Advertisement
২০ মে ২০২৪
উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় দুই জেলার ১৪
Higher Secondary Exam 2024

তাক লাগাল দুই যমজ বোন

বুধবার, টিভিতে মেধা-তালিকা ঘোষণা হতেই দুই বোন পরস্পরকে জরিয়ে ধরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। দু'জনেই অর্থনীতি নিয়ে উচ্চশিক্ষা করতে চায়।

মায়ের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে চতুর্থ স্থানাধিকারী স্নেহা ঘোষ এবং তার বোন দশম স্থানাধিকারী সোহা।

মায়ের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে চতুর্থ স্থানাধিকারী স্নেহা ঘোষ এবং তার বোন দশম স্থানাধিকারী সোহা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৪ ০৮:১৩
Share: Save:

তাদের বয়সের ফারাক মাত্র এক মিনিটের। দু'জনেই মেধাবী। শখ-আহ্লাদ, পছন্দ-অপছন্দ সবই সমান। উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকাতেও স্থান করে নিল চন্দননগরের দুই যমজ বোন। ৪৯৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যে চতুর্থ শহরের কুন্ডুঘাটের বাসিন্দা স্নেহা ঘোষ। মেয়েদের মধ্যে সে যুগ্ম ভাবে প্রথম। তার বোন সোহা ৪৮৭ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে।

ওই দুই বোনকে নিয়ে এ বার মেধা তালিকায় রাজ্যের ১৫টি জেলার মোট ৫৮ জনের মধ্যে হুগলিরই ১৩ জন। হাওড়ার রয়েছে একজন।

সোহা ও স্নেহা— দু’জনেই কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষামন্দিরের ছাত্রী। তাদের বাবা সঞ্জীব একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তিনি এ দিন দুপুরে বাড়িতে ছিলেন না। ভিডিয়ো-কলে তিনি মেয়েদের শুভেচ্ছা জানান। উচ্চ মাধ্যমিকে সাফল্যের খবর শুনে পড়শিরা ভিড় জমান ওই বাড়িতে। আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি অঙ্ক, ভূগোল, অর্থনীতি ও কম্পিউটার— দু'জনের বিষয়গুলিও ছিল এক। সোহা-স্নেহা একইসঙ্গে জানায়, তারা পড়াশোনার পাশাপাশি সব কাজই একসঙ্গে করতে ভালবাসে। দাবা খেলা এবং সিনেমা দেখা তাদের খুবই পছন্দের। সময় পেলেই রাতে মায়ের পাশে বসে সিনেমা দেখে দুই বোন। তারা জানায়, ঘরে পড়াশোনার নির্দিষ্ট কোনও সময় ছিল না। যখন ভাল লাগত, তখনই বই নিয়ে বসে যেত দু'জনে। মাধ্যমিকে ভাল ফল করলেও মেধা তালিকায় জায়গা হয়নি কারও। তবে, সে বারেও সোহার থেকে কিছুটা এগিয়ে ছিল স্নেহা। এ বারেও একেবারে মেধা-তালিকায় দু'জনেই জায়গা করে নেবে, তা ভাবেনি তারা।

বুধবার, টিভিতে মেধা-তালিকা ঘোষণা হতেই দুই বোন পরস্পরকে জরিয়ে ধরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। দু'জনেই অর্থনীতি নিয়ে উচ্চশিক্ষা করতে চায়। তাদের মা অপর্ণা জানান, দুই মেয়েই পড়াশোনায় ভাল। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে স্নেহা খানিক বেশি নম্বর পেলেও স্কুলের পরীক্ষায় সোহাও কয়েকবার স্নেহাকে টপকে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘সব কিছুতে ওদের মিল। ওদের ইচ্ছা পূরণ হোক।’’

কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা রূপা ঘোষ জানান, দুই বোনের পাশাপাশি তাঁদের স্কুলের আর এক ছাত্রী, চন্দননগর লালবাগানের বাসিন্দা সৃজনী ঘোষও দশম স্থান অধিকার করে মেধা-তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তিনি বলেন, "প্রত্যেক ছাত্রীর অভিভাবকদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষিকাদের প্রচেষ্টাতেই এটা সম্ভব হয়েছে।’’

শ্রীরামপুরের মাহেশ শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম বিদ্যালয়ের (উচ্চ মাধ্যমিক) রুদ্র দত্ত ও অস্মিতকুমার মুখোপাধ্যায় যথাক্রমে ষষ্ঠ ও অষ্টম স্থান দখল করে নিয়েছে। রুদ্রর বাড়ি কোন্নগর। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯১। রুদ্র চিকিৎসক হতে চায়। তার সাফল্যের পিছনে বাবা-মায়ের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে বলে জানায় রুদ্র। অন্যদিকে, অস্মিত ৪৮৯ নম্বর নিয়ে অষ্টম স্থান দখল করেছে। সে পরিসংখ্যান নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর রায় জানান, স্কুলের ক্লাসের বিকল্প কিছু নেই। এই বিদ্যালয়ে এটা নিয়মিত মানা হয়। যার জেরে এই ফলাফল। আর এক শিক্ষক জানান, দুই ছাত্রই খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ। তাদের প্রতি বিদ্যালয়ের ভাল ফলের প্রত্যাশা ছিল।

চণ্ডীতলার বেগমপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী বৃষ্টি দত্তও দশম হয়েছে। বৃষ্টির বাবা সুশান্ত সামান্য দড়ি শ্রমিক। মা পম্পা গৃহবধূ। অনটনের মধ্যে বড় হওয়া বৃষ্টি ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হতে চায়।

৪৯১ নম্বর পেয়ে হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র অভ্রকিশোর ভট্টাচার্য ষষ্ঠ স্থান দখল করেছে। অভ্রের বাড়ি চুঁচুড়ার বুনোকালীতলায়। আরামবাগ হাই স্কুলের ছাত্র তথা চাঁদুরের বাসিন্দা মহম্মদ সাহিদ এবং চুঁচুড়া সুজন বাগানের বাসিন্দা, হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ঋতব্রত দাস ৪৯০ পেয়ে যৌথ ভাবে সপ্তম হয়েছে। চন্দননগর বঙ্গবিদ্যালয় এবং চুঁচুড়া বালিকা বাণীমন্দিরের দুই ছাত্রী যথাক্রমে পৃথা দত্ত ও বৃষ্টি পাল ৪৮৮ নম্বর পেয়ে যুগ্ম ভাবে নবম হয়েছে।

আন্দুলের মৌড়ির বাসিন্দা তথা সাঁকরাইল অভয়চরণ হাই স্কুলের ছাত্রী সুকৃতি মণ্ডল মেধা তালিকায় দশম স্থানে থাকা হাওড়ার একমাত্র ছাত্রী। বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করা সুকৃতি ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করতে চায়। সুকৃতির বাবা, হাওড়া জেলা আয়ুষ স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবিনয় মণ্ডল। মেয়ের সাফল্যে তাঁরা খুশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary Exam 2024 Chandannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE