি দেখেছে জনতা। করোনার দ্বিতীয় পর্যায়েও থামছেন না।

করোনা মোকাবিলায় পথে পাপ্পুু।

করোনা মোকাবিলায় পথে পাপ্পুু।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২১ ০৫:২৬
Share: Save:

তিনি জুতো সেলাইতে আছেন, আবার চণ্ডীপাঠেও!

গত বছর করোনার অনুপ্রবেশের পর থেকেই শ্রীরামপুর শহর জুড়ে তাঁর উপস্থিতি দেখেছে জনতা। করোনার দ্বিতীয় পর্যায়েও থামছেন না। একাধারে পুর-প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সামলাচ্ছেন। পাশাপাশি, করোনা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি থেকে মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা— সবেতেই তৎপর শ্রীরামপুরের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য সন্তোষ সিংহ ওরফে পাপ্পু।

অথচ, এমনটা না হতেও পারত। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্কুলে যাওয়ার পরে পোলবায় নয়ানজুলিতে পুলকার উল্টে মারা যায় তাঁর সাত ৭ বছরের ছেলে ঋষভ। সে দিন টিভির পর্দায় শোকে মুহ্যমান এক পিতার ছবি দেখেছিল বাংলার মানুষ। তার মাস খানেকের মধ্যেই পুত্রশোক বুকে চেপে করোনা মোকাবিলায় নেমে পড়েন পাপ্পু। সেই লড়াইতে এ বারও সামনের সারিতে ওই তৃণমূল নেতা।

সকাল থেকে এলাকার নানা সমস্যা নিয়ে পাপ্পুর কাছে মানুষ আসেন। তাঁদের কথা শোনেন। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। নর্দমা সাফাই, ঝাঁট দেওয়া প্রভৃতি কাজের তদারকি করেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে। পুরসভা পরিচালনার ক্ষেত্রেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সেই সব ‘রুটিন’ কাজের সঙ্গেই যোগ হয়েছে করোনার কাজ। প্রথম পর্যায়ে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে সম্ভাব্য কোভিড রোগীদের দেখভালের জন্য ওয়ার্ড-বয় জোগাড় করে দেওয়া, লকডাউনে আর্ত মানুষের খাবার বন্দোবস্ত করা থেকে এই কাজের শুরু। সেই কাজ চলছেই। কার অক্সিজেন লাগবে, খবর পেয়ে পাপ্পু তা জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। সংক্রমিতের বাড়িতে খাবার পৌঁছয়নি, পাপ্পু মুশকিল আসান। সংক্রমিতের বাড়ি স্যানিটাইজ় করতে পাপ্পু হাজির। করোনায় কোনও মৃতের দেহ বাড়িতে পড়ে রয়েছে, ডোমদের নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন পাপ্পু। দেহ সৎকারের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ। তাতেও পাপ্পু আছেন। দু’-একটি ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন পর্যন্ত।

বৃহস্পতিবারেই যেমন শ্রীরামপুরের জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ী রোডের এক বালিকার অক্সিজেনের দরকার ছিল। বাড়ির লোক চেষ্টা করেও জোগাড় করতে পারেননি। পাপ্পুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। পাপ্পু দ্রুত একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ওই বাড়িতে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন।

গত পয়লা মে থেকে পাপ্পুর উদ্যোগেই ‘সবুজ সৈনিক’ নাম নিয়ে কিছু যুবক রাস্তায় নেমেছেন। অসুস্থকে পরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার জন্য টোটো পরিষেবা, অ্যাম্বুল্যান্স, শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করছেন তাঁরা। বাড়ি বয়ে পৌঁছে দিয়ে আসা হচ্ছে খাবার। সবটাই অপেক্ষাকৃত কম খরচে। নিম্নবিত্তদের থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে না। সংক্রমিতের বাড়িতে ওষুধ বা অক্সিজেনও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সকাল থেকে রাতবিরেতেও ছুটছে তাঁদের মোটরবাইক। বহু ক্ষেত্রেই সন্তোষ নিজে থাকছেন তাঁদের সঙ্গে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে অনলাইনে পরামর্শের ব্যবস্থা করার পরিষেবাও মিলছে ‘সবুজ সৈনিক’-
এর কাছে।

সন্তোষ বলেন, ‘‘আপদে-বিপদে মানুষের পাশে থাকার জন্য রাজনীতিতে নেমেছি। সেই জন্য ব্যক্তিগত বিপর্যয় বুকে চেপেই করোনা মোকাবিলার কাজে নেমে পড়ি। গত বছর করোনা-ভীতি মানুষের মনে জাঁকিয়ে বসেছিল। সেই ভয় ভাঙানো ছিল প্রথম কাজ। এ বারের ঢেউ আরও তীব্র। আমরা কিন্তু রাস্তাতেই থাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona COVID-19 coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE