E-Paper

দুর্যোগের জেরে আলুবীজের দাম দ্বিগুণ, বাড়ল চাহিদাও

চাষিদের অনেকেই জানিয়েছেন, চলতি মরসুমে দু’টি আলুবীজেরই দাম মাঝে বেড়ে গিয়েছিল। প্রথমত, অনেক জমিতে ধান চাষ এ বার বিলম্বিত হয়েছে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:০৪
আলুবীজ কেনার লাইন। শুক্রবার সকালে। গোঘাটের কামারপুকুর চটিতে।

আলুবীজ কেনার লাইন। শুক্রবার সকালে। গোঘাটের কামারপুকুর চটিতে। নিজস্ব চিত্র।

পঞ্জাব থেকে আসা জ্যোতি এবং হিমালিনি আলুবীজের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১৪০০ টাকায় নেমে গিয়েছিল। মিগজাউমের জেরে দু’দিনের বৃষ্টিতে তা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার হুগলির তারকেশ্বর, সিঙ্গুর, চাঁপাডাঙা প্রভৃতি জায়গায় বাজারে হিমালিনি আলুবীজের দাম বস্তাপ্রতি ৩২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তাতেও চাষিরা প্রয়োজন মতো বীজ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।

রাজ্যের অন্যতম আলু উৎপাদক জেলা হুগলি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আলু চাষের খরচ বাড়বে বলেই মনে করছেন অধিকাংশ চাষি। এই আলু যখন মাঠ থেকে উঠবে, তখন দামও বাড়বে বলে অনেকের আশঙ্কা।

কেন এই পরিস্থিতি?

চাষিদের অনেকেই জানিয়েছেন, চলতি মরসুমে দু’টি আলুবীজেরই দাম মাঝে বেড়ে গিয়েছিল। প্রথমত, অনেক জমিতে ধান চাষ এ বার বিলম্বিত হয়েছে। সেই সব জমি থেকে ধান না ওঠায় চাষিদের একাংশ স্থির করেছিলেন, আলুবীজ কিছু দিন পরে কিনবেন। তাতে আখেরে কিছুটা সস্তায় আলুবীজ কেনা যাবে। কিন্তু বিধি বাম। অকাল বৃষ্টি পুরো পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। তাঁরা দ্রুত আলুবীজ কিনতে চাইছেন। দ্বিতীয়ত, ইতিমধ্যেই যাঁরা জমিতে আলু বসিয়েছেন তাঁরা নিশ্চিত, দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে জমিতে যে পরিমাণ জল দাঁড়িয়েছে, অবধারিত ভাবেই তাঁদের চাষ জলে যাবে। ফলে, ফের আলুবীজ বসাতে হবে। সেই কারণে তাঁরা দ্বিতীয় বার আলুবীজ সংগ্রহ করতে নেমে পড়েছেন।

সব মিলিয়ে দুর্যোগের প্রভাবে হঠাৎ করে আলুবীজের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় জোগান কম। সেই কারণেই আলুবীজের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। এই সুযোগে এক শ্রেণির আলুবীজ ব্যবসায়ী চাষিদের ঠকাতে ময়দানে নেমে পড়েছেন বলে অভিযোগ। চাষিদের ক্ষোভ, ওই সব অসাধু ব্যবসায়ী কোনও ব্রান্ডের ধার ধারছেন না। যেমন খুশি দাম হাঁকছেন। এ দিন হুগলির বিভিন্ন বাজারে জ্যোতি আলুর বীজ বস্তাপ্রতি ২৮০০ থেকে ৩২০০ টাকায় বিকিয়েছে। একবস্তা হিমালিনি আলুবীজ ৩৪০০ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সকালে গোঘাটের কামারপুকুরে আলুবীজের একটি দোকানে চাষিদের বিক্ষোভও হয়। স্থানীয় হরিসভা থেকে আসা চাষি শ্রীকান্ত রায়ের অভিযোগ, “দু’দিন আগেও ৫০ কেজির বস্তাপিছু ১২০০-১৫০০ টাকায় আলুবীজ মিলেছে। এ দিন ২৬০০ টাকা দর
হাঁকা হয়েছে।’’

জেলার কৃষিকর্তাদের দাবি, আলুবীজের দাম নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু তাঁরা মানছেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে কোনও কোনও ব্যবসায়ী বর্তমানে বিচ্ছিন্ন ভাবে পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন হয়তো।

ধনেখালির চাষি কাশীনাথ পাত্রের জমির আলু বৃষ্টির জলে ডুবে গিয়েছে। এই অবস্থায় তিনি মনে করছেন, দ্বিতীয় বার আলু চাষ করা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু সমস্যা আলুবীজ নিয়ে। কারণ, আলুবীজ কার্যত বাজারে বাড়ন্ত। হুগলির পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো আলু উৎপাদনের দিক থেকে
গুরুত্বপূর্ণ জেলাতেও একই পরিস্থিতি বলে জানা গিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chinsurah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy