E-Paper

‘রেমাল’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি তুঙ্গে হুগলিতে

পুর-পারিষদ (স্বাস্থ্য) জয়দেব অধিকারী জানান, ঝড় মোকাবিলায় পুরসভাকে সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৪ ০৮:৩০
ঝিঙে গাছের মাচা মজবুত করছেন চাষি। গোঘাটে। নিজস্ব চিত্র

ঝিঙে গাছের মাচা মজবুত করছেন চাষি। গোঘাটে। নিজস্ব চিত্র

বঙ্গোপসাগরে তৈরি ঘূর্ণাবর্ত শুক্রবার নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ, শনিবার সকালের মধ্যে তা ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঝড়ের নাম রাখা হয়েছে ‘রেমাল’। সেই ঘূর্ণিঝড় পরে আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে রবিবার মধ্যরাত নাগাদ আছড়ে পড়তে পারে স্থলভাগে।

দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে শনিবার থেকেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার, ঝড় মোকাবিলায় গঙ্গাপারের হুগলির পুরসভাগুলির পরিকাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেন সুডা (স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি)-র প্রতিনিধিরা। এ দিন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে হুগলি-চুঁচুড়া পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা।

পুর-পারিষদ (স্বাস্থ্য) জয়দেব অধিকারী জানান, ঝড় মোকাবিলায় পুরসভাকে সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হুগলি-চুঁচুড়ার পুরপ্রধান অমিত রায় জানান, গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হবে। ঝড়ের সময় সকলকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। চাঁপদানির পুরপ্রধান সুরেশ মিশ্র জানান, জলের ওভারহেড ট্যাঙ্কগুলি ভর্তি রাখা হচ্ছে। গাছ কাটার যন্ত্রপাতিতে শান দিয়ে রাখা হচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) তরুণ ভট্টাচার্য বলেন, “ব্লক থেকে জেলা—সমস্ত স্তরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্বাস্থ্য, কৃষি, পূর্ত, বিদ্যুৎ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গে বৈঠক করে বিপর্যয় মোকাবিলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দুর্গতদের নিরাপদে রাখতে ‘সেফ হাউস’-এর যদি প্রয়োজন হয়, তাও প্রস্তুত
রাখা হচ্ছে।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮টি ব্লকের ২০৭টি পঞ্চায়েত এবং ১৩টি পুরসভার মাটির বাড়িগুলো চিহ্নিত করা চলছে। প্রয়োজনে পরিবারগুলিকে নিরাপদ রাখতে পাশাপাশি একাধিক স্কুলবাড়িকে প্রস্তুত করে রাখা হচ্ছে। সর্বত্রই তৈরি রাখা হয়েছে সিভিল ডিফেন্স ইউনিট। মহকুমা এবং ব্লক প্রশাসনগুলির তরফে প্রস্তুত রাখা হয়েছে উদ্ধারকারী গাড়ি। পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসনগুলিতে ত্রিপল-সহ নানা ত্রাণ সামগ্রী মজুত রাখা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অন্তঃসত্ত্বাদের চিহ্নিত করা রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে অতিরিক্ত অক্সিজেন, জীবনদায়ী ওষুধ মজুত রাখা হচ্ছে। বিদ্যুতের স্তম্ভ ভাঙলে বা তার ছিঁড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে সেই পরিষেবা যাতে দ্রুত স্বাভাবিক করা যায়, তা নিয়ে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওন্যাল ম্যানেজার কিঙ্কর সিংহ।

জেলার ফেরিঘাটগুলি আজ, শনিবার থেকে তিন দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে মাইক প্রচারও চলছে।

জেলায় বোরো ধান প্রায় সবটা উঠে গেলেও জমিতে রয়েছে বাদাম, তিল আর আছে আনাজ। রেমাল-এর প্রভাব কতটা চাষে পড়বে তা নিয়ে শঙ্কায় চাষিরাও। কৃষি এবং উদ্যানপালন দফতর থেকে মাঠের বোরো ধান তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বাদাম, তিল, ইত্যাদি ফসলের জমিতে পর্যাপ্ত জল নিকাশির ব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে। পেঁপে, কলা জাতীয় নরম গাছ রক্ষায় ঠেকনা, দুর্ঘটনা এড়াতে বড় ফল গাছের ডালপালা ছেঁটে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) মৃত্যুঞ্জয় মুর্দ্রান্য বলেন, “বোরো ধান ৯৯ শতাংশই উঠে গিয়েছে। বাকি ধান দ্রুত তুলে নিতে বলা হয়েছে। বজ্রপাত নিয়ে বিশেষ সতর্ক করা হচ্ছে।” জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, দুর্যোগের প্রতিটি পদক্ষেপ জানতে, চাষিদের জানাতে এবং মোকাবিলা করতে একটি ‘রেসপন্স টিম’ গঠন করে ‘দামিনী’ নামে একটি আ্যাপের সাহায্য নিতে বলা হয়েছে। রেসপন্স টিমে দফতরের আধিকারিক-কর্মীরা ছাড়াও কৃষক এবং কৃষি উৎপাদক
সংস্থাগুলি থাকছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cyclone Remal Cyclone

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy